মহাকাশের পথে রওনা দিয়েছে দেশের প্রথম বেসরকারি সংস্থার তৈরি রকেট ‘বিক্রম-এস’। শুক্রবার সকালে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে এর সফল উৎক্ষেপণ করা হয় বলে জানিয়েছেন ওই রকেটটির নির্মাতা সংস্থা কর্তৃপক্ষ। এই রকেটযাত্রায় পর ভারতেও কি ইলন মাস্ক বা জেফ বেজ়োসদের যুগ শুরু হয়ে গেল? এ দেশে বেসরকারি উদ্যোগে মহাকাশে রকেট পাঠানোর কীর্তি নতুন হলেও আমেরিকায় এমন নজির আগেই গড়েছিলেন মাস্ক বা বেজ়োসরা।
দশকের পর দশক মহাকাশে ভারতের পতাকা বহন করেছে ইসরো— দেশের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। তবে এই প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত রকেট উড়ল মহাকাশে। স্বাভাবিক ভাবেই একে ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শুক্রবার শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধওয়ান মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের লঞ্চ প্যাড থেকে শূন্যে ওড়ে ‘বিক্রম-এস’। যাকে গড়ার কাজে লেগেছিল ‘স্কাইরুট অ্যারোস্পেস’ নামে হায়দরাবাদের একটি স্টার্টআপ সংস্থা।
হায়দরাবাদের ওই সংস্থাটির বয়স মোটে ৪ বছর। তবে এই সংক্ষিপ্ত সময়েই ইতিহাসে জায়গা পাকা করে নিয়েছে তারা। এতে অবশ্যই ইসরো এবং ইন্ডিয়ান স্পেস প্রোমোশন অ্যান্ড অথরাইজ়েশন সেন্টার (ইন-স্পেস)-এর সহায়তা পেয়েছে স্কাইরুট।
বস্তুত, মহাকাশ গবেষণায় ইসরোর একছত্র আধিপত্য থাকলেও দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও সে ক্ষেত্রে সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। বছর কয়েক আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সে প্রস্তাব অনুমোদন পায়। গঠিত হয় ইন-স্পেস।
শুক্রবার ইন-স্পেসের পাশাপাশি ইসরোকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের একটি বেসরকারি সংস্থার এই পদক্ষেপ যে নজির হয়ে থাকল, তা-ও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এই রকেটে করে মহাকাশে ৩টি ‘পেলোড’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেগুলি তৈরি করেছে অন্ধ্রপ্রদেশের এন-স্পেস টেক ইন্ডিয়া, চেন্নাইয়ের স্টার্টআপ সংস্থা স্পেস কিডস এবং আর্মেনিয়ার সংস্থা বাজ়ুমকিউ স্পেস রিসার্চ ল্যাব।
শুক্রবার স্কাইরুট-এর দাবি, শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণের পর এটি ৮৯.৫ কিলোমিটার উপরে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর মতোই এই সফর ঘিরে উচ্ছ্বসিত সংস্থা কর্তৃপক্ষও। স্কাইরুটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পবনকুমার চন্দানা বলেন, ‘‘দেশের প্রথম বেসরকারি রকেট উৎক্ষেপণ করে আমরা ইতিহাস গড়েছি।’’
পবনের দাবি, ‘‘এই রকেট নতুন ভারতের প্রতীক। এ তো যাত্রার শুরু (প্রারম্ভ)।’’ বস্তুত, এই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘প্রারম্ভ’।
রকেটের নামের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার আদিপুরুষ তথা গবেষক বিক্রম সারাভাইয়ের মতো নাম। সঙ্গে স্কাইরুটের আদ্যক্ষর।
এই রকেট উৎক্ষেপণ যে মহাকাশ গবেষণায় ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, তা মনে করেন স্কাইরুটের আর এক সহ-প্রতিষ্ঠাতা ভরত ডাকা। তাঁর কথায়, ‘‘এই উৎক্ষেপণের মধ্যে দিয়ে নিজেদের (উন্নত মানের) প্রযুক্তির প্রমাণ দিয়েছি আমরা। আমাদের বিনিয়োগকারীদের কাছেও নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণ করেছি।’’
স্কাইরুট জানিয়েছে, রকেটটি তৈরি করতে ২০০ জন ইঞ্জিনিয়ার ২ বছর কাজ করেছেন। অত্যাধুনিক বিমানের প্রযুক্তিতে তৈরি এই রকেটে রয়েছে সলিড ফুয়েল প্রপালশন। কার্বন ফাইবারের সাহায্যে এর কাঠামোটি গড়া হয়েছে।
বিক্রম সিরিজ়ের অরবিটাল ক্লাস মহাকাশ উৎক্ষেপণকারী বেশির ভাগ রকেটের পরীক্ষানিরীক্ষা করতে এই রকেটটি সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে স্কাইরুট। রকেট উৎক্ষেপণের আগে ও পরে বিভিন্ন ধাপে বহু সাব-সিস্টেমও যাচাই করবে এটি।
স্কাইরুট জানিয়েছে, ৫৪৫ কেজির ওজনের এই রকেটটি দৈর্ঘ্যে সাড়ে ১৯ ফুটের বেশি। যদিও এটি এই বিভাগে বিশ্বের বহু রকেটের থেকে সস্তার বলে দাবি স্কাইরুটের।
বিক্রম-এস সফল ভাবে মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার পর ইন-স্পেসের যে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ দেখিয়েছেন, তা জানিয়েছেন ওই সংস্থার চেয়ারম্যান, পবন গোয়েন্কা। তিনি বলেন, ‘‘মহাকাশে পা রাখার জন্য দেশের দেড়শো সংস্থা আগ্রহী। তবে এখনও পর্যন্ত ৫টি সংস্থাকে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে।’’