ব্রিটেনের সবচেয়ে দামি ইমারতের তালিকার শীর্ষে নাম লিখিয়ে ফেলেছে হ্যানওভার লজ। ভারতীয় শিল্পপতি রবি রুইয়া সাড়ে ১৪ কোটি ডলারে এই বাড়িটি কিনেছেন। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১২০০ কোটি টাকা।
গত কয়েক বছরে লন্ডনে যে সমস্ত বসতবাড়ি কেনাবেচা হয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে অর্থবহুল হল হ্যানওভার লজ। লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক এলাকায় ১৫০ পার্ক রোডে এই ইমারতটি অবস্থিত।
রাশিয়ার শিল্পপতি আন্দ্রে গনচারেঙ্কোর কাছ থেকে হ্যানওভার লজটি কিনেছেন রবি। রাশিয়ার একটি তেলের সংস্থার মালিক আন্দ্রে।
লন্ডনে ইতিমধ্যেই সম্পত্তি কিনে রেখেছেন লক্ষ্মী মিত্তল এবং অনিল আগরওয়ালের মতো ভারতীয় শিল্পপতিরা। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর হ্যানওভার লজ কিনে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রবি।
ধাতু, শক্তি, খনিজ সংক্রান্ত সমষ্টিগত সংস্থার মালিকানা রয়েছে রবি এবং তাঁর ভাই শশী রুইয়ার হাতে। সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হ্যানওভার লজের পুনর্নির্মাণের কাজ চলছিল বলে কম দামে এই ইমারতটি কিনতে পেরেছেন রবি। তবে হ্যানওভার লজ সৌন্দর্যের নিরিখে কোনও প্রাসাদের চেয়ে কম নয়, তা দাবি করেন অনেকেই।
১৮২৭ সালে ব্রিটিশ সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্যার রবার্ট আরবাথনটের জন্য হ্যানওভার লজটি বানিয়েছিলেন স্থপতি জন ন্যাশ।
রিজেন্ট পার্ক এলাকায় এই একটিমাত্র আবাসন রয়েছে, যার নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন জন।
১৮৩২ সালে হ্যানওভার লজের মালিকানা চলে যায় লর্ড টমাস কচরেনের কাছে। ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত হ্যানওভার লজেই ছিলেন টমাস। তার পরের বছর আবার মালিকানা হাত বদলায়।
১৮৪৮ সাল থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত ব্যাঙ্ককর্মী ম্যাথিউ উজিয়েলি এবং তাঁর বংশধরেরা হ্যানওভার লজে বাস করেছিলেন। ১৯০৯ সালে আবার নতুন করে বানানো হয় হ্যানওভার লজ। আকারে-আয়তনে অনেকটা বেড়ে যায় এই ইমারত। পুনর্নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্স।
পুর্ননির্মাণের পর ১৯১১ সাল থেকে হ্যানওভার লজে থাকতে শুরু করেন ডেভিড বেটি। ১৯২৫ সাল পর্যন্ত এই ইমারতেই ছিলেন তিনি। ১৯২৬ সাল থেকে হ্যানওভার লজে পরিবার-সহ থাকতে শুরু করেন আভা অ্যালিস মুরিয়েল অ্যাস্টর। তৎকালীন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন আভা।
১৯৪৮ সাল থেকে লন্ডনের বেডফোর্ড কলেজের অংশ হয়ে যায় হ্যানওভার লজ। নব্বইয়ের দশকে ফরাসি রাষ্ট্রদূতের আবাস হিসাবে এই লজটি ব্যবহৃত হতে থাকে।
১৯৯৪ সালে হ্যানওভার লজটি ১৫০ বছরের লিজ়ে কিনেছিলেন কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেতা এবং ব্যবসায়ী লর্ড বাগরি। পরবর্তী ১২ বছর ধরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইমারতটির পুনর্নির্মাণ করা হয়।
স্থপতি কুইনলান টেরি আবার হ্যানওভার লজের পুনর্নির্মাণ করেন। ২০০৯ সালে কাজটি সম্পূর্ণ হয়। এই ইমারতের মাটির তলায় একটি সুইমিং পুল ছিল যা পুনর্নির্মাণের পর বলরুমে পরিণত করা হয়। সেই সময় হ্যানওভার লজের আনুমানিক মূল্য ছিল ২০৫ কোটি টাকা।
২০১২ সালে লর্ড বাগরির কাছ থেকে হ্যানওভার লজটি কেনেন রাশিয়ার শিল্পপতি আন্দ্রে। ৯৮৪ কোটি টাকা দিয়ে ইমারতটি কিনেছিলেন আন্দ্রে।
২৬ হাজার বর্গফুটের হ্যানওভার লজটি নিজের মনের মতো করে সাজাতে চেয়েছিলেন আন্দ্রে। একটি বড় সুইমিং পুল, জিম, স্যালোঁ, সনা এবং স্টিম রুম, মাসাজ রুম, প্রেক্ষাগৃহ, ওয়াইন সেলার-সহ আলাদা ঘর তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন আন্দ্রে। চলতি বছরের ২২ জুলাই ব্রিটেনের শ্রেষ্ঠ ইমারত হ্যানওভার লজ কিনে চর্চায় এলেন ভারতীয় শিল্পপতি।