দুই নায়িকার বয়সের তফাত ন’বছরের। তবে সিনেমা জগতে তাঁরা মোটামুটি সমসাময়িক। সত্তরের দশকের শেষে রেখা এবং আশির দশকের শুরুতে শ্রীদেবী বলিউডে নজর কাড়তে শুরু করেন। দু’জনের মধ্যে তুলনাও টানা হত যখন-তখন।
সে সময়ে বলিউডে অভিনয় করেছেন ডিম্পল কাপাডিয়া, জীনত আমন, পারভিন বাবি, জয়প্রদা, স্মিতা পাতিলরা। সেই ভিড়ে রেখা আর শ্রীদেবী আলাদা ভাবে নজরে কেড়েছিলেন। তাঁদের বলিউডের ‘ডিভা’র শিরোপা দিয়েছিলেন সিনেমাপ্রেমীরা।
‘ডিভা’— নায়িকাদের ক্ষেত্রে এই বিশেষণ তখনই ব্যবহার করা হয় যখন তিনি সুন্দরী এবং জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি পর্দার উপস্থিতিতেও স্বকীয়। তাঁদের প্রতিভায় শুধু পেশাদারিত্ব নয় আরও অনেক কিছুর প্রকাশ দেখা যায়। এই ‘অনেক কিছু’ তাঁদের দীর্ঘ লব্ধ অভিজ্ঞতা হতে পারে। জন্মসূত্রে পাওয়া কোনও বিশেষ গুণও হতে পারে।
কিন্তু রেখা এবং শ্রীদেবীর ক্ষেত্রে এই বিশেষণগুলির কোনটি কম বা বেশি তা দাঁড়িপাল্লায় মেপে বের করতে পারেননি অতি বড় বিশেষজ্ঞও। তবে যশ চোপড়াকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন। লহমায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, দুই নায়িকার কে, কোথায় আলাদা।
দুই নায়িকার কেরিয়ারের দু’টি বিখ্যাত ছবির পরিচালক ছিলেন যশ। ১৯৮১ সালে রেখাকে নিয়ে ‘সিলসিলা’ তৈরি করেন। ১৯৮৯ সালে তাঁর পরিচালিত ‘চাঁদনি’ ছবির নায়িকা ছিলেন শ্রীদেবী। দু’টি সিনেমাই বলিউডের সময়োত্তর ছবির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
বলিউড বিশেষজ্ঞরা বলেন, সিনেমা দু’টি দুই নায়িকার কেরিয়ারও বদলে দিয়েছিল অনেকটা। যশের পরিচালিত ছবি বড় ‘ব্রেক’ বা নতুন ভাবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দিয়েছিল রেখা এবং শ্রীদেবীকে।
শোনা যায় ‘সিলসিলা’য় রেখার অভিনয় দেখার পর চাঁদনিতেও তাঁকেই নিতে চেয়েছিলেন যশ। কিন্তু পরে সেই পরিকল্পনা বদলে যায়। নতুন নায়িকা শ্রীদেবীকে সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি।
রেখা-শ্রীদেবীর মধ্যে কে বেশি ভাল, তা নিয়ে যখন দ্বিধাবিভক্ত ভক্তকুল, তখন দুই নায়িকার পরিচালকের কাছেই রাখা হয়েছিল প্রশ্ন। যশের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কাকে প্রকৃত ‘ডিভা’র শিরোপা দেবেন তিনি?
যশ এক মুহূর্তও না ভেবে রেখার নাম বলেছিলেন। পরিচালক বলেছিলেন, শ্রীদেবীর থেকে সবদিক থেকেই রেখা এগিয়ে। কোথায় এগিয়ে, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন পরিচালক।
যশ বলেছিলেন, রেখার জীবনে লড়াই অনেক বেশি। তাঁকে নায়িকা হওয়ার যাত্রা শুরু করতে হয়েছে একেবারে শূন্য থেকে।
আসলে, শ্রীদেবী শিশু শিল্পী হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরেই যুক্ত ছিলেন অভিনয় জগতের সঙ্গে। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তামিল ছবিতেও। রেখা তামিল অভিনেত্রীর মেয়ে হয়েও কখনও অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবেননি। কম বয়সে অতিরিক্ত মেদবহুল চেহারার জন্য সহপাঠীদের উপহাসের পাত্রীও ছিলেন তিনি।
রেখার অভিনয় জগতে আসার সিদ্ধান্ত তাঁর মায়ের কথা শুনেই। অর্থাভাব মেটাতে রেখাকে সংসারের হাল ধরতে বলেন তাঁর মা। সিনেমায় কাজ পাওয়ার চেষ্টা করতে বলেন। নিজেকে তৈরি করে ১৯৬৮ সালে সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পান রেখা।
বলিউডে বড় সুযোগ পাওয়ার আগে সব রকম ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। রেখা এমন অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন যেখানে তাঁকে তাঁর রূপের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। তবে রেখার হাতে তখন ছবি বেছে নেওয়ার বিলাসিতা ছিল না। পরিবারের হাল ধরার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। তাই পরের পর কাজ করে গিয়েছেন।
অভিনেত্রীর এই স্ট্রাগলের কথাই উল্লেখ করেছিলেন যশ। তিনি বলেছিলেন, রেখা ফিল্ম জগতকে অনেক গভীরে চিনেছিলেন। কাজের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ এবং একাগ্রতা ছিল শিক্ষণীয়।
যশ বলেছিলেন রেখা যা করেন তাতে ১০০ শতাংশ মন দিয়ে করেন। যদি কিছু ভালবাসেন তবে তার জন্য নিজের পুরোটা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
যশের মতে রেখার এই গুণই তাঁকে পর্দায় দর্শকের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। শ্রীদেবীর অভিনয় তুলনায় কিছুটা ‘আরোপিত’ মনে হয় বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন যশ।
সৌন্দর্যে শ্রীদেবী যে রেখাকে টেক্কা দেন তা বহু ক্ষেত্রেই বলতে শোনা গিয়েছে বহু বিশেষজ্ঞকে। তবে পরিচালক বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, শ্রীদেবীর সৌন্দর্য কিছুটা আঙ্গিক। রেখা তুলনায় অনেক বেশি আত্মিক সৌন্দর্যের অধিকারী।