‘দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্ক জালিয়াতি’র তদন্তে নেমে অভিযুক্ত এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছে সিবিআইয়ের। ওই ব্যবসায়ীর পেল্লাই চেহারার ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছে ‘বিতর্কিত’ অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড হেলিকপ্টার। যার জেরে আবারও খবরের শিরোনামে অগুস্তা কপ্টার বিতর্ক।
দিওয়ান হাউসিং ফিন্যান্স লিমিটেডে (ডিএইচএফএল) ৩৪ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি মামলায় অভিযুক্ত ব্যবসায়ী অবিনাশ ভোঁসলের পুণের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। সেখান থেকে এই কপ্টার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
দেশের রাজনীতিতে অন্যতম চর্চিত অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড হেলিকপ্টার বিতর্ক আদতে কী?
মনমোহন সিংহ নেতৃত্বাধীন ইউপিএ আমলে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ভিভিআইপিদের জন্য ১২টি বিলাসবহুল চপার কিনতে ২০১০ সালে ব্রিটিশ সংস্থা অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি হয় কেন্দ্রের।
৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ওই চুক্তিতে বিপুল অঙ্কের ঘুষের লেনদেন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। যা প্রকাশ্যে আসে ২০১৩ সালে।
ইতালিতে প্রথম এই কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডের সিইও ব্রুনো স্প্যাগনোলিনিকে গ্রেফতার করা হয়।
ভারতীয় বায়ুসেনার সঙ্গে চুক্তি নিশ্চিত করতে মধ্যস্থতাকারীকে ঘুষ দিয়েছে ওই সংস্থা, এই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় অগুস্তার সিইও-কে।
বিতর্কের জেরে ২০১৪ সালে এই চুক্তি বাতিল করে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার। এই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই।
বিতর্কে নাম জড়ায় প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এসপি ত্যাগীরও। তদন্ত শুরু হলে ক্রিশ্চিয়ান মিশেল-সহ তিন দালালের নাম উঠে আসে।
এই ঘটনায় ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এসপি ত্যাগীকে।
অগুস্তা কেলেঙ্কারিতে দুবাই থেকে গ্রেফতার করা হয় দালাল ক্রিশ্চিয়ান মিশেলকে। ২০১৮ সালে তাঁকে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ করা হয়।
তদন্তকারী সংস্থা দাবি করেছিল, চপার চুক্তিতে অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডের হয়ে ঘুষের লেনদেন করেছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক মিশেল।
সিবিআইয়ের দাবি, এ জন্য মিশেলের সংস্থাগুলি প্রায় ৪ কোটি ২৪ লক্ষ ইউরো অর্থ পেয়েছিল।
মিশেল দাবি করেছিলেন যে, গাঁধী পরিবারের নাম উল্লেখ করার জন্য চাপ দিচ্ছিল সিবিআই। যদিও এই দাবি নস্যাৎ করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
চপার কেনাবেচায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয়েছিল জাতীয় রাজনীতি। কংগ্রেসের দাবি ছিল, বাজপেয়ী জমানাতেই ওই কপ্টার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেসের আমলে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল মাত্র।
এত বিতর্কের পর আবারও যে ভাবে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির তদন্তে অভিযুক্তের বাড়ি থেকে এই বিতর্কিত কপ্টার পাওয়া গেল, তা নয়া মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করা হচ্ছে।