রাশিয়ার অপেরাশিল্পী আনা নেত্রেবকোর ভক্তদের জন্য দুঃসংবাদ! আপাতত আমেরিকার মেট্রোপলিটন অপেরা (সংক্ষেপে মেট)-র মঞ্চে এই সুপারস্টারকে দেখা যাবে না।
আগামী দুই মরসুমের অনুষ্ঠানের তালিকা থেকেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, এই নামেই বেশি পরিচিত উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় ধ্রপদী সঙ্গীতের মঞ্চ— মেট্রোপলিটন অপেরা।
শুধুমাত্র আমেরিকার মাটিতেই নয়। বিশ্বের বহু দেশে রাশিয়ার সরকারে বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হাজার হাজার মানুষ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমর্থক হওয়ার জেরেই যে আনার উপর কোপ পড়ল, তা-ই মনে করছেন অনেকে।
মেট-এর তরফ থেকেও তেমন ইঙ্গিত মিলেছে। তবে আনাকে বাদ দেওয়ার সরকারি কারণও খোলসা করেছেন মেট কর্তৃপক্ষ।
ইউক্রেনে যুদ্ধের উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতিতে ওই অপেরা সংস্থার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পুতিনের সমর্থক কোনও শিল্পীকেই তাঁরা আর মেট-মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে দেবেন না।
বরাবরই পুতিনের সমর্থক হিসাবে পরিচিত আনা। ২০১২ সালের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও পুতিনের হয়ে প্রচার করেছিলেন। এর দু’বছর পর আবারও নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেন আনা।
২০১৪ সালে ডনেৎস্কের একটি অপেরা হাউসে আর্থিক সাহায্য করার অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল, ওই শহরের নিয়ন্ত্রক রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পতাকা তুলে ধরেছেন আনা।
মেট-এর মঞ্চে গত ২০ বছর ধরে দু’শোরও বেশি অপেরায় শ্রোতাদের মাতিয়েছেন আনা। তবে বিশ্বের অন্যতম অপেরাশিল্পীকে মেট শর্ত দিয়েছিল, ইউক্রেনে যুদ্ধের পর পুতিনের থেকে তাঁর দূরত্ব বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়।
মেট-এর শর্ত মানতে নারাজ আনা। তার পরই তাঁকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মেট কর্তৃপক্ষ।
সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার পিটার গেব সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘মেট এবং অপেরার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হল। মেট-এর ইতিহাসে অন্যতম সেরা শিল্পী আনা। তবে ইউক্রেনে যে ভাবে নিরীহ মানুষদের হত্যা করছেন পুতিন, তাতে আর কোনও উপায় ছিল না।’’
শুধুমাত্র আমেরিকাতেই নয়। ইউক্রেনে যুদ্ধের পর বিশ্ব জুড়েই পুতিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরালো হচ্ছে। খোদ পুতিনের দেশেই তাঁর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার নাগরিক।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের পর যুদ্ধবিরোধী স্লোগান, প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করেছেন মস্কো-সহ রাশিয়ার একাধিক শহরে। পুতিনের নিজের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রতিবাদীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও দেখেছে বিশ্ব।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধ করারও অভিযোগ উঠেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর দু’সপ্তাহের মধ্যেই ২ মার্চ পর্যন্ত রাশিয়া জুড়ে সাড়ে ছ’হাজারেরও বেশি প্রতিবাদীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চলতি শতকের অন্যতম বড় যুদ্ধের প্রতিবাদ রাশিয়ার গণ্ডি ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা দেশেও। টোকিয়ো থেকে সিডনি, বুয়েনস আইরেস থেকে মেক্সিকো— পুতিনের সামরিক-স্বপ্নের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন অগণিত নাগরিক।
ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় দিনে জার্মানির বার্লিন শহরে প্রায় এক লক্ষের জমায়েত দেখা গিয়েছে। ব্রানডেনবার্গ গেট থেকে রাশিয়ান দূতাবাস পর্যন্ত মিছিল করে যায় জনতা। এর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধস্মারকে ভিড় করেছেন প্রতিবাদীরা।
মেট্রো স্টেশন বা শেল্টার হোমে আশ্রয় নেওয়া ইউক্রেনীয়দের ছবি তুলে ধরেছেন বহু প্রতিবাদী। বিক্ষোভ ছড়িয়েছে পোলান্ডের মাটিতেও।
ফ্লো ভার্গি নামে সে দেশের এক প্রতিবাদীর কথায়, ‘‘ইউক্রেন আমাদের প্রতিবেশী দেশ। ফলে সাংস্কৃতিক দিক থেকেও আমরা কাছাকাছিও রয়েছে। আজ ইউক্রেনে আক্রমণ হয়েছে, আগামিকাল হয়তো পোলান্ডেও হামলা চালানো হবে। ফলে পরস্পরের দিকে যতটা সম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।’’
চেক প্রজাতন্ত্রের বহু শহরে রাশিরার সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন সময়কার অবিভক্ত চেকোস্লোভাকিয়ায় রাশিয়ান হামলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রাগ বা বর্নো শহেরর বাসিন্দারা।
গত সপ্তাহান্তে টোকিয়োতেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। শহরের সিনঝুকু জেলায় মিছিলে প্রতিবাদীদের দাবি ছিল, অবিলম্বে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে রাশিয়ার সদস্যপদ খারিজ করে দেওয়া হোক। প্রতিবাদীদের অনেকেই জার্মানির একনায়ক হিটলারের সঙ্গে পুতিনের তুলনা টেনেছেন
পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে সিডনি বা শিকাগোতেও মোমবাতি মিছিল-সহ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মানুষজন। ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউস থেকে শুরু করে রাশিয়ান দূতাবাস— ইউক্রেনীয়দের সমর্থনে ভিড় করেছেন বহু প্রতিবাদী।
বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কও যুদ্ধ থামাতে পুতিনকে অনুরোধ করেছেন।
বিশ্ব জুড়ে রাশিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিভ। যার প্রভাবে রুশ শিল্পীকে সরতে হল আমেরিকান মঞ্চ থেকে।
কোন পথে এই সমস্যার সমাধান, তারও কোনও হদিশ পাচ্ছেন না কেউই। ফলত ইউক্রেনে অব্যাহত ধ্বংসলীলা।