আকাশ থেকে টুপটাপ বৃষ্টির মতো ঝড়ে পড়ছে পিৎজা, বার্গার, চকোলেট, আইসক্রিমের মতো মুখরোচক সব খাবার। খাদ্যরসিকদের কাছে এ স্বপ্নের মতোই বটে। কিন্তু এ রকম ঘটনা যদি বাস্তবে ঘটে?
‘ক্লাউডি উইথ এ চান্স অফ মিটবল্স’ গল্পের পাতাতেও এমন ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। ২০০৯ সালে এই গল্পের উপর ভিত্তি করে ফিল্ম সিরিজ়ও তৈরি করা হয়েছে। সেই গল্পে ফ্লিন্ট লকউডের তৈরি করা অদ্ভুত যন্ত্র থেকে নানা রকম খাবার ঝরে পড়ত। শহরের লোকজন দেখে ভাবত আকাশ থেকেই বুঝি খাবারের বর্ষণ হচ্ছে। সিনেমা যেন বাস্তবে ধরা দিয়েছিল আমেরিকার এক প্রদেশে।
১৮৭৬ সালের ৩ মার্চ। আমেরিকার কেনটাকি শহরের বাথ কাউন্টি এলাকার অলিম্পিয়া স্প্রিংস নামে একটি ছোট শহরের ঘটনা। ঘড়িতে তখন প্রায় দুপুর ১২টা। সূর্য তখন মাথার উপরে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই সময় আকাশ থেকে টুপটাপ পড়তে শুরু করে মাংসের টুকরো।
টানা সাত মিনিট ধরে আকাশ থেকে একনাগাড়ে ‘মাংস বৃষ্টি’ হতে থাকে। এই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন অলিম্পিয়া স্প্রিংস এলাকার এক কৃষক অ্যালান ক্রাউচের পত্নী।
কানাঘুষো শোনা যায়, আকাশ থেকে যখন মাংসের টুকরোগুলি পড়তে শুরু করে তখন নিজের বাড়ির উঠোন থেকে কয়েক পা দূরেই ছিলেন অ্যালানের স্ত্রী। মাঠে সাবান তৈরি করতে মগ্ন ছিলেন তিনি।
অ্যালানের স্ত্রীর দাবি, হঠাৎ আকাশ থেকে টুপটাপ ভারী জিনিস পড়তে শুরু করে। দূর থেকে দেখে তিনি ভেবেছিলেন বরফের ভারী টুকরো পড়ছে বোধ হয়। কিন্তু মাটিতে সেই টুকরোগুলি আছড়ে পড়ার সময় জোর আওয়াজ শুনে সন্দেহ জাগে তাঁর মনে।
আওয়াজ শুনে অ্যালান বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন বলে দাবি করেন তাঁর স্ত্রী। তিনি জানান, টানা সাত মিনিট ধরে আকাশ থেকে মাংসের টুকরো পড়ার পর তা হঠাৎ করে থেমে যায়। কোন প্রাণীর মাংস তা খতিয়ে দেখার জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছন তাঁরা। এলাকার অন্যান্যরাও সেখানে জড়ো হন।
এলাকাবাসীদের একাংশের দাবি ছিল, তাঁরা মাংসের টুকরোগুলি খেয়েও দেখেছিলেন। কারও দাবি সেই স্বাদ অবিকল গরুর মাংসের মতো। আবার কেউ কেউ দাবি করেন, হরিণ বা ভেড়ার মাংসের মতো স্বাদ পেয়েছিলেন তাঁরা।
‘মাংস বৃষ্টি’র ঘটনা কেনটাকির পর নাকি ইউরোপেও ঘটে। সেই সময়ে বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ পাওয়ায় সকলের আগ্রহ তৈরি হয়। রসায়নাগারে সেই মাংসের টুকরোগুলির নমুনাও পাঠানো হয়।
মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে এক বিজ্ঞানী দাবি করেন যে এই মাংসগুলি ঘোড়া অথবা মানবশিশুর। ঘোড়া বা মানবশিশুর ফুসফুস যে ধরনের টিস্যু থাকে, মাংসের টুকরোগুলির মধ্যেও একই রকম টিস্যুর উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছিল ।সেই সময়ে আধুনিক যুগের মতো উন্নত পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না।
নমুনা পরীক্ষা করে অন্য এক বিজ্ঞানী অনুমান করেন যে টুকরোগুলি কোনও প্রাণীর মাংস নয়। আদতে তা নস্টক নামের একটি সায়ানোব্যাকটেরিয়া।
বিজ্ঞানীর দাবি, সায়ানোব্যাকটেরিয়ার উপর বৃষ্টির জল পড়ার পর তা জেলির মতো আকার ধারণ করে। ওজন বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃষ্টির মতো আকাশ থেকে নীচে পড়তে শুরু করে।
কিন্তু কেনটাকিতে যে দিন মাংসের টুকরোগুলি আছড়ে পড়ে সে দিন বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা ছিল না বলে জানা গিয়েছিল। কৃষক দম্পতির দাবি ছিল, এই মাংসের টুকরোগুলি ‘ভগবানের দান’।
কেউ কেউ দাবি করেন, বাজ বা ঈগলের মতো কোনও বড় পাখির বমির ফলে মাংসের টুকরোগুলি ছড়িয়ে পড়ে।
কেনটাকি শহরে হঠাৎ করে মাংসের বৃষ্টি কেন শুরু হয়েছিল, হঠাৎ করে তা থেমেও গেল কেন সে রহস্য এখনও ভেদ করা যায়নি। দৈর্ঘ্যে ৫ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থে ৫ সেন্টিমিটার টুকরোগুলি আদতে কিসের মাংস তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গবেষকদের দাবি, ভারী টুকরোগুলি মাটিতে আছড়ে পড়ার পর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং শুকনো হয়ে যায়। তাই নমুনা পরীক্ষা করেও যে সঠিক ফল পাওয়া যাবে সেই আশাও ক্ষীণ হয়ে পড়ে। ‘মাংস বৃষ্টি’র রহস্য এখনও অন্ধকারেই ডুবে রয়েছে।