বৃহস্পতিবার কিভের উপর মস্কো আগ্রাসন অষ্টম দিনে পা দিল। তবে এখনও অবধি ইউক্রেন নিয়ে নিজেদের চিন্তাভাবনা স্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত করেনি ক্রেমলিন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে, ইউক্রেনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হতে পারেন, তা নিয়ে।
যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউক্রেনকে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন নেটো দেশ নিজেদের ‘বন্ধু’ দাবি করে অস্ত্র এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের জোগান দেওয়ার আশ্বাস দিলেও রাশিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সঙ্ঘাতে জড়াবে না বলেও স্পষ্ট করেছে।
পাশাপাশি সরাসরি সাহায্য করলে রাশিয়ার রোষে পড়বে ভেবেও পিছিয়েছে অনেক দেশ। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলনস্কি নিজেও সেনা সজ্জা গায়ে তুলেছেন। বন্দুক নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তবুও শেষরক্ষা হবে কি না এ নিয়ে ধন্দে রয়েছে সারা বিশ্ব।
রুশ হামলার মুখে পড়ে কিভ পতন হলে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের দায়িত্ব কে সামলাবেন, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জোর চাপানউতর।
তবে এই আবহে কিভ পতনের পর যাঁর নাম ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম উঠে আসছে, তিনি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ।
অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৫০ সালের ৯ জুলাই ইউক্রেনের ইয়েনাকিভ শহরে ইয়ানুকোভিচের জন্ম। তাঁর মা নার্স এবং বাবা ট্রেন চালক ছিলেন। মাত্র ২ বছর বয়সে মা-কে হারানো ইয়ানুকোভিচের শৈশব কাটে চরম দারিদ্রে।
১৯৬৭ সালে ডাকাতির অভিযোগে তিন বছর এবং ১৯৭০ সালে মারামারির কারণে ২ বছর জেলও খেটেছিলেন ইয়ানুকোভিচ।
তবে পরবর্তীকালে এই ঘটনাগুলিকে কৈশোর বয়সে করা ভুল হিসেবেই ব্যাখ্যা করেন তিনি।
১৯৭১ সালে ইয়েনাকিভের নগর আদালতের বিচারপতির ভাইঝি লুদিমিলা নাসটেনকো-কে বিয়ে করেন ইয়ানুকোভিচ। এর পর পড়াশোনা করতে তিনি ১৯৭৪ সালে ডোনেটত্স্ক পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হন। পড়তে পড়তে চাকরিও জুটে যায়।
কর্মক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করার পর ১৯৯৬ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন ইয়ানুকোভিচ। ইউক্রেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিওনিদ কুচমা তাঁকে ২০০২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। ২০০৫ অবধি তিনি সেই পদে ছিলেন। এর পর তিনি ২০০৬ সালে নির্বাচিত হয়ে আবার ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন।
অতঃপর, ২০১০-এ তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ে শামিল হন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন ইয়ানুকোভিচ। ২০১০ সালে ভিক্টর ইউসচেনকো প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরলে তিনি সেই আসনে বসেন।
কিন্তু ২০১৪ সালে ইউক্রেনের রাজনীতিতে গণবিক্ষোভ (মেইডেন রেভোলিউশন)-এর মুখে পড়ে রাজনৈতিক পালাবদল হয়। ইউক্রেন ছেড়ে রাশিয়া পালিয়ে যান ইয়ানুকোভিচ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।
ইয়ানুকোভিচ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে সাফ অস্বীকার করলে আন্দোলনকারীরা বন্দুক এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কিভের রাস্তায় নামেন।
২০১৩ থেকে লাগাতার গণ আন্দোলনের মুখে পড়ে সরকার ভেঙে পড়ে। পালিয়ে যান ইয়ানুকোভিচ।
ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গিয়ে পুতিনের ছত্রছায়ায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে ঠাঁই হয় ইয়ানুকোভিচের। পুতিনের বিশ্বস্ত হিসেবেও পরিচিত হন তিনি।
কিভ নিয়ে ক্রেমলিনের চিন্তাভাবনা স্পষ্ট না হলেও, পুতিন বর্তমান জেলনস্কি সরকারকে উচ্ছেদের পরিকল্পনা করছে বলেই মত অন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
জেলনস্কিকে সরিয়ে ইয়ানুকোভিচকে ইউক্রেনের গদিতে বসালে পুতিনের ইউক্রেন নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হবে বলেও মত সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
তবে সে ক্ষেত্রেও একটি প্রশ্ন থাকছে। ইয়ানুকোভিচকে জোর করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার শর্তে আপাতত ইউক্রেন বাসী তা মেনে নিলেও দীর্ঘমেয়াদে তাঁরা এই ব্যবস্থা মানবেন কি না, বলা কঠিন। রাশিয়ার আক্রমণের চোখরাঙানি কত দিন ইউক্রেনবাসী মেনে নেন, তা অবশ্য কেউই নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।