Julian Assange

জেলে বিয়ে, দূতাবাসে জন্ম সন্তানদের! আমেরিকার ‘কুকীর্তি’ ফাঁস করা অ্যাসাঞ্জের হতে পারত ১৭৫ বছর জেল

গোপন এবং স্পর্শকাতর নথি প্রকাশ করার উদ্দেশে ২০০৬ সালে উইকিলিক্‌‌স নামক সংস্থা তৈরি করেন অ্যাসাঞ্জ। সংস্থাটির তরফে প্রকাশ করা ভিডিয়োয় দেখা যায়, ইরাকে সাধারণ মানুষের উপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালাচ্ছে আমেরিকার সেনা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪ ১২:২৬
Share:
০১ ২১

১৪ বছরের আইনি যুদ্ধের অবসান। সোমবার ব্রিটেনের কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন আমেরিকার গোপন সামরিক ফাইল ফাঁস করায় অভিযুক্ত, উইকিলিক্‌‌স প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।

০২ ২১

আমেরিকার একটি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে নেন তিনি। আমেরিকা এবং ব্রিটেনের বোঝাপড়া অনুযায়ী, তার পরেই যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

Advertisement
০৩ ২১

আমেরিকার নেতৃত্বে ইরাক এবং আফগানিস্তানে হওয়া সংঘাত সংক্রান্ত পাঁচ লক্ষ গোপন সামরিক ফাইল ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছিল অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে। এই কারণে চরবৃত্তির অভিযোগে আমেরিকায় তাঁকে অপরাধী ঘোষণা করা হয়।

০৪ ২১

উইকিলিক্‌‌সের তরফে প্রকাশিত ওই গোপন নথিতে থাকা একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, ২০০৭ সালে ইরাকে আমেরিকার হেলিকপ্টার থেকে সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হচ্ছে। নিহত সাধারণ মানুষদের মধ্যে ছিলেন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকও। যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। তবে এই নথি প্রকাশ্যে আসার পরেই শোরগোল পড়ে যায় গোটা বিশ্বে।

০৫ ২১

২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে লন্ডনের জেলে বন্দি ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সুইডেনে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তোলেন উইকিলিক্‌‌সেরই প্রাক্তন দুই মহিলা কর্মী। অভিযোগ অস্বীকার করে চক্রান্তের কথা বলেছিলেন অ্যাসাঞ্জ। গ্রেফতারি এড়াতে দীর্ঘ সাত বছর লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।

০৬ ২১

১৯৭১ সালে অস্ট্রেলিয়ার টাউনস্‌ভিলে জন্ম অ্যাসাঞ্জের। বাবা-মা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বাবা-মায়ের নেশা কিংবা পেশা, কোনওটাতেই উৎসাহ ছিল না কিশোর অ্যাসাঞ্জের। বরং অল্প বয়সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।

০৭ ২১

গোপন এবং স্পর্শকাতর নথি প্রকাশ করার উদ্দেশে ২০০৬ সালে উইকিলিক্‌‌স নামক সংস্থা তৈরি করেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১০ সালের ৫ এপ্রিল সংস্থাটির তরফে প্রকাশ করা ভিডিয়োয় দেখা যায়, ইরাকের রাজধানী বাগদাদে সাধারণ মানুষের উপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালাচ্ছে আমেরিকার সেনা।

০৮ ২১

ওই বছরেরই ২৫ জুলাই আফগানিস্তানে যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকার ৯১ হাজার গোপন নথি প্রকাশ করে অ্যাসাঞ্জের সংস্থা। ওই বছরেরই অক্টোবরে ইরাকে যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকার চার লক্ষ গোপন নথি প্রকাশ্যে আসে। এই সমস্ত নথিতে বিদেশ রাষ্ট্রপ্রধানদের হালকা মেজাজে বলা একাধিক মন্তব্য প্রকাশ্যে চলে আসে। আলোড়ন পড়ে যায় আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্বে। রাতারাতি প্রচারের আলোয় চলে আসে উইকিলিক্‌‌স।

০৯ ২১

যৌন নিগ্রহের অভিযোগে সুইডেন অ্যাসাঞ্জকে দেশে ফেরাতে চেয়েছিল। কিন্তু লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বসেন তিনি। ২০১২ সালের অগস্ট মাসে অ্যাসাঞ্জের আর্জি মেনে নেয় ইকুয়েডর।

১০ ২১

২০১৭ সালে সুইডিশ তদন্তকারীরা হতোদ্যম হয়ে পড়ে জানান যে, যে হেতু অন্য দেশের দূতাবাসে ঢুকে অ্যাসাঞ্জকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব নয়, তাই তাঁরা যৌন নিগ্রহের তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন না। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে ইকুয়েডর হঠাৎই অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে।

১১ ২১

দূতাবাস থেকে বেরোতেই অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৯ সালের ১ মে থেকে পরবর্তী ৫০ সপ্তাহ পর্যন্ত তাঁর কয়েদবাসের সাজা ঘোষিত হয়। সাজার মেয়াদ শেষ হলেও সুইডেন এবং আমেরিকা অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণ করার দাবি জানায়।

১২ ২১

এক দিকে সুইডেন ফের যৌন নিগ্রহের তদন্ত শুরু করে। অন্য দিকে, চরবৃত্তি এবং দেশের গোপন তথ্য প্রকাশ করার দায়ে আমেরিকার বিচার বিভাগ ব্রিটেনকে অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণের বিষয়ে আর্জি জানায়। ২০১৯ সালেই প্রমাণের অভাবে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ সংক্রান্ত তদন্ত থামিয়ে দেয় সুইডেন।

১৩ ২১

কিন্তু ২০২০ সাল থেকে লন্ডনের একটি আদালতে আমেরিকায় অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। ২০২১ সালে এক ব্রিটিশ বিচারক জানান, আমেরিকায় অ্যাসাঞ্জকে পাঠানো ঠিক হবে না। যুক্তি হিসাবে বলা হয়, অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক নয়। তাই তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন।

১৪ ২১

যদিও ওই বছরেরই শেষ দিকে আমেরিকার আবেদনে সন্তুষ্ট হয় ব্রিটিশ আদালত। আমেরিকা জানায়, বন্দি করলেও অ্যাসাঞ্জের মানসিক এবং শারীরিক যত্ন নেওয়া হবে। ২০২২ সালে আমেরিকায় প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জকে আবেদন জানানোর অনুমতি দেয়নি ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট।

১৫ ২১

অন্য দিকে, আইনি ঝুটঝামেলার মধ্যে ২০২২ সালের ২৩ মার্চ জেলের ভিতরেই নিজের দীর্ঘ দিনের সঙ্গিনী স্টেলা মরিসকে বিয়ে করেন অ্যাসাঞ্জ। এই দম্পতির দুই শিশুসন্তান রয়েছে, যারা ইকুয়েডরের দূতাবাসে জন্মগ্রহণ করে।

১৬ ২১

২০২৩ সালে অ্যাসাঞ্জের আমেরিকায় প্রত্যর্পণের বিষয়ে সিলমোহর দেয় লন্ডন হাই কোর্ট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকায় প্রত্যর্পণ আটকাতে শেষ চেষ্টা করেন অ্যাসাঞ্জ। মার্চে অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ স্থগিত রেখে ব্রিটিশ আদালত জানায়, উইকিলিক্‌‌স প্রতিষ্ঠাতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না, এই বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে হবে আমেরিকাকে।

১৭ ২১

২০২২ সালে ব্রিটিশ সরকার আমেরিকায় তাঁর প্রত্যর্পণের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েই দিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে ব্রিটিশ আদালতের দুই বিচারক জানান, প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে পারবেন অ্যাসাঞ্জ। আর জুনে আমেরিকার বিচার বিভাগ এবং উইকিলিক্‌‌স জানায়, তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যাওয়ায় জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন অ্যাসাঞ্জ।

১৮ ২১

বর্তমানে ৫২ বছরের প্রৌঢ় অ্যাসাঞ্জকে গোপন তথ্য দিয়ে সাহায্য করায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন আমেরিকার সেনাবাহিনীর প্রাক্তন এক গোয়েন্দা চেলসি ম্যানিং। বিচারে তাঁর ৩৫ বছরের সাজা হয়। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হয়ে অবশ্য সাজার মেয়াদ কমান। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে ফের চরবৃত্তির মামলাগুলি নতুন করে শুরু করার নির্দেশ দেন।

১৯ ২১

বোঝাপড়া অনুযায়ী, গোপন তথ্য ফাঁস নিয়ে নিজের দোষ স্বীকার করায় ৬২ মাস, অর্থাৎ প্রায় ৫ বছর জেলেই থাকতে হবে অ্যাসাঞ্জকে। কিন্তু ইতিমধ্যেই ব্রিটেনের জেলে এই মেয়াদ পূরণ করে ফেলেছেন তিনি। তাই নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় উড়ে যেতে আর মানা নেই অ্যাসাঞ্জের।

২০ ২১

আমেরিকার তরফে দাবি করা হয়েছিল, তাদের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ্যে এনে অপরাধ করেছেন অ্যাসাঞ্জ। এই বিষয়ে আমেরিকার কঠোর আইনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, আমেরিকায় অ্যাসাঞ্জের ১৭৫ বছরের জেল হতে পারে। আপাতত সেই সব সম্ভাবনায় জল পড়ল। তা ছাড়া, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপরেও এই মর্মে চাপ বাড়ছিল যে, এত পুরনো একটি মামলাকে এ বার তুলে নিক ওয়াশিংটন।

২১ ২১

তবে কোন শর্তে সন্ধি এল, তা এখনও পুরোপুরি প্রকাশ্যে আসেনি। উইকিলিক্‌‌স জানিয়েছে, এই বিষয়ে পরে তারা সবিস্তারে জানাবে। সংস্থাটির তরফে ধন্যবাদজ্ঞাপক একটি পোস্ট করে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, “এটা তৃণমূল স্তরের সংগঠক, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবি জানানো মানুষজন এবং সব ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তির বিশ্বব্যাপী প্রচারের ফল। সবাইকে ধন্যবাদ।”

সব ছবি: সংগৃহীত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement