বাবা-মা দু’জনেই বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রী। তাঁর নিজেরও বলিউডে হাতেখড়ি এক সুপারস্টারের নায়িকা হিসাবে। তার পরও বলিউডের দরিয়ায় তরতরিয়ে এগোতে পারেনি এই অভিনেত্রীর পানসি। কিছুটা ভাগ্যের ফেরে কিছুটা পরিস্থিতির কারণে তিনি এতটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন যে, সিনেমার দুনিয়া ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হন তিনি।
নাম সাবিহা। বলিউড তিনি অক্ষয় কুমার, আয়েষা জুলখাদের সমসাময়িক। একসঙ্গে সিনেমাও করেছেন।
১৯৯২ সালে অক্ষয় তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম হিট ছবি ‘খিলাড়ি’র প্রস্তাব পান। ওই ছবি অক্ষয়ের অভিনয় জীবনটাই বদলে দেয়। অক্ষয়ের সঙ্গে ওই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন আয়েষা এবং দীপক তিজোরি। সাবিহা সেই খিলাড়িরই দ্বিতীয় মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবির আরও এক নায়িকা ছিলেন তিনি।
খিলাড়ি শুধু অক্ষয়কে নয়, ছবির অন্য নায়ক-নায়িকাদেরও জনপ্রিয় করে তুলেছিল। শুধু সাবিহার ভাগ্যেই শিকে ছেঁড়েনি। খিলাড়ি বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য পেলেও সাবিহার হাতে তেমন ছবির প্রস্তাব আসেনি।
অথচ খিলাড়ি মুক্তি পাওয়ার ঠিক চার বছর আগে পরিস্থিতি ছিল একেবারে উল্টো। ১৯৮৮ সালে তখন সাবিহার প্রথম ছবি মুক্তি পেয়েছে সদ্য।
ছবির নাম ‘আনোখা রিস্তা’। নায়ক রাজেশ খন্না। তাঁরই নায়িকা হয়েছিলেন সাবিহা। অভিনেত্রী স্মিতা পাতিল ছিলেন সাবিহার সহ-অভিনেত্রী।
সাবিহার বয়স তখন সবে ১৫ ছুঁয়েছে। ঝকঝকে কিশোরী দর্শকদের মন জিতে নিয়েছিলেন। সেই জনপ্রিয়তা দেখে প্রযোজকদের ভিড়ও বেড়েছিল অভিনেত্রীর দরজায়। ঠিক সেই সময়েই ঘটনাটি ঘটে।
‘আনোখা রিস্তা’ মুক্তির কিছু দিন পর সাবিহার মা সংবাদমাধ্যমকে জানান, ছবির শুটিং চলাকালীন তাঁর কন্যার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন ছবির সুপারস্টার নায়ক রাজেশ।
এই অভিযোগ নিয়ে কিছু দিন হইচই হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজেশ স্বচ্ছন্দে বিতর্ক এড়িয়ে বেরিয়ে আসেন। সেই অভিযোগ তাঁর কেরিয়ারে কোনও প্রভাব ফেলে না। কিন্তু সাবিহার অভিনয় জীবন শুরু হতে না হতেই থমকে যায়।
যে সাবিহা তাঁর প্রথম ছবি মুক্তির পর প্রযোজকদের জন্য সময় বার করতে পারছিলেন না, তাঁর হাত থেকেই ধীরে ধীরে উধাও হতে থাকে ছবির প্রস্তাব। প্রযোজকদের আগ্রহ যেন হঠাৎ করেই চলে যায় তাঁর উপর থেকে।
যদিও তাতে হাল ছাড়েননি সাবিহা। বলিউডের মাটি কামড়ে পড়েছিলেন প্রায় বছর চারেক।
মা অমিতা ছিলেন পঞ্চাশের দশকের সেরা নায়িকাদের একজন। তুমসা নেহি দেখা, সাওয়ান, গুঞ্জ উঠি সেহনাই-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন। বাবা কামরান প্রথম জীবনে জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। পরে তিনি ছবি পরিচালনার কাজও শুরু করেন।
এই কামরানেরই প্রথম পক্ষের দুই সন্তান বলিউডের দুই পরিচালক ফারহা খান এবং সাজিদ খান। সাবিহা এঁদের সৎবোন।
১৯৭২ সালের ৯ অক্টোবর মুসলিম পরিবারে জন্ম সাবিহার। কামরানের দ্বিতীয় স্ত্রী অমিতার একমাত্র সন্তান তিনি। ছোট থেকেই নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে ছিল তাঁর।
গোটা পরিবারই সিনেমা শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে। তবে সাবিহা সেই ঐতিহ্য বেশি দিন টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। মাঝপথেই সিনেমার কেরিয়ার ছাড়তে হয় তাঁকে।
খিলাড়ি হিট করার পরও সাবিহা মূল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাননি আর। প্রথমে ধৈর্য ধরে কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হলেও পরে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। সিনেমার দুনিয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
১৯৯৫ সালে সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে ‘জয় বিক্রান্ত’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করে অভিনেত্রীর কেরিয়ারে ইতি টানেন সাবিহা। সৌদি এয়ারলাইন্সে বিমানসেবিকার কাজ নেন।
বিয়ে করা হয়নি প্রাক্তন বলিউড অভিনেত্রীর। প্রচারের আলো থেকে অনেক দূরে এখন মুম্বইয়ে থাকেন তিনি। নিজের জগতে মাকে নিয়েই সময় কাটে তাঁর।