নিঃসন্দেহে তেলুগু ছবির দুনিয়ায় তিনি এক নম্বর। মহেশ বাবু। অভিনেতা ও প্রযোজক মহেশ বাবুর সর্বাধিক পরিচিতি শুধু তেলুগু সিনেমা করেই। আসল নাম মহেশ ঘাট্টামানেনি। বিপুল ভক্তের সংখ্যা এবং হাতে কী কী কাজ রয়েছে, তা এক বার দেখলে মালুম হবে দক্ষিণে এই মুহূর্তে ঠিক কতটা জনপ্রিয় তিনি।
১৯৭৪ সালের অগস্টে জন্ম মহেশের। বাবা কৃষ্ণ ঘাট্টামানেনিও অভিনেতা। মাত্র চার বছর বয়সে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ আসে মহেশের কাছে।
১৯৭৯ সালে ‘নিদ’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় জীবনের সূত্রপাত। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রাজাকুমারুডু’ ছবিতে প্রথম নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন মহেশ।
২০০৩ সালে ব্লকবাস্টার হিট ছবি ‘ওক্কাডু’তে মহেশ এক জন তরুণ কবাডি খেলোয়ারের ভূমিকায় অভিনয় করেন। দক্ষিণী ছবির বাজারে ‘ওক্কাডু’ সে সময় সর্বোচ্চ লাভের মুখ দেখা চলচ্চিত্র।
২০০৫-এ ‘আতাডু’র মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান মহেশ। তেলুগু ছবির দুনিয়ায় ‘আতাডু’ও আরও একটি বিপুল মুনাফা করা চলচ্চিত্র। পোলিশ ভাষায় ডাবিং করে ছবিটি পোল্যান্ডে মুক্তি পেয়েছিল। ‘পোসজুকিয়ানি’ নামে। পোল্যান্ডে মুক্তি পাওয়া এটাই প্রথম তেলুগুভাষী কোনও ছবি। ছবিটি সে সময় ব্যাপক সাড়া ফেলে।
২০১১ সালে মহেশের ‘দোকুদু’ প্রথম তেলুগু ছবি, যা একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তি পায়। উত্তর, পূর্ব এবং পশ্চিম ভারতের ২১টি শহরে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল। সে সময় প্রথম তেলুগুভাষী চলচ্চিত্র হিসেবে ‘দোকুদু’ ১০০ কোটি টাকা আয় করে।
এমন এক সুপারস্টারের হাতে যে বলিউডের একাধিক ছবিতে কাজ করার সুযোগ আসবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সেই প্রস্তাব থাকলেও মহেশবাবু তাতে সাড়া দেননি। আপাতত তাঁর ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে সহজে সাড়া দেবেনও না তিনি।
এটা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, বলিউড এবং দক্ষিণের ছবির নায়কদের মধ্যে এক অদৃশ্য দূরত্ব সব সময়ই কাজ করেছে। রজনীকান্ত, কমল হাসন কিংবা প্রভাসের মতো দু’একজনকে বাদ দিলে শাহরুখ, হৃতিক, সলমনদের মতো ‘সুপারস্টার’ হয়ে উঠতে পারেননি অনেকেই।
বর্তমানে দক্ষিণী ছবির দুনিয়া এবং বলিউডের এক যোগে কাজ করার বেশ কয়েকটি নিদর্শন রয়েছে। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-ওয়েব সিরিজে সামান্থা প্রভুর অভিনয় তেমনই একটি উদাহরণ।
এখন দেখা যাচ্ছে শাহরুখ খানও কাজ করতে চাইছেন দক্ষিণী পরিচালক অটলি কুমারের সঙ্গে।
দেখা গিয়েছে, আলিয়া ভট্ট এবং অজয় দেবগণ কাজ করেছেন রাজামৌলীর বহু চর্চিত ‘আরআরআর’ ছবিতে। যে ছবি বক্স অফিসে দারুণ সফল।
বলিউড এবং দক্ষিণের এক যোগে কাজ করার আরও উদাহরণ রয়েছে। দক্ষিণের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রশ্মিকা মান্দানা কাজ করতে চলেছেন রণবীর কপূরের সঙ্গে। ছবির নাম ‘অ্যানিম্যাল’।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অল্লু অর্জুন এবং বিজয় দেবরাকোন্ডার মতো সুপারস্টার আরও বেশি নজর কাড়ার জন্য বলিউডের খ্যাতনামীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন।
বলিউডের সঙ্গে দক্ষিণের ফিল্ম দুনিয়া যখন এই ভাবে মিলেমিশে কাজ করছে, সে সময় একাধিক ছবিতে কাজ করার সুযোগ থাকলেও মহেশ এ নিয়ে তেমন কিছু ভাবছেনই না। আগেও ভাবেননি।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ‘গজনী’তে অভিনয়ের জন্য পরিচালক মহেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন।
শুধু তেলুগু ছবিতেই কাজ করতে চান মহেশ। আর অন্য কোনও ভাষার ছবিতে কাজ করার ইচ্ছা নেই। যে কারণেই তিনি বহু প্রস্তাব পেলেও তা প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন।
বরাবরই মহেশ স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে পছন্দ করেন। না হলে কখনও এমন প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন!
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে মহেশ বলেন, ‘‘আমার হিন্দি ছবি করার দরকার নেই। আমি শুধু তেলুগু ফিল্ম করতে চাই। আমি চাই, আমার তেলুগু ছবি সারা বিশ্ব দেখুক। এই মুহূর্তে এমনটা হচ্ছে। আমি এটাই চেয়েছি।’’
‘আরআরআর’ খ্যাত রাজামৌলীর সঙ্গে একটি ছবি করতে চলেছেন মহেশ। ইতিমধ্যেই চুক্তি হয়ে গিয়েছে।
বলিউডে অভিনয় না করতে চাইলেও মহেশের জীবনের ইনিংসে বলিউডের বড় ভূমিকা রয়েছে। বলিউডেরই অভিনেত্রী এবং মডেল নম্রতা শিরোদকরকে বিয়ে করেছেন মহেশ। তাঁদের দুই সন্তান— এক পুত্র এবং এক কন্যা।