ইউক্রেনের মাটিতে যুদ্ধ করতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গোষ্ঠীর অন্তত ২১ হাজার সদস্য। সম্প্রতি এমনই দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি।
জ়েলেনস্কির আরও দাবি, তাঁর প্রাণের থেকেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জীবনের আশঙ্কা বেশি। কারণ গোটা বিশ্বই পুতিনকে খুন করতে চায়। যদিও নিজের বক্তব্যের পক্ষে জোরালো যুক্তি দিতে পারেননি জ়েলেনস্কি।
ঘরেবাইরে কি সত্যিই বিপদের মুখে পুতিন? একদা তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা রুশ ধনকুবের তথা ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনের ‘রুদ্ররূপ’ দেখে তিনি কি গুটিয়ে গিয়েছেন? কোনও সংবাদমাধ্যমই অবশ্য এখনও পর্যন্ত এর জবাব দিতে পারেনি।
ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রপ্রধানের মতে, এই সুযোগ! দেশের মাটি থেকে হানাদারদের তাড়াতে এর সদ্ব্যবহার করতে হবে। শনিবার একটি সংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভূমি থেকে শত্রুদের হঠাতে এ সুযোগের ফায়দা তুলতে হবে।’’
কেন এ কথা বলছেন জ়েলেনস্কি? রবিবার দুপুর ২টোয় কিভের মাটিতে পা রেখেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজ়। তার আগের দিন সাংবাদিকদের কাছে জ়েলেনস্কি দাবি করে বসেন, ‘‘শুধুমাত্র ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলেই ২১,০০০ ওয়াগনারকে হত্যা করেছে আমাদের সেনাবাহিনী।’’
ইউক্রেনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ৮০ হাজার ওয়াগনার আহত বলেও দাবি জ়েলেনস্কির। তার কথায়, ‘‘ওয়াগনার আধাসামরিক বাহিনীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’’
যদিও কিসের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান দিয়েছেন জ়েলেনস্কি, সে তথ্য খোলসা করেননি তিনি। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের দাবিতে কতটা সত্যাসত্য রয়েছে? তা খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
‘সিএনএন’ জানিয়েছে, ওয়াগনার গোষ্ঠীর বেশির ভাগ সদস্যকে ‘দাগি অপরাধী’ বলে তকমা দিয়েছেন জ়েলেনস্কি। তাঁর মতে, ‘‘যাঁদের কিছুই হারানোর নেই।’’
ঘটনাচক্রে, ইউক্রেনের মাটিতে বসে জ়েলেনস্কির এ হেন একগুচ্ছ দাবি করার আগেই ঘরের মাঠে ‘বিপাকে’ পড়েছিলেন পুতিন। সপ্তাহখানেক আগে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে ‘রণং দেহি’ মূর্তি ধরেছিল প্রিগোঝিনের ওয়াগনার বাহিনী।
মস্কোর দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে রাশিয়ার দু’টি শহরের সেনাফাঁড়ির দখল নিয়েছিলেন প্রিগোঝিনের ‘ওয়াগনার মার্সিনারি গ্রুপ’। পুতিনের জন্য ইউক্রেনের মাটিতে যে ওয়াগনারেরা রুশ সেনার সঙ্গ দিয়েছে, তাঁরাই কেন ঘরের মাঠদখলে নেমেছিলেন?
প্রিগোঝিন দাবি করেছিলেন, তাঁর বাহিনীর উপর রুশ সেনাদের আক্রমণের জবাবেই ওই পদক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ ইউক্রেনের মাটিতে রুশদের সাফল্যের অন্যতম কারণ হিসাবে ওয়াগনার গোষ্ঠীর হাত কম নয়।
শেষমেশ অবশ্য বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কোর হস্তক্ষেপে ‘বিপদ’ এড়ানো গিয়েছে। মস্কো অভিমুখে রওনা দিয়েও ফিরে গিয়েছেন ওয়াগনাররা। প্রিগোঝিন প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, মস্কো দখলে রক্তপাত এড়াতেই এ পদক্ষেপ।
পুতিনকে এ অবস্থায় দেখে ইউক্রেনে বসে হুঙ্কার ছেড়েছেন জ়েলেনস্কি। ওয়াগনার সেনাদের প্রাণহানির দাবি করার পর তাঁর সংযোজন ছিল, ‘‘ওরা যুদ্ধ হারতে বসেছে। ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে ওদের আরও কোনও জয় হয়নি। সে জন্য দোষারোপ করতে কোনও এক জনকে খুঁজছে।’’
ওয়াগনার বাহিনী তথা রুশ সেনাদের উপর আঘাত হানতে অবশ্য ত়ড়িঘড়ি করতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন জ়েলেনস্কি। তাঁর দাবি, পুতিনের সেনাদের বিরুদ্ধে হামলায় কৌশলী পথ অবলম্বন করতে হবে। কারণ, প্রতিটি মিটার, কিলোমিটার দখলে জীবনের মূল্য চোকাতে হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের নাগরিকদের জীবন অমূল্য। সে জন্যই আমরা সাবধানী পদক্ষেপ করছি।’’
রুশদের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি পদক্ষেপে আমেরিকার থেকে ‘দু’মুখী’ সুবিধা হারাতে পারেন বলেও আশঙ্কা রয়েছে জ়েলেনস্কির। সম্প্রতি ইউক্রেন সফরে গিয়েছিলেন আমেরিকার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনিই প্রথম রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, যিনি প্রচারের মাঝেই ইউক্রেন সফরে পৌঁছন।
জুনের শেষে পেন্সের ওই সফরের উল্লেখ করে শনিবার সংবাদমাধ্যমে জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, আমেরিকার এবং রিপাবলিকান, এই দ্বিমুখী সমর্থন পেয়েছে ইউক্রেন।
স্বাভাবিক ভাবেই যুদ্ধের আবহে ‘দ্বিমুখী সমর্থন’ হারাতে চান না তিনি। জ়েলেনস্কির মন্তব্য, ‘‘ইউক্রেন সফরে এসেছেন মাইক পেন্স। আমেরিকান তথা রিপাবলিকান হিসাবে সমর্থনও জানিয়েছেন।’’
জ়েলেনস্কি আরও বলেন, ‘‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কয়েক জন রিপাবলিকানের কাছ থেকে বিপজ্জনক বার্তা পাচ্ছি। হয়তো তাঁদের (ইউক্রেনের প্রতি) ততটা সমর্থন নেই। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, দ্বিমুখী সমর্থন হারাতে চায় না ইউক্রেন।’’
রুশ সেনার হাতে তাঁর নিজের প্রাণের আশঙ্কা রয়েছে কি? সাংবাদিক সম্মেলনে এমন প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন জ়েলেনস্কি। তবে তাঁর দাবি, ‘‘আমার থেকেও এ ক্ষেত্রে পুতিনের বিপদ বেশি। কারণ, কেবলমাত্র রাশিয়াই আমার প্রাণনাশ করতে আগ্রহী। কিন্তু, পুতিনকে গোটা বিশ্বই খুন করতে চায়।’’ জ়েলেনস্কির এ হেন বিস্ফোরক মন্তব্যের পাল্টা হিসাবে এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে নিশ্চুপ পুতিন।