ফরাসি উপন্যাস ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটটি ডেজ়’-এর গল্প মনে আছে? কী ভাবে লন্ডনের বিজ্ঞানী ফিলিয়াস ফগ এবং তাঁর খানসামা পাসপোর্টাউট চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৮০ দিনের মধ্যে সারা পৃথিবী ঘুরে এসেছিলেন। ভ্রমণের সময় বহু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁদের।
জুল ভার্নের এই উপন্যাস ১৮৭২ সালে ফরাসি ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি জুল ভার্নের সৃষ্ট অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস। কিন্তু এ তো গেল উপন্যাসের কথা, সত্যিই কি ৮০ দিনে সারা বিশ্ব ঘুরে দেখা সম্ভব?
পুরোটা না হলেও খানিকটা সম্ভব করে দেখিয়েছেন আমেরিকার দুই বন্ধু। তবে জুল ভার্নের গল্পের নায়ক ফিলিয়াস এবং তাঁর খানসামার মতো তরতাজা এবং কমবয়সি নন তাঁরা, দু’জনেই অশীতিপর বৃদ্ধা।
এলি হ্যাম্বি এবং স্যান্ডি হ্যাজ়েলিপ। পেশায় এক জন তথ্যচিত্র পরিচালক, অন্য জন চিকিৎসক। দু’জনেই অশীতিপর।
আমেরিকার টেক্সাস থেকে যাত্রা শুরু করে মাত্র ৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণ করে ফেলেছেন ৮১ বছরের দুই বান্ধবী। ৮০ দিনে ৭টি মহাদেশের ১৮টি দেশ পরিদর্শন করেছেন দুই বন্ধু মিলে।
কিন্ত কী ভাবে যাত্রা শুরু করলেন দুই বন্ধু? ভ্রমণ সম্পর্কে সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’কে স্যান্ডি জানিয়েছিলেন, ৮০ বছর পেরোতেই বিশ্বভ্রমণের কথা তাঁদের মাথায় আসে। সেই মতোই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা।
স্যান্ডি বলেন, ‘‘আমরা আগেও একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছি। যখন ৭৬ বছর বয়স তখন আমরা আলোচনা করেছিলাম যে বিশ্বভ্রমণে যাব। ৮০ পেরোতেই আমরা ঠিক করি এ বার বেরোতেই হবে।’’
এলির কথায়, ‘‘আরও আগে বেরিয়ে পড়তাম। কিন্তু কোভিডের কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু কোভিড কমতেই আমরা ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম।’’
লন্ডন, জ়াঞ্জিবার, জ়াম্বিয়া, মিশর, নেপাল, বালি এবং ভারত ঘুরে ৮০ দিনের বিশ্বভ্রমণ শেষে আবার টেক্সাস ফিরে গিয়েছেন এলি এবং স্যান্ডি।
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি আন্টার্কটিকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন এলি এবং স্যান্ডি। এর পরে তাঁরা চিলি, আর্জেন্টিনা, ফিনল্যান্ড, সুমেরু, রোম, লন্ডন, জ়াঞ্জিবার, জ়াম্বিয়া হয়ে মিশরে পৌঁছন। পিরামিডের সামনে নানান ভঙ্গিমায় ছবিও তোলেন তাঁরা।
বিশ্বযাত্রার ৪০ দিন পার করে ভারতেও পা রেখেছিলেন বন্ধুদ্বয়। ভারতে থাকাকালীন দুই বান্ধবী তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে একটি ছবি তোলেন।
সেই ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, দুই প্রিয় বান্ধবী ভারতে এসে রিকশায় চেপে দিল্লির রাস্তায় ঘুরেছেন বলেও ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছেন।
ভারত ভ্রমণের পর তাঁরা নেপাল, জাপান হয়ে ইন্দোনেশিয়া ঘুরতে যান। এপ্রিলে তাঁরা পৌঁছে যান অস্ট্রেলিয়া।
দুই বন্ধু তাঁদের পুরো ভ্রমণ অধ্যায় ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছিলেন। সমাজমাধ্যমে তাঁরা সেগুলি পোস্টও করেন।
এলি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমরা যে সমস্ত দর্শনীয় স্থানে গিয়েছিলাম সেগুলি মনে রাখার মতো। তবে যাঁদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, তাঁদের কথা সব থেক বেশি মনে রেখেছি। আমাদের মনে হয় আমরা বিশ্বের সবচেয়ে ভাল এবং দয়ালু কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় করেছি। সারা পৃথিবীতে এখন আমাদের অনেক বন্ধু আছে যাঁদের আমরা খুব ভালবাসি।’’
৮০ দিনের বিশ্বভ্রমণকে কোনও ভাবেই অবসরযাপনের নাম দিতে নারাজ এলি এবং স্যান্ডি। তাঁদের কাছে এটি ছিল একটি ‘অ্যাডভেঞ্চার’। এলি এবং স্যান্ডি এ-ও প্রমাণ করেছেন যে, ভ্রমণ এবং অ্যাডভেঞ্চারের কোনও বয়স হয় না।