বৃহস্পতিবারই ৪,৪০০ কোটি ডলার দিয়ে টুইটার কিনে ফেলেছেন ধনকুবের তথা টেসলা ও স্পেসএক্সের কর্ণধার ইলন মাস্ক। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির আগেই চাকরি গিয়েছে পূর্বতন সিইও পরাগ আগরওয়ালের।
টুইটার হাতে পেয়েই মাস্কের নজর পড়েছে দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ‘ভেরিফায়েড’ অ্যাকাউন্টের দিকে। টুইটারে ব্লু-টিকধারী এবং সাধারণ উপভোক্তার মধ্যে যে ‘অকারণ পার্থক্য’ করা হয়, তা নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি তুলেছিলেন মাস্ক। এ বার তিনি হাজির সেই বৈষম্য ঘোচানোর দাওয়াই নিয়ে।
১ নভেম্বর, টুইটারের নতুন মালিক জানিয়ে দিলেন, এখন থেকে অ্যাকাউন্টে ‘ব্লু-টিক’ রাখতে খরচ করতে হবে গাঁটের কড়ি। এ জন্য প্রতি মাসে দিতে হবে ৮ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৬৬১ টাকা)। যা জায়গা বিশেষে বদলেও যেতে পারে।
এই খবর দিয়ে মাস্ক টুইটারে লেখেন, ‘‘টুইটারে ব্লু-টিকের জন্য যে পদ্ধতি চালু আছে তা স্বচ্ছ নয়। সকলকে আরও ক্ষমতা দেওয়া হোক। এখন থেকে ব্লু-টিকের জন্য প্রতি মাসে দিতে হবে ৮ ডলার।’’
তবে মাস্কের টুইটার কেনা নিয়ে নাটক কম হয়নি। কখনও বিক্রয়মূল্য নিয়ে বিবাদ, আবার কখনও অন্য কোনও বিষয়— বার বার মাইক্রো ব্লগিং সাইটের হাতবদল থমকে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার টুইটার কিনে ফেলেন মাস্ক।
টুইটার কিনতে মোট ৪,৪০০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে মাস্কের। কিন্তু এত টাকা মাস্ক একা নিজের পকেট থেকে দেননি। তাঁকে বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া এই চুক্তি সারতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বহু মানুষ, সংস্থা।
সৌদি ধনকুবের থেকে শুরু করে টুইটারেরই প্রাক্তন কর্মী তথা সহ-প্রতিষ্ঠাতা— কে নেই সেই তালিকায়। মূলত, তাঁদের সম্মিলিত প্রয়াসেই টুইটারের পাখিকে ‘মুক্ত’ করতে সক্ষম হলেন মাস্ক, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
মাস্ককে অর্থ যুগিয়ে টুইটার কিনতে সাহায্যকারীদের লম্বা তালিকায় প্রথম নামটি যেমন চমকপ্রদ, তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি হলেন, টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডরসি।
জ্যাকের পরই টুইটারের সিইও হন ভারতীয় বংশোদ্ভুত পরাগ আগরওয়াল। যদিও মাস্কের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরই টুইটার ছাড়তে হয় পরাগকে। এ জন্য তাঁকে যথেষ্ট আর্থিক ক্ষতিপূরণও দিতে হয়েছে মাস্ককে।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকেই টুইটার কেনার ইচ্ছেপ্রকাশ করে আসছিলেন মাস্ক। স্বভাবতই জল্পনা চলছিল মাস্কের হাতে টুইটার গেলে কর্মীস্বার্থ রক্ষিত হবে কি? সেই সময় থেকেই পরাগের চাকরি নিয়েও জল্পনা চলছিল। তার পর চুক্তি যত এগিয়েছে, ততই টুইটারে সময় সীমাবদ্ধ হয়েছে পরাগের।
জানা গিয়েছে, জ্যাক টুইটারের ১ কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি শেয়ার কিনেছেন। এ জন্য জ্যাককে খরচ করতে হয়েছে ৯৭.৮ কোটি ডলার। এর ফলে প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ করে নতুন সংস্থার ২.৪ শতাংশের মালিক এখন পরাগের উত্তরসূরি।
গত বছর নভেম্বরে জ্যাক টুইটারের সিইও পদ ছেড়ে দেন। তার জায়গায় দায়িত্বে আসেন পরাগ। মাক্সের চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর পরাগও অতীত হলেন টুইটারে।
জ্যাকের পর যে নাম তালিকায় হিল্লোল তুলেছে তা সৌদির এক ধনকুবেরের। নাম তাঁর যুবরাজ অলওয়ালিদ বিন তালাল। অলওয়ালিদ নিজে কিংডম হোল্ডিংস কোম্পানির মাধ্যমে টুইটারের সাড়ে তিন কোটি শেয়ার কিনেছেন।
শেয়ার প্রতি ৫৪ ডলার ২০ সেন্টের হিসাবে অলওয়ালিদের মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৯০ কোটি ডলার। এর ফলে সৌদি ধনকুবের এক লাফে হয়ে গিয়েছেন সংস্থার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী।
অলওয়ালিদ শুরু থেকেই টুইটার কেনার ব্যাপারে মাস্ককে উৎসাহ যুগিয়ে এসেছেন। এ বছর মে-তে মাস্ককে একজন দুর্দান্ত নেতা হিসেবেও অভিহিত করেছিলেন সৌদি যুবরাজ।
‘কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি’ কাতারের সার্বভৌম অর্থ ভান্ডারের একটি অনুসারী সংস্থা। এই সংস্থাও মাস্ককে টুইটার কেনার বিষয়ে অর্থ বিনিয়োগের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সংস্থা বিশ্বের বিভিন্ন লাভজনক প্রকল্পে এ ভাবেই বিপুল বিনিয়োগ করে থাকে। তবে টুইটারের মতো ‘মাইক্রো ব্লগিং সাইট’ অধিগ্রহণে এই সংস্থার উৎসাহ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। টুইটার কিনতে ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার ব্যয় করেছে ‘কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি’।