ঈশ্বর কোথায়? এই প্রশ্ন তো দূর, ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়েই সংশয় রয়েছে অনেকের। নাস্তিকেরা বলে থাকেন, ঈশ্বর মানুষের বিশ্বাস আর ভরসাতেই স্থায়ী। আদৌ তেমন কোনও দৈবিক শক্তির অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই।
বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের ঈশ্বর সংক্রান্ত বিশ্বাসের সরাসরি বিরোধ রয়েছে। বিজ্ঞান যুক্তির কথা বলে। সেই যুক্তির প্রাবল্যে অন্ধবিশ্বাসের কোনও স্থান নেই। তাই খাতায়কলমে ঐশ্বরিক শক্তির কথা স্বীকার করে না বিজ্ঞান।
তবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গূঢ় রহস্য নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে সেই বহুচর্চিত ঈশ্বরের কাছেই নাকি প্রায় পৌঁছে গিয়েছিলেন সার্বিয়ান আমেরিকান বিজ্ঞানী তথা প্রযুক্তিবিদ নিকোলা টেসলা।
১৮৫৬ সালে অধুনা ক্রোয়েশিয়ায় জন্ম টেসলার। ছোট থেকেই বিজ্ঞান, বিশেষত অঙ্কে তাঁর আগ্রহ ছিল। সংখ্যা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে ভালবাসতেন টেসলা। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে গবেষণার কাজে মন দেন তিনি।
অস্ট্রিয়া থেকে ১৮৮৪ সালে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন টেসলা। সেখানে বিজ্ঞানী টমাস এডিসনের সঙ্গে কিছু দিন কাজ করেন। ক্রমে এডিসনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে উঠে আসে টেসলার নাম।
বিজ্ঞানী জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে নানা নিত্যনতুন উদ্ভাবন করেছিলেন টেসলা। তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে আছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, চমকপ্রদ আবিষ্কার। কিন্তু টেসলার জীবনের অনেকাংশই রহস্যে মোড়া।
মূলত, বিদ্যুতের শক্তি নিয়ে চর্চা করেছিলেন টেসলা। তারের সাহায্য ছাড়াই বিদ্যুৎ পরিবহণ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন তা নিয়ে। বিদ্যুৎকে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন।
বিজ্ঞানী টেসলার নামের সঙ্গে অঙ্কের তিনটি সংখ্যার বিশেষ যোগ রয়েছে। ৩, ৬, এবং ৯— এই তিনটি সংখ্যা নিয়ে চর্চা করতেন টেসলা। এগুলি দিয়ে তিনি এমন কিছু আবিষ্কার করেছিলেন, যা বিজ্ঞানের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে।
টেসলার মৃত্যুর পর তাঁর ব্যক্তিগত কিছু জার্নাল পড়ে দেখা হয়। সেখান থেকে জানা যায়, প্রায়ই টেসলা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় ধরে নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করতেন। তাতেই বার বার ফিরে আসত ৩, ৬ এবং ৯।
এই কাজের অতিরিক্ত সময়ে খাতায় তিনটি সংখ্যা মাঝেমাঝেই লিখতেন টেসলা। নিজেকে বিশ্রাম নেওয়ার কথা তিনি এই সংখ্যার মাধ্যমে মনে করিয়ে দিতেন বলে প্রাথমিক ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
টেসলার কাছে এই সংখ্যা তিনটির গুপ্ত কোনও অর্থ ছিল বলে মনে করা হয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্যের তালা তিনি এই তিন সংখ্যার মাধ্যমেই খুলে ফেলতে চেয়েছিলেন।
অঙ্কের ফিবুনাচি সিকোয়েন্সের সংখ্যাগুলির সঙ্গে টেসলার ৩, ৬, ৯-এর সম্পর্ক ছিল বলে মনে করেন কেউ কেউ। আবার, অনেকের ধারণা, টেসলা কোনও গোপন আবিষ্কারের কাজ করছিলেন। তারই সূত্র ৩, ৬, ৯।
তিনটি সংখ্যার মধ্যে অতিপ্রাকৃত কোনও ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করতেন বিজ্ঞানী টেসলা। ১৯৩১ সালের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘৩, ৬ এবং ৯ সংখ্যাগুলির ক্ষমতা জানলেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের চাবি আপনার হাতে চলে আসবে।’’
অনেকের মতে, তিনটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নিয়ে টেসলার এই আগ্রহ নিছক গণিতের কৌতূহল নয়। তিনি আরও উচ্চ পর্যায়ের কোনও শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছিলেন। ৩, ৬, ৯ সেই শক্তির কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, টেসলা আসলে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছতে চেয়েছিলেন। সেই পথ আবিষ্কারও করে ফেলেছিলেন। পথের সঙ্কেত ছিল ৩, ৬ এবং ৯।
অনেকে আবার এই ঈশ্বরের তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। তাঁরা মনে করেন, অঙ্কের তিনটি সংখ্যার মাধ্যমে আসলে শক্তির নতুন কোনও উৎসের সন্ধান করছিলেন টেসলা।
৩, ৬, ৯ নিয়ে টেসলা কোন রহস্যের আঁতুড়ঘরে পৌঁছতে চেয়েছিলেন, তা আর জানা যাবে না। কারণ, তিনি নিজে কিছুই প্রকাশ করেননি। জীবদ্দশায় নিজের এই আবিষ্কারের কথা জানিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি।
টেসলার মৃত্যুও ছিল রহস্যে ঘেরা। ১৯৪৩ সালের ৭ জানুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ হিসাবে উঠে আসে করোনারি থ্রম্বোসিস। হৃদ্পিণ্ডের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল তাঁর।
শোনা যায়, শেষ বয়সে অর্থকষ্টে ভুগছিলেন টেসলা। ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন। নিউ ইয়র্ক শহরের একটি সস্তার হোটেলে ছিলেন তিনি। ঘরের বাইরে ‘ডু নট ডিসটার্ব’-এর সাইনবোর্ড টাঙানো ছিল।
ঘর থেকে টানা দু’দিন কোনও সাড়া না পেয়ে নির্দেশ উপেক্ষা করেই দরজা ভেঙেছিলেন এক হোটলকর্মী। ভিতর থেকে বিজ্ঞানীর নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। নিজের অগুন্তি আবিষ্কার, ৩, ৬, ৯-এর রহস্য সঙ্গে নিয়েই চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেন টেসলা।