২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সেনা অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার পর থেকে দু’দেশের সেনাদের মধ্যে লাগাতার যুদ্ধ চলছে। কখনও যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে, কখনও কমেছে। তবে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার লক্ষণ নেই।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে সমর্থন জানিয়েছিল জো বাইডেনের সরকার। যুদ্ধের শুরুতে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্যও করেছিল।
কিন্তু জার্মানির সঙ্গে জোট বেঁধে সেই আমেরিকাই নাকি এ বার ইউক্রেনকে যুদ্ধ থেকে সরে আসার কথা বলছে! তেমনটাই উঠে এসেছে জার্মানির এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
জার্মানির ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘যুদ্ধের ক্লান্তি’ এবং অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে কিভকে সমর্থন করা নেটো দেশগুলির পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। আর সেই কারণেই আমেরিকা এবং জার্মানি জেলেনস্কি সরকারকে যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
জার্মানির ট্যাবলয়েড ‘বিআইএলডি’-র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মার্চ মাসে রুজ়ভেল্ট কক্ষে বৈঠকে বসেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ়।
সেই বৈঠকের সময় বাইডেন এবং ওলাফ— উভয়েই নাকি ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ সীমিত করার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসার জন্যও নাকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপর পরোক্ষ ভাবে চাপ দিতে সম্মত হয়েছিলেন তাঁরা।
কিভ-মস্কোর মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য প্রদানকারী দু’টি প্রধান শক্তি ছিল আমেরিকা এবং জার্মানি। কিন্তু সেই অস্ত্র সরবরাহের হিসাব নাকি বদলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে ‘বিআইএলডি’ জানিয়েছে, দুই মহাশক্তিধরই এখন শুধুমাত্র ‘নির্দিষ্ট পরিমাণ’ অস্ত্র সরবরাহ করতে চায় ইউক্রেনকে। যাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য যাতে পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে, সেই অবকাশ রাখতেও ইউক্রেন সেনাবাহিনীর হাতে বেশি অস্ত্র তুলে দিতে রাজি নয় আমেরিকা এবং জার্মানি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে যে, জার্মানির ফেডারেল সরকার এখন ইউক্রেনকে ‘আলোচনার জন্য কৌশলগত ভাবে ভাল অবস্থানে’ রাখার লক্ষ্য নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
সরকারি সূত্র জার্মানির ওই সংবাদমাধ্যমকে বলেছে, “ইউক্রেনের উচিত ‘সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ নিয়ে রাশিয়ার শাসক ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসা। হোয়াইট হাউস এবং চ্যান্সেলার বিষয়টি দেখছেন।’’
জার্মান সরকারের এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করে সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘জেলেনস্কির বোঝা উচিত যে, এ ভাবে সব কিছু চলতে পারে না।’’
বার্লিন এবং ওয়াশিংটন মনে করছে, কিভ এবং মস্কো যদি আলোচনায় বসতে রাজি না হয়, তা হলে দুই দেশের মধ্যে সমস্যার কোনও হিল্লে হবে না। দুই সরকারের মধ্যে কোনও আনুষ্ঠানিক চুক্তিও হবে না।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া এবং ইউক্রেনকে শান্তি আলোচনায় বসাতে ব্যর্থ হলে ‘প্ল্যান বি’-ও রয়েছে আমেরিকা এবং জার্মানির হাতে।
জার্মানি সংবাদমাধ্যমে সূত্র বলেছে, ‘‘দু’দেশের (রাশিয়া এবং ইউক্রেন) মধ্যে শান্তি আলোচনা সম্ভব না হলে বিকল্প হিসাবে কোনও চুক্তি ছাড়াই সংঘাত থামাতে চাইছে বার্লিন এবং ওয়াশিংটন।’’
এর অর্থ হল, শান্তি আলোচনা বাস্তবায়িত না হলেও, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি নতুন সীমানা টানতে চাইছে আমেরিকা এবং জার্মানি।
হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুলের বেলফার সেন্টারের মতে, ক্রিমিয়া ছাড়াও ইউক্রেনের প্রায় ১৭.৫ শতাংশ জমি এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। যা ২০১৪ সালে অধিগ্রহণ করেছিল পুতিন সরকার। রাশিয়ার দাবি, সেই জমি তাদের দেশেরই অংশ।
যদিও ইউক্রেন এই বিকল্প রাস্তাতেও হাঁটবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞেরা। রাশিয়া অধিকৃত জমি পুনরুদ্ধার করার দাবিতে বহু দিন ধরেই অনড় জেলেনস্কি সরকার।