F-35 Alternatives

আমেরিকাকে জবাব দিতে এফ-৩৫ নিচ্ছে না কানাডা? বড় দাঁও মারতে অটোয়ার প্লেটে রাফাল সাজাচ্ছে ফ্রান্স

আমেরিকার সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’র সম্পর্কে সামান্য চিড় ধরতেই মার্কিন লড়াকু জেট ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’র চুক্তি বাতিল করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কানাডা। এই পরিস্থিতিতে বড় দাঁও মারতে অটোয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে পশ্চিম ইউরোপ?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫ ০৯:৪৮
Share:
০১ ১৯
Canada may buy Rafale Gripen or Eurofighter after rejecting fifth generation US fighter jet F35

কথায় আছে, ‘নেপোয় মারে দই’! এ বার সেই লাভের গুড় খেতে আসরে নেমে পড়েছে ফ্রান্স-সহ পশ্চিম ইউরোপের একাধিক দেশ। তাদের প্রত্যেকেরই লক্ষ্য কানাডা। ‘বন্ধু’ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতেই মোটা অঙ্কের প্রতিরক্ষা চুক্তিতে অটোয়াকে কাছে টানতে চাইছে তারা।

০২ ১৯
Canada may buy Rafale Gripen or Eurofighter after rejecting fifth generation US fighter jet F35

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া ইস্তক তলানিতে গিয়েছে আমেরিকা ও কানাডার সম্পর্ক। সেই জাঁতাকলে পড়ায় বিপদ বেড়েছে বিখ্যাত মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা লকহিড মার্টিনের। তাদের সঙ্গে হওয়া লড়াকু জেটের চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত একরকম নিয়েই ফেলেছে ‘ম্যাপল পাতার দেশ’।

Advertisement
০৩ ১৯
Canada may buy Rafale Gripen or Eurofighter after rejecting fifth generation US fighter jet F35

লকহিড মার্টিনের মোট ৮৮টি পঞ্চম প্রজন্মের ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ যুদ্ধবিমান অটোয়াকে সরবরাহ করার কথা রয়েছে। কানাডার সংবাদ সংস্থা ‘দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এই চুক্তি বাতিল করে ইউরোপীয় দেশ থেকে লড়াকু জেট কেনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে তারা।

০৪ ১৯

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বিকল্পগুলি খতিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে ইউরোপীয় বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। সব দিক বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পরই তুঙ্গে ওঠে জল্পনা।

০৫ ১৯

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, শেষ পর্যন্ত ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’র চুক্তি বাতিল হলে ‘জেএএস ৩৯ গ্রিপেন’ যুদ্ধবিমান কেনার দিকে ঝুঁকতে পারে কানাডা। এর নির্মাণকারী সংস্থা হল সুইডেনের ‘সাব এবি’। মার্কিন লড়াকু জেটটির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সমানে সমানে টক্কর দিয়েছিল ইউরোপের এই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান।

০৬ ১৯

কিন্তু এই লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছিল ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’। এ ব্যাপারে আমেরিকা ও কানাডার মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার পর অসন্তোষ প্রকাশ করে সুইডিশ সংস্থা ‘সাব’। ওয়েবসাইটে যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী সংস্থাটি লেখে, ‘‘কানাডার জলবায়ুর কথা ভেবে গ্রিপেনের নকশায় অনেক বদল আনা হয়েছিল। অন্যায় ভাবে এই দৌড় থেকে আমাদের ছিটকে দেওয়া হয়েছে।’’

০৭ ১৯

গ্রিপেন ছাড়া কানাডার কাছে আরও দু’টি বিকল্প রয়েছে। সেগুলি হল, ‘ইউরোফাইটার টাইফুন’ এবং ‘রাফাল’। প্রথমটির নির্মাণকারী সংস্থার নাম ‘ইউরোফাইটার জিএমবিএইচ’। একাধিক দেশ মিলে এই লড়াকু জেটটি তৈরি করেছে। সেই তালিকায় রয়েছে ব্রিটেন, জার্মানি, স্পেন এবং ইতালি।

০৮ ১৯

অন্য দিকে ফরাসি সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশনের ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হল রাফাল। ২০১৮ সালে এই লড়াকু জেট কেনার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করেছিল অটোয়া। কিন্তু, পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তারা। কারণ ফরাসি যুদ্ধবিমানটি তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে অক্ষম বলে মনে করেছিল ‘ম্যাপল পাতার দেশ’।

০৯ ১৯

তবে মুখে বললেও কানাডার পক্ষে ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’র চুক্তি বাতিল করা মোটেই সহজ নয়। সম্প্রতি তার কারণ ব্যাখ্যা করছেন টরন্টোর ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক মার্টিন চ্যডউইক। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রিপেন এবং ইউরোফাইটারের ইঞ্জিন-সহ একাধিক যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে আমেরিকা। চুক্তি বাতিল হলে অবশ্যই সেটা বন্ধ রাখবে ওয়াশিংটন।’’

১০ ১৯

ফরাসি জেট রাফালের ক্ষেত্রে অবশ্য এই সমস্যা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু এই যুদ্ধবিমানটি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য সমস্যা রয়েছে। রাফালের রাডার এবং অস্ত্র উত্তর আমেরিকার আকাশসীমাকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নয়। দ্বিতীয়ত, পরিকাঠামোগত ঘাটতি থাকায় এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিপুল টাকা খরচ করতে হতে পারে কানাডাকে।

১১ ১৯

কিন্তু, তার পরও এ ব্যাপারে আশা ছাড়তে নারাজ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। সম্প্রতি রাফাল নিয়ে বড় মন্তব্য করেছেন তিনি। মাকরঁ বলেছেন, ‘‘যাঁরা এফ-৩৫ কিনবেন, তাঁদের অবশ্যই রাফালের কথা ভাবা উচিত। কারণ, এটি বেশ সস্তা এবং অনেক বেশি কার্যকরী যুদ্ধবিমান।’’

১২ ১৯

কানাডার প্রধানমন্ত্রীরা প্রথম বিদেশ সফর হিসাবে সাধারণত আমেরিকাকে বেছে নেন। কিন্তু সেই রাস্তায় হাঁটেননি মার্ক কার্নি। শপথ নিয়ে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সে যান তিনি। প্যারিসে দীর্ঘ সময় ধরে প্রেসিডেন্ট মাকরেঁর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরে কার্নি বলেন, ‘‘ফ্রান্সের মতো নির্ভরযোগ্য বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে হবে।’’

১৩ ১৯

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, রাফাল নিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে অটোয়া প্রশাসন। আর তার জন্য ফরাসি লড়াকু জেটটির নকশায় বড় বদল করতে পারে দাসো অ্যাভিয়েশন।

১৪ ১৯

অন্য দিকে হাল ছাড়তে রাজি নয় মার্কিন যুদ্ধবিমান নির্মাণকারী সংস্থা লকহিড মার্টিন। এই পরিস্থিতিতে কানাডাকে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে তারা। সেখানে অটোয়ার সামনে বিপুল কর্মসংস্থানের টোপ রেখেছে এই লড়াকু জেট কোম্পানি।

১৫ ১৯

সংবাদ সংস্থা ‘দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল’ জানিয়েছে, কানাডায় বড় আকারের উৎপাদন কেন্দ্র খোলার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে লকহিড মার্টিন। সেখানে চলবে ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’র অ্যাসেমব্লিং এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। এ ছাড়া অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রের পৃথক ইউনিট চালু করতেও ইচ্ছুক মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থাটি।

১৬ ১৯

তবে এ ক্ষেত্রে অটোয়াকে একটি মাত্র শর্ত মানতে হবে। কোনও অবস্থাতেই ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’র চুক্তি বাতিল করতে পারবে না কানাডা প্রশাসন। ২০২৩ সালে এই যুদ্ধবিমানের বরাত পায় লকহিড মার্টিন। আগামী বছরের শুরুতেই ১৬টি লড়াকু জেট সরবরাহ করার কথা রয়েছে তাদের।

১৭ ১৯

গোদের উপর বিষফোড়ার মতো এই পরিস্থিতিতে আবার এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের ‘কিল সুইচ’ নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করে বসেছে জার্মানি। ইউরোপের দেশটির দাবি, লড়াকু জেটটির ওই সুইচ সক্রিয় হলে লড়াইয়ের ময়দানে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এই বিমান। এর নিয়ন্ত্রণ নাকি সবসময়েই থাকবে আমেরিকার হাতে।

১৮ ১৯

উল্লেখ্য, জার্মানি, ব্রিটেন-সহ ১৩টি ইউরোপীয় দেশ আমেরিকার থেকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার জন্য চুক্তি করেছে। কিল সুইচের ধারণা সত্যি হলে ওই দেশগুলি বিপদে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। কেউ কেউ আবার মনে করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘হাতের পুতুল’ হয়ে থাকতে হতে পারে ওই দেশগুলিকে।

১৯ ১৯

লকহিড মার্টিন অবশ্য জার্মানির এই ‘কিল সুইচ’-এর দাবিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু, তার পরও এই নিয়ে ধোঁয়াশা যে পুরোপুরি কেটে গিয়েছে এমনটা নয়। এফ-৩৫ থেকে কানাডার মুখ ফেরানোর এটাও একটা কারণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলি সামনে চলে আসবে মোটা দাঁও মারার সুযোগ, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement