Haunted Destination

ঘুরে বেড়ায় ‘অশরীরী’র দল, মুম্বইয়ের কাছের ‘ড্যাম অফ ডেথস’ সাক্ষী বহু রহস্যময় মৃত্যুরও

কেন বার বার এই বাঁধেই মৃত্যু ঘটে পর্যটকদের? স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই ‘প্রেতাত্মার অভিশাপ’-জাতীয় কাহিনি ফাঁদলেও এই বাঁধে মৃত্যুর ঘটনা কিছুতেই রোধ করা যায়নি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ০৮:১৬
Share:
০১ ১৬

মহারাষ্ট্রের মুম্বই-পুণে এক্সপ্রেসওয়ের উপরেই পাহাড় আর অরণ্য ঘেরা লোনাভলা সে রাজ্যের অন্যতম পর্যটনস্থল। পুণে থেকে এর দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার এবং মুম্বই থেকে ৯৬ কিলোমিটার। দুই শহরের সংযোগকারী এক্সপ্রেসওয়ের উপরে অবস্থিত লোনাভালা যেন নাগরিক কোলাহল থেকে স্বস্তির শ্বাস নেওয়ার জায়গা। কিন্তু চোখজুড়োনো প্রাকৃতিক দৃশ্যের অন্তরালে লোনাভলা ঘিরে আছে বেশ কিছু রহস্যও। এই সব রহস্যকে কেন্দ্র করে পল্লবিত হয়েছে অজস্র অতিপ্রাকৃত কাহিনি।

০২ ১৬

লোনাভলা মুম্বই অথবা পুণের বাসিন্দাদের কাছে সপ্তাহান্তের গন্তব্য। বিশেষ করে যাঁরা ট্রেকিং করেন, তাঁদের কাছে লোনাভলা অতি প্রিয় জায়গা। পাহাড়, জঙ্গল ছাড়াও এখানে রয়েছে কয়েকটি প্রাচীন দুর্গ। ভুশি নদীর বাঁধও ট্রেকারদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। কিন্তু স্থানীয় জনশ্রুতি জানায়, এই আপাত-সুন্দর প্রকৃতির এক পরত নীচেই নাকি রয়েছে এমন কিছু রহস্য, যার কূলকিনারা করে ওঠা যায় না।

Advertisement
০৩ ১৬

সব থেকে বেশি কাহিনি পল্লবিত হয়েছে ভুশি বাঁধকে ঘিরে। ১৮৬০ সালে গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে এই বাঁধ এবং জলাধারটি তৈরি করে স্টিম ইঞ্জিনে জলের জোগান দেওয়ার জন্য। ২০১৪-য় ভারতীয় রেল এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ভুশি বাঁধ এবং জলাধারে পর্যটকদের মৃত্যু একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। ২০১৭ থেকে ২০২২-এর মধ্যেই ২৯ জন মানুষ এখানে জলে ডুবে মারা গিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে সফর সংক্রান্ত অনেক সাইটই এই বাঁধকে ‘বিপজ্জনক’ বলে বর্ণনা করেছে।

০৪ ১৬

এই জলাধারকে ‘ড্যাম অফ ডেথস’ বলেও ডাকা হয় ইদানীং। কেন বার বার এই বাঁধেই মৃত্যু ঘটে পর্যটকদের? স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই ‘প্রেতাত্মার অভিশাপ’-জাতীয় কাহিনি ফাঁদলেও এই বাঁধে মৃত্যুর ঘটনা কিছুতেই রোধ করা যায়নি। প্রশাসন থেকে কড়া নিয়মকানুন জারি করার পরেও এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমের দাবি, যথাযথ নজরদারির অভাব এবং নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপে অবহেলার কারণেই এখানে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। স্থানীয় কিংবদন্তিগুলি আসলে ভিত্তিহীন।

০৫ ১৬

লোনাভলায় নাকি একাধিক হোটেল রয়েছে, যেখানে প্রায়শই ‘তেনাদের’ উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। এই সব ‘ভৌতিক’ হোটেলকে ঘিরে ‘ভূতশিকারি’-দের এক সমান্তরাল পর্যটন লোনাভলায় গড়ে উঠেছে, এমন কথাও অনেকে বলে থাকেন।

০৬ ১৬

যে হোটেলটিকে ঘিরে সব থেকে বেশি ‘ভূতুড়ে’ কাহিনি ছড়িয়েছে, সেটির নাম হোটেল রাজকিরণ। স্থানীয় জনশ্রুতি, এই হোটেলের একটি বিশেষ ঘর নাকি বেশ গোলমেলে। সেই ঘরে যাঁরা ওঠেন, তাঁরা নাকি নানা রকম ব্যাখ্যাতীত অভিজ্ঞতার শিকার হন।

০৭ ১৬

এক নববিবাহিত দম্পতি তাঁদের মধুচন্দ্রিমা কাটাতে এই ঘরটিতে উঠেছিলেন। মাঝরাতে নাকি তাঁরা টের পান, কেউ তাঁদের বিছানার চাদর ধরে টানছে। আতঙ্কে জেগে উঠে তাঁরা আলো জ্বালেন। দেখতে পান, কেউ কোত্থাও নেই। আর থাকবেই বা কী করে! ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধই ছিল।

০৮ ১৬

এই হোটেলে দু’জন পর্যটকের অন্য অভিজ্ঞতা হয়। তাঁরা তাঁদের পায়ের উপর এক নাকি অদ্ভুত নীল আলো পড়তে দেখেন। তাঁরা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, পরে তাঁদের মনশ্চিকিৎসকের কাছে দৌড়তে হয়।

০৯ ১৬

এ সবের বাইরে, বহু পর্যটকই দাবি করেছেন যে, তাঁরা এই হোটেলে এক ছায়ামূর্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। বিশেষ করে ওই ঘরটিতে অনেকেই নাকি অন্য কারও উপস্থিতি অনুভব করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকেই দেখা যায়নি।

১০ ১৬

এই হোটেলটি ছাড়াও আরও বেশ কিছু হোটেল বা হোম স্টে-কে নিয়ে জল্পনা রয়েছে লোনাভলায়। লোনাভলার খান্ডালা ঘাটের একটি ভিলা সম্পর্কেও এমন গুজব শোনা যায়। জনশ্রুতি, এক দম্পতি নাকি এখানে ছুটি কাটাতে এসে খুন হন। তার পর থেকে নাকি তাঁদের ‘আত্মা’ এই বাগানবাড়িতেই ঘুরে বেড়ায়। রাতবিরেতে সহজে কেউ ঘেঁষতে চান না এই বাড়ির আশপাশে।

১১ ১৬

লোনাভলার আর একটি রহস্যময় জায়গা হল আয়েশা ভিলা। ‘ভূতুড়ে বাড়ি’ হিসেবে বদনাম রয়েছে এটিরও। এক সময়ে এখানে একটি পরিবার বাস করত, যার সদস্যদের কেউ বা কারা হত্যা করে পরিত্যক্ত বাড়িটিকে। তার পর থেকে স্থানীয়রা বাড়িটি এড়িয়েই চলেন।

১২ ১৬

আয়েশা ভিলার ইতিহাস যা জানা যায়, তা এই— মুম্বইয়ের এক খ্রিস্টান পরিবার এই বাড়িটি কেনে। পরিবারের সদস্য বলতে স্বামী, স্ত্রী এবং তাঁদের ১৭ বছর বয়সি এক কন্যা। এই মেয়েটির নামই ছিল আয়েশা। ধনী এই পরিবারের একটি রোলস রয়েস ছিল। এক রাতে আয়েশা ভিলায় কিছু লোক হামলা চালায়। আয়েশার সামনেই তার বাবা-মাকে খুন করে এবং আয়েশার উপর অত্যাচার করে। এই ঘটনার তিন-চার দিন পরে আয়েশা নিখোঁজ হয়ে যায়। যারা তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ, তাদের কাউকেই পরে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১৩ ১৬

এর পর থেকে ওই বাড়িতে নাকি রহস্যময় এক তরুণীকে রাতের বেলা দেখা যেতে থাকে। সেই সঙ্গে ওই বাড়ি থেকে ভেসে আসতে থাকে অদ্ভুত সব শব্দ। এমন কথাও রটে যে, কেউ কেউ সাহস করে রাতে আয়েশা ভিলায় ঢুকেছিলেন, কিন্তু তাঁদের কাউকেই নাকি আর সেখান থেকে বেরোতে দেখা যায়নি।

১৪ ১৬

আশ্চর্যের কথা এটাই যে, আজ পর্যন্ত আয়েশা ভিলার একটি আসবাবও চুরি যায়নি। অনেকে বলেন, আয়েশা ভিলার ভিতরে ঢুকে যাঁরা ছবি তুলতে গিয়েছেন, তাঁরা দু’টির বেশি ছবি তুলতে পারেননি। ঠিক দু’বার শাটার টেপার পরই ক্যামেরা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বা বিগড়ে গিয়েছে। তবে অনেকেই আয়েশা ভিলার ভিডিয়ো তুলেছেন। তার মধ্যে বেশ কিছু ইউটিউবে আপলোডও হয়েছে। সেখানে ক্যামেরা বন্ধ হওয়ার কোনও লক্ষণই দেখা যায়নি।

১৫ ১৬

আয়েশা ভিলার গ্যারাজে রোলস রয়েস গাড়িটি আজও পড়ে রয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, গাড়িটিও বেশ গোলমেলে। পরিত্যক্ত ভিলার গ্যারাজে গাড়িটিকে আজও দেখা যায়। কাচ ভাঙা, টায়ার ফুটো বিধ্বস্ত গাড়িটিকে কেউ সেখান থেকে সরায়নি (না কি, সরাতে পারেনি?)। আজ পর্যন্ত কেউই গাড়িটির মালিকানাও দাবি করেননি।

১৬ ১৬

লোনাভালার এই সব রহস্য ঘিরে বেশ কিছু ভ্লগ তোলা হয়েছে। লেখালিখিও হয়েছে বিস্তর। অনেকেই লোনাভালাকে ‘হন্টেড ডেস্টিনেশন’ হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই সব চেষ্টাও সফল হয়নি। পাহাড়, অরণ্য, ঝরনা, জলাধারে লোনাভালা শেষ পর্যন্ত একটি সাদাসিধে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবেই থেকে গিয়েছে। প্রতি বছরই অগণিত মানুষ আসেন এখানে ট্রেক করতে। ‘ভৌতিক অভিজ্ঞতা’ অবশ্য তাঁদের মধ্যে খুব কম লোকেরই হয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement