মাত্র ২৫১ টাকায় স্মার্টফোন! দাম শুনে মাথা ঘুরছে? ঘোরাটাই স্বাভাবিক। এক কেজি কাতলার থেকেও দাম কম যে!
২০১৬ সালে ২৫১ টাকায় স্মার্টফোন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেশ জুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল ‘রিঙ্গিং বেল্স’ নামে একটি সংস্থা। সেই ঘোষণামাত্র বুকিংও শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোনও দিনই বাজারে আসেনি সেই ফোন।
শোনা যায়, ‘ফ্রিডম ২৫১’ কিনতে প্রায় ৩০ হাজার ক্রেতা টাকা দিয়েছিলেন। সাইটে নাম লিখিয়েছেন আরও ৭ কোটি। বুকিং শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ক্রেতার চাপে পুরো বুকিং ব্যবস্থাই বসে গিয়েছিল। হইচই শুরু হয়েছিল তা নিয়ে।
শুরু থেকেই যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল, তা হল— কী ভাবে মাত্র আড়াইশো টাকায় স্মার্টফোন দেওয়া সম্ভব? বিশেষজ্ঞদের দাবি ছিল, খুব কম করে ধরলেও সাড়ে তিন হাজার টাকার নীচে স্মার্টফোন বিক্রি করা অসম্ভব।
‘রিঙ্গিং বেল্স’ অবশ্য জানিয়েছিল, কর ছাড়ের কারণে কম দামে ফোন দিতে পারবে তারা। কিন্তু পরে জানা যায়, সরকার কোনও কর ছাড়ের কথা ঘোষণা করেনি।
কী ছিল সেই ফোনে? সংস্থা জানিয়েছিল, ফোনটিতে থাকবে ৪ ইঞ্চি ডিসপ্লে, ১.৩ গিগা হার্ৎজ় কোয়াড-কোর প্রসেসর, ১ জিবি র্যাম, ৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ, ৩.২ রেয়ার ক্যামেরা, ০.৩ ফ্রন্ট ক্যামেরা এবং ১৪৫০ এমএএইচ ব্যাটারি।
এত প্রতিশ্রুতি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ডেকে উদ্বোধনের পাঁচ-ছ’মাস পরেও যখন সেই ফোন বাজারে এল না, তখনই সামনে আসে কেলেঙ্কারি আর বিরাট ফাঁদ!
তদন্তে দেখা যায়, ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে সংস্থাটি। সরকার পদক্ষেপও করে। শেষ পর্যন্ত জনগণের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয় ‘রিঙ্গিং বেলস’।
২০১৬ সালে এই সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মোহিত গোয়েল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দিয়ে তা নিয়ে ফলাও করে বিজ্ঞাপনও ছাপান তিনি।
কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর মোহিতকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। পরে আদালত গ্রেফতারিতে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় তিনি ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন।
জামিনে মুক্তি পেয়ে ‘মাস্টার ফ্রিডম’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সে বারও ২ হাজার ৩৯৯ টাকায় স্মার্টফোন এবং ৯ হাজার ৯০০ টাকায় এলইডি টিভির প্রতিশ্রুতি দেন।
সে বারও টাকা দিয়ে ফোন-টিভি পাননি বহু মানুষ। নয়ডা, গাজ়িয়াবাদ, জালন্ধর, পানিপত, গোরক্ষপুরের মতো জায়গা থেকে ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা হয় তাঁর নামে।
উত্তরপ্রদেশের শামলি জেলার গঢ়িপুখতায় বড় হয়েছেন মোহিত। বড় হওয়ার পর স্কুল, পড়াশোনা আর খেলাধুলার ফাঁকে বাবাকে দোকান সামলানোর কাজে সাহায্যও করত কিশোর মোহিত।
বাবা রাজেশ গোয়েলকেও ‘রিঙ্গিং বেলস’ সংস্থার বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এ নিয়েছিলেন মোহিত। মূলধন ছিল না বলে বাবার কাছে থেকে টাকা ধার নিয়েই তিনি ওই সংস্থা খুলেছিলেন। কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন রাজেশও।
তবে এর পরেও রেহাই পাননি মোহিত। ড্রাই ফ্রুট নিয়ে প্রতারণার মামলায় ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি আবার মোহিত ও তাঁর ৫ সহযোগীকে নয়ডার সেক্টর ৫১-র মেঘদূতানম পার্কের কাছ থেকে গ্রেফতার করে নয়ডা পুলিশ।
প্রায় ২০০ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ‘দুবাই ড্রাই ফ্রুটস অ্যান্ড স্পাইসেস হাব’ নামের একটি সংস্থা খুলে ড্রাই ফ্রুটের ব্যবসা করছিলেন মোহিত। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া দামে বিপুল পরিমাণ ড্রাই ফ্রুট কিনে রাজধানী এবং সংলগ্ন এলাকায় খোলা বাজারে তা আরও চড়া দামে বিক্রি করতেন।
ব্যবসায়ীদের আস্থা জিততে প্রথম প্রথম অর্ডার হাতে পাওয়ার আগেই টাকা মিটিয়ে দিতেন। কিন্তু পরিচিতি তৈরি হতেই নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে ৪০ শতাংশ টাকা দিয়ে পুরো অর্ডার বাগিয়ে নিতেন। বাকি টাকার চেক লিখে দিতেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ওই চেক ভাঙাতে গেলে, তা বাউন্স করত।