Putin-Trump Phone Call

পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে কি অপেক্ষা করতে হয় ট্রাম্পকে? কী কথা হল দুই রাষ্ট্রপ্রধানের?

ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে ফোনে অন্তত এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। গোটা ঘটনাটিকে ট্রাম্পের ‘অপমান’ হিসাবেই উল্লেখ করেছে একাধিক সংবাদমাধ্যম এবং নেটাগরিকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫ ১৫:২১
Share:
০১ ২০
Putin-Trump Phone Call

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের কথা ছিল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। এর জন্য না কি দীর্ঘসময়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে ট্রাম্পকে। শুধু তা-ই নয়, ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তে যে তাঁর সায় নেই, তা-ও মুখের উপর বলে দিয়েছেন ক্রেমলিনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। আর এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই দুনিয়া জুড়ে পড়ে গিয়েছে হইচই।

০২ ২০
Putin-Trump Phone Call

চলতি বছরের ১৮ মার্চ ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রথম বার পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে উদ্যোগী হন ট্রাম্প। সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে টেলিফোনের সামনে হাজিরই ছিলেন না রুশ প্রেসিডেন্ট। ফলে প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে। পুতিনের এ-হেন পদক্ষেপকে ‘ইচ্ছাকৃত’ বলে সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই জল্পনা ছড়িয়েছে।

Advertisement
০৩ ২০
Putin-Trump Phone Call

সংবাদমাধ্যম দ্য সান জানিয়েছে, ওই দিন রুশ সময় বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মস্কোয় শিল্পপতিদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন পুতিন। ওই সময়ে মস্কোর এক পদস্থ কর্তা এসে জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের কথা রয়েছে তাঁর । কিন্তু, বিষয়টিকে একেবারেই আমল দেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। কিছু ক্ষণ পরে ক্রেমলিনের প্রাসাদে ফিরে ফোন করবেন বলে জানিয়ে দেন তিনি।

০৪ ২০

এর পর রুশ শিল্পপতিদের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন পুতিন। উদ্যোগপতিদের মধ্যে এক জন ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলার প্রসঙ্গটিও তোলেন। জবাবে মৃদু হেসে এবং কাঁধ ঝাঁকিয়ে বিষয়টিকে এড়িয়ে যান রুশ প্রেসিডেন্ট। পরে দ্বিতীয় বার মস্কোর ওই পদস্থ কর্তা ফোনের ব্যাপারটি বলেন তাঁকে। এর পর অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে ক্রেমলিনে ফিরে যান পুতিন।

০৫ ২০

দ্য সানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিকেল ৫টার কিছু পরে ক্রেমলিনে ফেরেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তত ক্ষণে এক ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতেও ভাবলেশহীন ছিলেন পুতিন। উল্টে অনেকটাই ধীরেসুস্থে নিজের অফিসে গিয়ে ফোন তোলেন তিনি। এর পর প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা হয় দুই ‘সুপার পাওয়ার’ দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে।

০৬ ২০

কিন্তু, সেখানেও ট্রাম্প যে খুব বড় দাঁও মারতে পেরেছেন, এমনটা নয়। সূত্রের খবর, আলোচনার শুরুতেই ইউক্রেনে ৩০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পত্রপাঠ তা খারিজ করেন পুতিন। শুধু তা-ই নয়, লড়াই বন্ধ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু কঠিন শর্ত দেন তিনি। এতে উল্টে ট্রাম্পই প্যাঁচে পড়েছেন বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

০৭ ২০

ট্রাম্পকে পুতিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনের উপর যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের কোনও রকমের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবেন না তিনি। আর তাই অবিলম্বে আমেরিকা-সহ অন্য ইউরোপীয় দেশগুলিকে কিভকে সামরিক এবং আর্থিক সাহায্য পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। এই শর্তে ওয়াশিংটনের সম্মতি থাকলেও ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি বা পোল্যান্ড কতটা মানবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

০৮ ২০

পুতিনের দেওয়া দ্বিতীয় শর্ত হল, মার্কিন ও পশ্চিম ইউরোপের শক্তিজোট নেটোয় কখনওই যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেন। এ ব্যাপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে কিভকে। এ ছাড়া ইউক্রেনের যে পরিমাণ জমি রুশ ফৌজ দখল করেছে, তা মস্কোর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে মেনে নিতে হবে। বিনিময়ে কিছু সংখ্যক আহত ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে হস্তান্তর করবে ক্রেমলিন।

০৯ ২০

রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্পের একমাত্র সাফল্য হল, ইউক্রেনের জ্বালানি পরিকাঠামোগুলির উপর হামলা না করার প্রতিশ্রুতি আদায়। মস্কোর যুদ্ধবিমান আপাতত সেগুলিকে নিশানা করবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুতিন। যদিও বিশ্লেষকদের দাবি, এটা শুধুই কথার কথা। কারণ, ইতিমধ্যেই পূর্ব ইউরোপের দেশটির ৮০ শতাংশ জ্বালানি পরিকাঠামো ধ্বংস করেছে রুশ ফৌজ।

১০ ২০

মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এ ভাবে টেলিফোনের সামনে অপেক্ষা করিয়ে রাখা নিয়ে সমাজমাধ্যমে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। নেটাগরিকদের এক জন এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘‘ক্ষমতাবান নেতাদের এ ভাবে অপেক্ষা করানো পুতিনের একটা পুরনো খেলা। এ ব্যাপারে তিনি বেশ নিষ্ঠুর। রুশ প্রেসিডেন্ট বোঝালেন আমেরিকা তাঁর কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’

১১ ২০

এক্স হ্যান্ডলে আর এক জন লিখেছেন, ‘‘ঘরভর্তি বিত্তশালী শিল্পপতিদের সঙ্গে খোশমেজাজে কথা বলছিলেন পুতিন। তখন সঞ্চালক ট্রাম্পের ফোনের ব্যাপারটি তাঁকে মনে করিয়ে দেন। প্রশ্ন করেন, তিনি কি অনুষ্ঠানে আরও কিছু ক্ষণ থাকবেন? জবাবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে দিব্যি হাসছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। একে ট্রাম্পের অপমান ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।’’

১২ ২০

অন্য দিকে এত কিছুর পরও পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপকে ‘ইতিবাচক’ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ফক্স নিউজ়ের ‘দ্য ইনগ্রাহাম অ্যাঙ্গল’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘‘এটা একটা দুর্দান্ত ফোন কল ছিল। আমরা অন্তত দু’ঘণ্টা কথা বলেছি।’’

১৩ ২০

ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিও। টেলিগ্রাম সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘রুশ প্রেসিডেন্ট সংঘর্ষ চালিয়ে যেতে চান। তাই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি পছন্দ নয় তাঁর। পুতিনের প্রতিটা প্রস্তাবকে তাই বিশ্বের নাকচ করা উচিত।’’

১৪ ২০

কিন্তু ফোনালাপকে কেন্দ্র করে ওঠা ‘অপমান’ প্রসঙ্গটিকে কেন গায়ে মাখছেন না ট্রাম্প? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিশ্লেষকেরা দাবি করেছেন, ইউক্রেনের শান্তি ফেরা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর মূল লক্ষ্য পূর্ব ইউরোপের দেশটির দুষ্প্রাপ্য খনিজ সম্পদ। পুতিনের থেকে সেই প্রতিশ্রুতি পেতে চাইছেন তিনি। আর তাই লম্বা সময় ধরে ফোনের সামনে বসে থেকেছেন ট্রাম্প।

১৫ ২০

পুতিন আবার জানেন, নতুন করে ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকার কিছুই করার নেই। কারণ, প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কিকে হাতিয়ার এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সাহায্য না করার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। সেখান থেকে তাঁর পক্ষে পিছিয়ে আসার সম্ভাবনা কম। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে আর মস্কোকে বিপদে ফেলতে পারবেন না তিনি।

১৬ ২০

দ্বিতীয়ত, পানামা খাল, কানাডা এবং গ্রিনল্যান্ডকে অবিলম্বে কব্জা করতে চাইছেন ট্রাম্প। তা ছাড়া আগামী ২ এপ্রিল থেকে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি চালু করতে চলেছে তাঁর সরকার। ইউরোপ থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারেও জোর দিয়েছেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। তাঁর এ হেন পদক্ষেপে নেটো-ভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছে।

১৭ ২০

বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এই সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ পুতিন। যুদ্ধবিরতি না করে ট্রাম্পের উপর পাল্টা চাপ তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি। তাঁর মূল লক্ষ্য শর্তের নাম করে আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করা। আর এ ভাবেই নেটোয় ভাঙন ধরাতে চাইছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

১৮ ২০

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা তাই বলছেন, ফোন কলের নামে ট্রাম্পকে বাঁশির মতো বাজিয়েছেন পুতিন। অন্য দিকে শুল্কযুদ্ধে নেমে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ‘বন্ধু’দের মনে সন্দেহ তৈরি করায় সমস্যা জটিল হল বলে মনে হচ্ছে। আগামী দিনে রুশ প্রেসিডেন্ট যে গোটা ইউক্রেন দখল করতে চাইবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

১৯ ২০

পুতিন-ট্রাম্পের ফোনালাপে কোথাও মিশে গিয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। ২০০১ সালের ইডেন টেস্টে টস করতে আগেভাগে ক্রিজে চলে যান অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্টিভ ওয়। কিন্তু সেখানে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। অনেকটা পরে টসের জন্য মাঠে আসেন সাবেক ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

২০ ২০

ওই ম্যাচ খেলতে নামার আগে টানা ১৫টি টেস্টে অপরাজিত ছিল অসি বাহিনী। শুধু তা-ই নয়, এক ম্যাচে জিতে ইডেনে নেমেছিল স্টিভের টিম। কিন্তু ইডেন টেস্টে ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। ফলো অন করিয়েও হারে অপ্রতিরোধ্য ক্যাঙারু ব্রিগেড। পরে ২-১ সিরিজ জেতে ভারত। ২৪ বছর পর বিশ্ব রাজনীতিতেও তেমনটা দেখা যাবে কি না, তার উত্তর দেবে সময়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement