হামাস-ইজ়রায়েল সংঘাত নিয়ে কার্যত দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে গোটা বিশ্ব। ভারতের ঘরোয়া রাজনীতিতেও এই নিয়ে দেখা গিয়েছে আড়াআড়ি বিভাজন।
এই আবহে ইজ়রায়েলের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা করে চলেছে কেরলের একটি শহর। কারণ সেই শহরেই প্রতি দিন তৈরি হয় ইজ়রায়েলি পুলিশের পোশাক। আট বছর ধরে এই শহরের এক বস্ত্র প্রতিষ্ঠান পোশাকের জোগান দিচ্ছে ইজ়রায়েলি পুলিশকে।
উত্তর কেরলের কুন্নুর শহর দীর্ঘ দিন ধরেই হস্তশিল্পের কারণে বিখ্যাত। শহরের আনাচকানাচে প্রতিনিয়ত কাপড় তৈরি করে চলেছেন বস্ত্রশিল্পীরা।
এই শহরেই সরকারি উদ্যোগে তৈরি হওয়া বস্ত্রশিল্পের হাব কিনফ্রা পার্কে রয়েছে ‘মারিয়ান অ্যাপারেল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা। সংস্থার মালিক কেরলেরই ভূমিপুত্র, অধুনা মুম্বইনিবাসী থমাস ওলিক্কল।
সংস্থাটিতে রয়েছে দেড় হাজার জনেরও বেশি প্রশিক্ষিত বস্ত্রশিল্পী। স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের পাশাপাশি সংস্থাটির তৈরি পোশাকের ক্রেতা ইজ়রায়েলি সেনাও।
আট বছর আগে ইজ়রায়েলের তরফেই যোগাযোগ করা হয় সংস্থাটির সঙ্গে। সে দেশের বেশ কয়েক জন প্রতিনিধি ১০ দিন কেরলে থেকে সংস্থার কাজকর্মের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখেন।
খুঁটিয়ে দেখা হয় কাপড়ের মান, নকশা, এমনকি বস্ত্রশিল্পীদের দক্ষতাও। তার পরই সংস্থাটিকে পুলিশের পোশাক তৈরির বরাত দেয় ইজ়রায়েল।
প্রতি বছর ইজ়রায়েল পুলিশের জন্য এক লক্ষ পোশাক পাঠায় ‘মারিয়ান অ্যাপারেল প্রাইভেট লিমিটেড’। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের আর এক দফায় তেল আভিভে পোশাক পাঠাবে সংস্থাটি।
সংস্থার মালিক ওলিক্কলের জন্ম কেরলের ইদুক্কি জেলায়। এক সময় বিড়ি শিল্পের জন্য বিখ্যাত কান্নুরে বহু মানুষ বিড়ি বাঁধার কাজে যুক্ত ছিলেন। পরে এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বহু মানুষ কাজ হারান।
এই কর্মহীন স্থানীয় মানুষদের প্রশিক্ষণ দিয়েই বস্ত্রশিল্পে নিযুক্ত করেন ওলিক্কল। ২০০৬ সালে কেরল সরকারের সহযোগিতায় তৈরি করেন ‘মারিয়ান অ্যাপারেল প্রাইভেট লিমিটেড’।
একটি মালয়ালম টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওলিক্কল জানান, ইজ়রায়েলের পুলিশকে প্রতি বছর পোশাক সরবরাহ করতে পারার জন্য তিনি এবং তাঁর সংস্থার প্রতিটি কর্মী গর্বিত। গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইজ়রায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার পরেও নতুন বরাত পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংস্থার দফতরে তাই এখন ব্যস্ততার সঙ্গে ইজ়রায়েল পুলিশের হালকা নীল রঙা, ফুল হাতা জামা তৈরির কাজ চলছে। পোশাক তৈরির পাশাপাশি নির্দিষ্ট লোগো সেলাই করে বসানোর কাজও করে থাকেন সংস্থার কর্মীরা।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে ওলিক্কল জানিয়েছেন, নভেম্বরের শেষেই পোশাক সেলাইয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে। ডিসেম্বরে পোশাক পাড়ি দেবে ইজ়রায়েলে।
ইজ়রায়েলি পুলিশকে পোশাকের জোগান দেওয়ার পাশাপাশি স্কুলপড়ুয়াদের পোশাক, চিকিৎসকদের বিশেষ পোশাক এমনকি কর্পোরেট দুনিয়ার মানুষদের জন্যও পোশাক তৈরি করে থাকে ওলিক্কলের সংস্থা।
তবে ওলিক্কল জানিয়েছেন, ইজ়রায়েল পুলিশ গুণগত মানের সঙ্গে বিন্দুমাত্র আপস করতে নারাজ। পোশাকের রং, সেলাই খতিয়ে দেখেই তারা নাকি বরাতের বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে থাকে।
যুদ্ধের কারণে অতিরিক্ত বরাত পেলেও ওলিক্কল চান, চলতি সংঘাত দ্রুত বন্ধ হোক। নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রাণহানি বন্ধ হোক।