যুদ্ধে উত্তপ্ত পশ্চিম এশিয়া। মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ, বোমা, গুলির শব্দে ছেয়ে আছে ইজ়রায়েল আর প্যালেস্তাইনের বাতাস। যত দিন যাচ্ছে, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুমিছিল।
গত ৭ অক্টোবর প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায়। ইজ়রায়েল থেকে আড়াইশোর বেশি সাধারণ মানুষকে বন্দি করে নিয়ে গিয়েছিল তারা। তাদের হামলায় মৃত্যু হয় ১৪০০-র বেশি মানুষের।
হামাসের এই হামলার পরেই যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে পশ্চিম এশিয়ায়। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা করেন। ইজ়রায়েলের প্রত্যাঘাতে গাজ়ায় সাড়ে ১০ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছে।
পশ্চিম এশিয়ার এই বিধ্বংসী যুদ্ধে ভারত আপাতত নীরব দর্শক। হামাসের হামলার বিরোধিতা করে প্রথমে মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি স্থাপনের কথা বলে। যুদ্ধ নিয়ে ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্তাইনের সরাসরি আলোচনার বসা উচিত বলে জানিয়েছিল ভারত।
কিছু দিন আগে রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল। তা থেকে বিরত ছিল ভারত। গাজ়ায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জে। ভারত সেখানেও ভোট দেয়নি।
যুদ্ধ নিয়ে ভারত যখন এই অবস্থান নিয়েছে, তখন ইজ়রায়েল কিন্তু অন্য কথা বলছে। যুদ্ধের আবহে ভারতের সঙ্গে বন্ধন আরও দৃঢ় করার ভাবনাচিন্তা রয়েছে ইজ়রায়েলের।
তবে ইজ়রায়েল এবং হামাসের যুদ্ধের কারণে লাভ হতে পারে নয়াদিল্লির। সাম্প্রতিক রিপোর্টে সেই ইঙ্গিত রয়েছে। যুদ্ধে ইজ়রায়েলে যে ক্ষতি হয়েছে, তার একাংশ পূরণ করতে পারে ভারত।
অক্টোবরের প্রথম দিকে যুদ্ধ শুরু হতেই ইজ়রায়েল সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল, তাদের বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের বরখাস্ত করা।
প্যালেস্তাইনের প্রায় সকল কর্মীকেই ছেঁটে ফেলা হয়েছে ইজ়রায়েলের বিভিন্ন সংস্থা থেকে। এর ফলে সে দেশের নির্মাণশিল্প সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। কর্মীসঙ্কট দেখা দিয়েছে ইজ়রায়েলি নির্মাণ সংস্থাগুলিতে।
কর্মীর অভাবে ইজ়রায়েলের নির্মাণশিল্প ভেঙে পড়তে বসেছে। থমকে রয়েছে কাজ। এর ফলে সে দেশের অর্থনীতিও প্রভাবিত হচ্ছে। যুদ্ধের খরচ বহনের পাশাপাশি নির্মাণশিল্পে এই ধাক্কা ইজ়রায়েলের টনক নড়িয়েছে।
ভয়েস অফ আমেরিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ইজ়রায়েলের নির্মাণশিল্পের সেক্টর থেকে সে দেশের সরকারের কাছে ভারত থেকে কর্মী নিয়ে আসার আবেদন জানানো হয়েছে। প্যালেস্তিনীয়দের ফাঁকা স্থান পূরণ করবেন সেই ভারতীয় শ্রমিকেরা।
প্রাথমিক ভাবে এক লক্ষ ভারতীয় শ্রমিককে ইজ়রায়েলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইজ়রায়েলে গিয়ে তাঁরা ধুঁকতে থাকা নির্মাণ সেক্টরের হাল ধরবেন। কেবল সরকারের সবুজ সঙ্কেত মেলার অপেক্ষা।
যুদ্ধের আবহে ইজ়রায়েল থেকে প্যালেস্তাইনের প্রায় ৯০ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে বলে খবর। তাঁদের ইজ়রায়েলে কাজের অনুমতি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এই শূন্যস্থান পূরণের জন্যই ডাক পড়ছে ভারতীয়দের।
ইজ়রায়েল সরকার নির্মাণক্ষেত্রে ভারতীয়দের নিয়োগে সম্মতি দিলে ভারতীয়দের জন্য বিদেশে কাজের নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে। প্রথম দফায় এক লক্ষ কর্মীকে নিয়োগ করা হলেও পরে আরও কর্মীর ডাক পড়তে পারে পশ্চিম এশিয়ায়।
এর ফলে এক দিকে যেমন ভারতীয়দের কর্মসংস্থান হবে, অন্য দিকে ভারতের সামনে খুলে যাবে বৈদেশিক মুদ্রালাভের সুযোগ। ইজ়রায়েলে কাজ করতে যাওয়া ভারতীয়দের মাধ্যমেই সেই মুদ্রা দিল্লিতে ঢুকবে।
ভারত থেকে ইজ়রায়েলে কাজ করতে যাওয়া নতুন কিছু নয়। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে প্রচুর ভারতীয় কর্মী রয়েছেন। যুদ্ধ শুরুর আগে চলতি বছরের গোড়ার দিকেও ভারত সরকারের সঙ্গে ইজ়রায়েল সরকারের এই সংক্রান্ত কথাবার্তা চলছিল।
ভারত থেকে ১০ হাজার কর্মী ইজ়রায়েলে পাঠানোর কথা হয়েছিল চলতি বছরেই। ওই কর্মীদের মধ্যে একাংশ নির্মাণ ক্ষেত্রে এবং একাংশ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিযুক্ত হবেন বলে ঠিক হয়েছিল। এখনও তা চুক্তির আকারে রয়েছে।
ইজ়রায়েল, হামাসের যুদ্ধ এক মাস পেরিয়েছে। এর মাঝে ভারতীয়দের তড়িঘড়ি দেশে ফিরিয়ে এনেছে কেন্দ্র। যুদ্ধ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবার সেখানে যেতে পারেন ভারতীয় কর্মীরা।