India’s World Happiness Ranking

সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘরই ‘আনন্দ আশ্রম’! কোন নিক্তিতে বিশ্ব ‘সুখ-সূচকে’ ভারত পিছিয়ে পাকিস্তান-গাজ়ার চেয়ে?

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েলবিয়িং রিসার্চ সেন্টার এবং মার্কিন ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ‘গ্যালাপ’ প্রকাশিত ‘বিশ্ব সুখ-সূচক, ২০২৫’ (ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স, ২০২৫) ঘিরে উঠে গিয়েছে একাধিক প্রশ্ন। সমীক্ষা রিপোর্টে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ও গাজ়া এবং সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর পাকিস্তানকে ভারতের চেয়ে সুখী দেশ বলে দাবি করা হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫ ১৫:১৪
Share:
০১ ২০
World Happiness Report 2025

যেখানে যুদ্ধ আর মৃত্যুর হাহাকার, সেখানকার বাসিন্দারা নাকি দারুণ সুখী! বেজায় আনন্দে আছে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘরও! উল্টে আপাত শান্ত ভারতের জনগণের মন দুঃখে ভরা! এমনই অদ্ভুত সমীক্ষা রিপোর্ট ঘিরে দুনিয়া জুড়ে পড়ে গিয়েছে শোরগোল। সব দেখেশুনে একে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন নেটাগরিকগদের একাংশ।

০২ ২০
World Happiness Report 2025

চলতি বছরের ২০ মার্চ প্রকাশিত হয় ‘বিশ্ব সুখ-সূচক’ (ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স ২০২৫)। সেখানে সুখী দেশগুলির একটি তালিকা দিয়েছেন সমীক্ষকেরা। উক্ত তালিকায় ১৪৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১১৮তম স্থান পেয়েছে ভারত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নয়াদিল্লির বেশ কিছুটা উপরে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন এবং প্যালেস্টাইন।

Advertisement
০৩ ২০
World Happiness Report 2025

এ ছাড়া ‘বিশ্ব সুখ-সূচক’এ ভারতের আগে স্থান পেয়েছে প্রায় দেউলিয়া হতে চলা ও গৃহযুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তান। গত কয়েক বছর ধরেই বিদ্রোহী এবং সন্ত্রাসীদের হামলায় রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত পশ্চিমের এই প্রতিবেশী দেশ। তার পরও ইসলামাবাদ উপরের দিকে স্থান পাওয়ায় সমীক্ষকদের গায়ে লেগেছে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ।

০৪ ২০

‘বিশ্ব সুখ-সূচক’ সংক্রান্ত সমীক্ষা রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েলবিয়িং রিসার্চ সেন্টার। এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ‘গ্যালাপ’-এর সহযোগিতা পেয়েছে তারা। রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২২ এবং ২০২৩ সালের তুলনায় ভারতের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ওই দু’বছর ১২৬তম স্থানে ছিল নয়াদিল্লির নাম।

০৫ ২০

এ বছরের সমীক্ষা রিপোর্টে ১০৯ নম্বর স্থান পেয়েছে পাকিস্তান। ইউক্রেন রয়েছে ১১১ নম্বর স্থানে। ইসলামাবাদের চেয়ে এক ধাপ উপরে রয়েছে প্যালেস্টাইন। তাদের অবস্থান ১০৮। রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার এক দিনের মাথাতেই প্যালেস্টাইনের গাজ়ায় ইজ়রায়েলি বায়ুসেনার বোমাবর্ষণে বহু মানুষের জীবনহানির খবর প্রকাশ্যে এসেছে।

০৬ ২০

এ ছাড়া ভারতের উপরে আফ্রিকার একগুচ্ছ দেশকে রেখেছেন সমীক্ষকেরা। তার মধ্যে রয়েছে ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, নাইজার, মরক্কো, তিউনিশিয়া এবং কেনিয়া। প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে নেপাল এবং ভুটানের স্থান যথাক্রমে ৯২ এবং ৯৫। এ ছাড়া পূর্ব দিকের বাংলাদেশ এবং মায়ানমার রয়েছে ১৩৪ এবং ১২৬ নম্বর স্থানে।

০৭ ২০

এই সমীক্ষা রিপোর্টে আরও এক বার আফগানিস্তানকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে অসুখী’ দেশ বলা হয়েছে। তালিকায় সবার শেষে জায়গা পেয়েছে হিন্দুকুশের কোলের তালিবানশাসিত রাষ্ট্র। সমীক্ষকদের দাবি, পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ হল ফিনল্যান্ড। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড এবং সুইডেন।

০৮ ২০

‘বিশ্ব-সুখ সূচক’ অনুযায়ী, আফগান মহিলাদের জীবনযাত্রার অবনতি ঘটেছে। তালিকায় কানাডার নীচে নেমে গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২৪তম স্থান পেয়েছে ওয়াশিংটন, যা বিগত বছরগুলির নিরিখে সর্বনিম্ন। চিন রয়েছে ৬৮তম স্থানে। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সুখী দেশ হিসাবে চিহ্নিত রয়েছে তাইওয়ান। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটির র‌্যাঙ্কিং ২৭।

০৯ ২০

আরও মজার বিষয় হল, এই রিপোর্টে ভারতের সামনে রয়েছে ইরাক এবং সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। তালিকায় ১০ ধাপ নীচে নেমে গিয়েছে হংকং এবং সিঙ্গাপুর। তাইল্যান্ড, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে যথাক্রমে ৪৯, ৫৫ এবং ৫৮ নম্বর স্থানে। শ্রীলঙ্কা রয়েছে ১৩৩ নম্বরে। আর যুদ্ধবিধ্বস্ত ইজ়রায়েলের স্থান আট।

১০ ২০

সমীক্ষকদের দাবি, মূলত তিনটি মূল বিষয়ের উপর নির্ভর করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেগুলি হল জীবনের মূল্যায়ন, ইতিবাচক আবেগ এবং নেতিবাচক আবেগ। একটি বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ‘‘সুখের র‌্যাঙ্কিং মূলত জীবনের মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। কারণ এটি মানুষের জীবনযাত্রার মানকে আরও স্থিতিশীল করে তোলে।’’

১১ ২০

এ ছাড়া ‘বিশ্ব সুখ-সূচক’ তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির আমজনতার মতামত সংগ্রহে জোর দিয়েছে মার্কিন ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ‘গ্যালাপ’। তালিকায় নাম থাকা প্রতিটি রাষ্ট্রের অন্তত হাজার জন নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেছে তারা। পাশাপাশি নাগরিকদের মাথাপিছু গড় আয়ও (পার ক্যাপিটা ইনকাম) দেখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

১২ ২০

সমীক্ষকদের দাবি, সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ভূমিকা খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাঁদের কথায়, ‘‘সুখ বা যত্ন ভাগ করে নেওয়ার একটি সর্বজনীন পদ্ধতি হল নাগরিকদের খাবার ভাগ করে খাওয়ার প্রবণতা। সুখী দেশগুলির বাসিন্দারা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খেতে পছন্দ করেন। অন্য দিকে আমেরিকায় এই প্রবণতা কমছে।’’

১৩ ২০

কিন্তু এই রিপোর্ট প্রকাশিত হতেই ফুঁসে ওঠেন নেটাগরিকেরা। সমীক্ষকদের প্রতিটা কথা যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করেছেন তাঁরা। সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের এক জন লিখেছেন, ‘‘মাথাপিছু গড় আয়ের নিরিখে প্যালেস্টাইন বা পাকিস্তানের থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে ভারত। তা হলে কিসের ভিত্তিতে নয়াদিল্লিকে তালিকায় পিছনের দিকে স্থান দেওয়া হচ্ছে?’’

১৪ ২০

নেটাগরিকদের দ্বিতীয় প্রশ্ন সামাজিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে। ইরাক বা সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলার কারণে সেখানে এক টুকরো রুটির জন্য আমজনতাকে রীতিমতো মারামারি করতে দেখা গিয়েছে। একই ছবি এসেছে পাকিস্তান থেকেও। ভারতে এই ধরনের কোনও পরিস্থিতি নেই। উল্টে এখানকার পারিবারিক বন্ধন এখনও অনেক বেশি মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।

১৫ ২০

তৃতীয়ত, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, প্যালেস্টাইন বা সিরিয়ার নাগরিকদের ইতিবাচক মনোভাব খুব বেশি, এমনটা মানতে নারাজ সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশ। উল্টে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক মনোভাব বলতে সমীক্ষকেরা কী বোঝাতে চাইছেন, তাই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

১৬ ২০

সমীক্ষা রিপোর্টে আবার স্বেচ্ছাসেবী কাজ, দানধ্যান এবং অপরিচিতদের সাহায্য করার নিরিখে ভারতের স্থান উপরের দিকে রাখা হয়েছে। এই তিন শ্রেণিতে নয়াদিল্লি পেয়েছে যথাক্রমে ১০, ৫৭, এবং ৭৪ নম্বর র‌্যাঙ্কিং। প্রতিবেশী, অপরিচিত এবং হারানো টাকার ব্যাগ ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে ১১৫, ৮৬ এবং ৯৩তম জায়গায় রয়েছে ভারত।

১৭ ২০

রিপোর্টের এই অংশটি নিয়েও খোঁচা দিতে ছাড়েননি নেটাগরিকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, দানধ্যান বা অপরিচিতদের সাহায্য পাকিস্তান, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন বা ইরাকের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির নাগরিকেরা অনেক বেশি করছেন? সমীক্ষকেরা অবশ্য বলেছেন, কোভিড অতিমারির সময়ে আমজনতার মধ্যে দয়ার ভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল। বর্তমানে সেই সূচক নিম্নমুখী হয়েছে।

১৮ ২০

গত বছর অপরিচিতদের সাহায্য করার হার বিশ্ব জুড়ে অনেকটা বেশি ছিল। এর সূচক ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে এই বিষয়টির উপর ভিত্তি করে সুখী দেশের তালিকা তৈরি করা হয়নি বলে সমীক্ষকদের তরফে জানানো হয়েছে।

১৯ ২০

এ বছরের মার্চে ‘বিশ্ব সুখ-সূচক’ সংক্রান্ত আরও একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ফরাসি সংস্থা ইপসোস। তাদের রিপোর্টটির নাম ‘ইপসোস গ্লোবাল হ্যাপিনেস সার্ভে, ২০২৫’। সেই তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে ভারতের নাম।

২০ ২০

ফ্রান্সের ইপসোসের সমীক্ষা রিপোর্টও অবশ্য প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, বিশ্বের মাত্র ৩০টি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই তালিকা তৈরি করেছে তারা। সুখের সূচক পরিমাপের ক্ষেত্রে বহু বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement