বছরশেষে জমে উঠেছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ‘বক্সিং ডে’ টেস্ট। প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড় গড়ে নীল ব্রিগেডের উপর কিছুটা চাপ তৈরি করেছে ক্যাঙারু বাহিনী। এই আবহে বছরের সেরা টেস্ট একাদশ বেছে নিলেন জনপ্রিয় ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে। আশ্চর্যজনক ভাবে সেই টিমে জায়গা পাননি বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মা।
হর্ষের বেছে নেওয়া বছরের সেরা টেস্ট একাদশে অবশ্য রয়েছেন তিন জন ভারতীয়। এঁদের মধ্যে এক জন ওপেনিং ব্যাটার। বাকি দু’জনের মধ্যে রয়েছেন ফাস্ট বোলার এবং স্পিনার অলরাউন্ডার। পাকিস্তান থেকে এই টিমে জায়গা পেয়েছেন মাত্র এক জন।
ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার ভোগলে তাঁর দলে ওপেনার হিসাবে রেখেছেন উদীয়মান ভারতীয় খেলোয়াড় যশস্বী জয়সয়ালকে। ২২ বছরের এই বাঁহাতি ব্যাটারের জন্ম উত্তরপ্রদেশে। ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ এবং অনূর্ধ্ব ২৩ দলেও ছিলেন তিনি।
গত বছর সিনিয়র দলে জায়গা পান যশস্বী। এখনও পর্যন্ত দেশের হয়ে ১৭টি টেস্টে ৩২ ইনিংস ব্যাট করেছেন তিনি। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১,৬০০ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ২১৪। টেস্ট কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত মোট দু’বার অপরাজিত থেকেছেন তিনি। টিম ইন্ডিয়ার এই তারকা ক্রিকেটারের গড় ৫৩.৩৩।
যশস্বীর সঙ্গে ওপেনিং স্লটে আর এক বাঁহাতিকে রেখেছেন হর্ষ। তিনি হলেন ব্রিটিশ খেলোয়াড় বেন ডাকেট। ২০১৬ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। দলের স্বার্থে মাঝেমধ্যে উইকেটরক্ষকের ভূমিকাতেও তাঁকে দেখা গিয়েছে। আবার প্রয়োজনে উইকেটে হাতও ঘুরিয়েছেন তিনি। বেন অবশ্য বল করেন ডান হাতে।
এখনও পর্যন্ত মোট ৩২টি টেস্ট খেলেছেন বেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ২,২৭০ রান। টেস্টে বেনের শতরান এবং অর্ধশতরানের সংখ্যা যথাক্রমে ৪ এবং ১৩। সর্বোচ্চ করেছেন ১৮২ রান। তাঁর গড় প্রায় ৪০ (৩৯.৮২)।
ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বরে হর্ষের পছন্দ আর এক অভিজ্ঞ ইংরেজ ক্রিকেটার জো রুট। ২০১২ সালে ভারতের বিরুদ্ধেই টেস্টে অভিষেক হয় তাঁর। এর পাঁচ বছরের মাথায় (২০১৭) টেস্ট দলের অধিনায়ক হন তিনি। তবে বর্তমানে অবশ্য জাতীয় দলের হয়ে আর অধিনায়কত্ব করছেন না রুট।
ডানহাতি ব্যাটার রুট এখনও পর্যন্ত ১৫২ টেস্টে করেছেন ১২ হাজার ৯৭২ রান। তাঁর ব্যাটিং গড় ৫০.৮৭। রুটের টেস্ট শতরানের সংখ্যা ৩৬। অর্ধশতরান করেছেন ৬৫টি। সর্বোচ্চ ২৬২ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। টেস্টে ৭১ উইকেট পেয়েছেন তিনি।
হর্ষের বছরের সেরা টেস্ট একাদশের মিডল অর্ডারে ইংরেজ ক্রিকেটারদের ছড়াছড়ি। চার নম্বর ডানহাতি অলরাউন্ডার হ্যারি ব্রুককে ব্যাট করতে পাঠাবেন তিনি। ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর। ঘরোয়া ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ারের হয়ে খেলেন তিনি।
২৪ টেস্ট ম্যাচ খেলা ব্রুক ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে করেছেন ট্রিপল সেঞ্চুরিও। টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ৩১৭। মোট ২,২৮১ রান রয়েছেন এই ইংরেজ খেলোয়াড়। ৮টি শতরান এবং ১০টি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর। ব্রুক অবশ্য টেস্টে বল হাতে তেমন সাফল্য পাননি। তাঁর বোলিং গড় ৫০।
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার কামিন্দু মেন্ডিসকে পাঁচ নম্বরে রেখেছেন ভোগলে। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে অভিষেক হয় তাঁর। ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসাবে দলে জায়গা পান তিনি। ব্যাটিং ও বোলিং দুটোই বাঁ হাতে করেন মেন্ডিস।
মাত্র ৮টি ম্যাচ খেলা লঙ্কা ক্রিকেটার মেন্ডিসের টেস্ট গড় কিন্তু নজরকাড়া। ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে ৫টি শতরান এবং ৪টি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর। টেস্টে মেন্ডিসের সর্বোচ্চ স্কোর ১৮২। তাঁর ব্যাটিং গড় ৯১.২৭। অন্য দিকে, মোট ৯৬ ওভার বল করে তিন উইকেট নিয়েছেন তিনি।
পাক উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মহম্মদ রিজ়ওয়ানকে ছ’নম্বরে রেখেছেন হর্ষ। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে টেস্টে অভিষেক হয় তাঁর।
পেশোয়ারে জন্ম হওয়া রিজ়ওয়ানের টেস্ট কেরিয়ারে রয়েছে মোট ৩টি শতরান এবং ১০টি অর্ধশতরান। তাঁর ব্যাটিং গড় ৪১.৮৫। টেস্টে মোট ২,০০৯ রান করেছেন তিনি। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে ৩৫টি ম্যাচ খেলা রিজ়ওয়ানের সর্বোচ্চ স্কোর ১৭১।
ভারতীয় দলের বাঁহাতি অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাডেজা হর্ষের টিমে জায়গা পেয়েছেন সাত নম্বরে। ২০১২ সাল থেকে জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ইংরেজদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন জাডেজা। বক্সিং ডে টেস্টেও দলে রয়েছেন তিনি।
পাঁচ দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭৭টি ম্যাচ খেলা জাডেডার দখলে রয়েছে ৪টি শতরান। তাঁর ব্যাট থেকে অর্ধশতরান এসেছে ২১টি। এই ফরম্যাটে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ১৭৫। টেস্টে মোট ৩,৩৩৫ রান করেছেন গুজরাতের এই ক্রিকেটার। তাঁর ব্যাটিং গড় ৩৫.৭২। বাঁহাতি স্পিনের ঘূর্ণিতে ৩১৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
বছরের সেরা টেস্ট দলে মোট তিন জন সিমার রেখেছেন জনপ্রিয় ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার। সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে গাস অ্যাটকিনসনের নাম। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা এই ডানহাতি পেসার এখনও পর্যন্ত ১১টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। এ বছরের ১০ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে অভিষেক হয়েছে তাঁর।
ছোট্ট টেস্ট কেরিয়ারে ৫২ উইকেট পেয়েছেন অ্যাটকিনসন। তাঁর বোলিং গড় ২২.১৫। ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন তিন বার। শেষের দিকে নেমে ঝোড়ো ব্যাটিং করতে পারেন এই ইংরেজ ক্রিকেটার। টেস্টে একটি শতরানও রয়েছে তাঁর (১১৮)। মোট ৩৫২ রান এসেছে গাসের ব্যাট থেকে। ব্যাটিং গড় প্রায় ২৪।
এই দলে জায়গা পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডানহাতি জোরে বোলার কাগিসো রাবাডা। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে ইতিমধ্যেই ৩১৯ উইকেট পেয়েছেন তিনি। তাঁর বোলিং গড় ২১.৭০। এক ইনিংসে ১৬ বার পাঁচ উইকেটে নিয়েছেন প্রোটিয়া পেসার।
চলতি বছরে স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন ভারতের বোলিং বিভাগের স্তম্ভ জসপ্রীত বুমরাহ। বক্সিং ডে টেস্টের আগের ম্যাচে একরকম তাঁর কাঁধেই ভর করে হার বাঁচাতে পেরেছে ভারত। বর্তমানে টিম ইন্ডিয়ার সহ-অধিনায়কের ভূমিকায় রয়েছেন তিনি।
দেশের হয়ে ৪৩টি আন্তর্জাতিক পাঁচ দিনের ম্যাচ খেলেছেন বুমরাহ। ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে তাঁর শিকার ১৯৭। ইনিংসে পাঁচ উইকেটে পেয়েছেন ১২ বার। তাঁর বোলিং গড় ১৯.৫২। বুমরাহর এখনও পর্যন্ত সেরা বোলিং ২৭/৬। তাঁকেই এই দলের অধিনায়ক বেছেছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ভোগলে।
আশ্চর্যজনক ভাবে বছরের সেরা একাদশে এক জনও অসি খেলোয়াড়কে রাখেননি হর্ষ। টেস্ট খেলিয়ে দলগুলির মধ্যে নিউ জ়িল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের কোনও ক্রিকেটারও তাঁর টিমে জায়গা পাননি।