বরাবর যাতে বাধা দেওয়া হয়েছে, তা-ই করেছেন তিনি। পালিয়ে বিয়ে থেকে অপরাধ জগতে প্রবেশ, খুনে সাহায্য। দুঁদে গ্যাংস্টারের প্রেমে পড়ে একত্রবাস। এনকাউন্টারে সেই গ্যাংস্টারের মৃত্যু হলে অন্য এক গ্যাংস্টারকে বিয়ে করেন ‘লেডি ডন’ অনুরাধা চৌধরি। কে এই ‘লেডি ডন’? কী তাঁর পরিচয়?
২০২২ সালের মাঝামাঝি সন্ত্রাসবাদী আর গ্যাংস্টারদের যোগসাজশ খুঁজতে সারা উত্তর ভারতে অভিযানে নামে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। প্রায় ৫০টি জায়গায় তল্লাশি চালায় তারা। তখনই এক গ্যাংস্টারের বাড়ি থেকে আটক করা হয় অনুরাধাকে। তার আগে দীর্ঘ দিন তাঁর খোঁজ মেলেনি।
অনুরাধাকে জেরা করে এনআইএ। তার আগে ২০২১ সালেও এক বার গ্রেফতার হয়েছিলেন অনুরাধা। জুলাই মাসে তাঁকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের বিশেষ শাখা। তখনই জানা যায়, গ্যাংস্টার সন্দীপ ওরফে কালা জাঠেরিকে বিয়ে করেছেন অনুরাধা। এই অনুরাধা গ্যাংস্টার আনন্দপালের প্রাক্তন বান্ধবী।
আনন্দপালের হাত ধরেই অপরাধ জগতের ‘রানি’ হয়ে উঠেছিলেন অনুরাধা। যদিও ওই জগতে প্রবেশ তার আগেই।
রাজস্থানের শিকার জেলার ফতেপুরের কাছে আলফাসার গ্রামে জন্ম অনুরাধার। ছোটবেলাতেই মা মারা গিয়েছিলেন। বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরে। মেয়েকে খুব ভালবাসতেন। পড়াশোনা করিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে চাইতেন।
ছোট থেকে পড়াশোনায় খুব ভাল ছিলেন অনুরাধা। বিবিএ করার পর চামাডিয়া কলেজ থেকে এমবিএ করেন তিনি।
কলেজে পড়ার সময় দীপক মিঞ্জ নামে এক ব্যক্তির প্রেমে পড়েন অনুরাধা। তাঁর পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। পরিবারের অমতে দীপককে বিয়ে করেন অনুরাধা।
বিয়ের পর স্টক মার্কেটের মাধ্যমে টাকা রোজগার করতেন অনুরাধা এবং দীপক। মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করতেন। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে তছরুপের অভিযোগ ওঠে। বহু মানুষ টাকা চেয়ে অনুরাধাকে হুমকি দিতে থাকেন।
অনুরাধা দাবি করেন, তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ সাহায্য করেনি। এ দিকে লক্ষ টাকার দেনা। এই সময়ে বলবীর বানুদার মাধ্যমে আনন্দপালের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর।
বলবীর ছিলেন আনন্দপালের সঙ্গী তথা বন্ধু। সে সময় অনুরাধাকে সাহায্য করেছিলেন আনন্দপাল। তাঁর কাছে হুমকি আসা বন্ধ হয়। গ্যাংস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ মানতে পারেননি অনুরাধার স্বামী দীপক। তিনি স্ত্রীকে ছেড়ে চলে যান।
তখনও পাশে ছিলেন আনন্দপাল। সে সময়ই তাঁর প্রেমে পড়ে যান অনুরাধা। একত্রবাস শুরু করেন দু’জন। সেই সঙ্গে অনুরাধা পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন অপরাধ জগতে।
এর পর একে একে খুন, অপহরণ, তোলা আদায়ের মামলায় নাম জড়াতে থাকে অনুরাধার। পুলিশের খাতায় নাম ওঠে। আনন্দপালের সঙ্গেই তাঁর গ্যাং সামলাতেন অনুরাধা।
২০১৭ সালে পুলিশের হাতে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় আনন্দপালের। তার পর অনুরাধা চলে যান দিল্লি। সেখানে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে তাঁর।
দু’বছর আগে, ২০২১ সালে রাজস্থানের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে অনুরাধাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে খুঁজে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। গ্রেফতারির পরেই জানা গিয়েছিল অনুরাধার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে গ্যাংস্টার কালা জাঠেরির। তিনি হরিয়ানার কুখ্যাত ডন।
অনুরাধা দাবি করেন, আনন্দপালের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। তিনি তাঁর ব্যবসায়ে অংশীদার ছিলেন। সংবাদমাধ্যম ভুল ভাবে তাঁদের সম্পর্ককে তুলে ধরেছে। যদিও অপরাধ জগতে প্রচার হয়েছিল, আনন্দপালের মৃত্যুর পর তাঁর গ্যাং সামলেছিলেন অনুরাধাই।
একের পর এক ‘হাই প্রোফাইল’ অপহরণ, তোলা আদায়, বেআইনি ভাবে জমি দখল, মাদক চোরাচালানে নাম জড়িয়েছে অনুরাধার। লরেন্স বিষ্ণোই, কালা রানার মতো গ্যাংস্টারদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাঁর। বলা হয়, বিরোধী গ্যাংয়ের সদস্যদের খুন করার ছক তিনিই কষে থাকেন।
লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে পঞ্জাবের গায়ক সিধু মুসে ওয়ালা খুনেও তাঁর নাম জড়ায়। তাঁকে জেরা করে পুলিশ।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাজস্থানে খুন হন গ্যাংস্টার রাজু তেহাট। প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয়েছিল তাঁকে। পুলিশের একাংশ মনে করে, ওই খুনের নেপথ্যেও রয়েছেন অনুরাধা। যদিও অনুরাধা তা স্বীকার করেননি। তাঁকে ‘লেডি ডন’ বলারও বিরোধিতা করেছেন। যদিও পরিচিতেরা বলছেন, এ সব তিনি করেই থাকেন। আসলে এ সবের আড়ালে পরের নিশানা খুঁজে চলেছেন অনুরাধা।