পৃথিবীর বাতাস যেন ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠছে। দু’দণ্ড শ্বাস নেওয়ারও জো নেই! চারদিকে শুধুই দূষণ। বিশ্বের বাকি দেশগুলোর মতো ভারতের বাতাসও বিশুদ্ধ নয়। শীতকালে রাজধানী নয়াদিল্লিতে ধোঁয়াশা যার অন্যতম দৃষ্টান্ত। বিষাক্ত বাতাসের কারণে রোগজ্বালা লেগেই রয়েছে। এমন কোনও এলাকা রয়েছে, যেখানে বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া যাবে? ভাবছেন নিশ্চয়ই, এমন বাতাস কি আর পাওয়া যাবে এই দূষিত দুনিয়ায়!
প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে চান? অথচ নির্মল বাতাসই যেন এই দুনিয়ায় দুর্লভ। তবে চাইলে বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিতে পারবেন আপনি। এ জন্য যেতে হবে অস্ট্রেলিয়ায়।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে তাসমানিয়ার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে একটি উপদ্বীপ। যার নাম কেপ গ্রিম। এই এলাকায় যেতে পারলেই নির্মল বাতাসে শ্বাস নিতে পারবেন।
ওই এলাকায় বায়ুর গুণগত মান পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। সেখানে বাতাসের গুণগত মান যাচাই করে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যে, কেপ গ্রিমে সবচেয়ে নির্মল বাতাস রয়েছে।
কেপ গ্রিমকে ‘পৃথিবীর কিনারা’ বলা হয়। নির্জন এলাকা। জনবসতি নেই। ওই এলাকাতেই বইছে বিশুদ্ধ বাতাস।
নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়া যায়— এই কারণেই বহু মানুষের প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে কেপ গ্রিম। তবে যে কেউ চাইলেই ওই বিশুদ্ধ এলাকায় যেতে পারেন না।
জনবসতি নেই ওই এলাকায়। দুর্গম এলাকা। সে কারণে সব পর্যটকেরা কেপ গ্রিম যেতে পারেন না। তা ছাড়া রয়েছে হাওয়ার দাপট। খুব জোরে হাওয়া বয় সেখানে। হাওয়ার তীব্রতায় উড়েও যেতে পারেন।
আন্টার্কটিকার অপরিশোধিত বাতাস বইছে ওই এলাকায়। হাওয়ার তীব্রতা ঘণ্টায় ১৮০ কিমি। ফলে ওই এলাকা অত্যন্ত বন্ধুর। তাই খুব কম সংখ্যক পর্যটকই সেখানে পৌঁছতে পারেন।
কেন কেপ গ্রিমের বাতাস এত বিশুদ্ধ? আসলে ওই এলাকায় জনবসতি নেই। নির্জন এলাকা। তা ছাড়া খুব কম সংখ্যক মানুষই যান। ফলে দূষণ ছড়ায় না।
কমনওয়েলথ সায়েন্টেফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজ়েশন (সিএসআইআরও)-এর গবেষক অ্যান স্টেভার্ট জানিয়েছেন, দুষণসৃষ্টিকারী গ্যাস এবং উপাদান কেপ গ্রিমের বাতাসে মেশে। কিন্তু ওই উপদ্বীপটির অবস্থান সাগরের এমন একটি এলাকায়, যেখানে সমুদ্র থেকে প্রতিনিয়ত জোরে হাওয়া বয়। ফলে ওই হাওয়ার কারণেই কেপ গ্রিমের বাতাস এত বিশুদ্ধ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই এলাকায় মানুষের বসবাস নেই। তাই কেপ গ্রিমের বাতাসে দূষিত হয়নি। যদি জনবসতি থাকত, তা হলে হয়তো সেখানকার বাতাস এত বিশুদ্ধ থাকত না।
দূষণ নিয়ে জেরবার সকলে। দূষণ মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বিশ্ব জুড়েই বাতাসের গুণগত মান নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। দূষণের মাত্রা কমিয়ে বাতাসের গুণগত মান যাতে ঠিক রাখা হয়, সে দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
বাতাসে দূষণ ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপও করা হচ্ছে। কিন্তু নির্মল বাতাস পাওয়াই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেপ গ্রিমে বিশুদ্ধ বাতাসের হদিস মেলায় খানিকটা স্বস্তি পেয়েছেন গবেষকরা।
তবে কেপ গ্রিমের মতো এলাকায় যে কেউ যেতে পারবেন না। ফলে চাইলে যে সহজেই সকলে বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিতে পারবেন, তেমনটা কিন্তু নয়। তা হলে উপায়?
বিশ্ব জুড়ে দূষিত এলাকায় এই নির্মল বাতাস পৌঁছেও দেওয়া হচ্ছে। কী ভাবে? তাসমানিয়ার ওই বাতাস বোতলে ভরে তা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি ক্যানে প্রায় ১৩০ বার বিশুদ্ধ বাতাসের শ্বাস নেওয়া যাবে।