এই পৃথিবীটা অনেক বড়। চার দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা দেশ। আর সেই সব দেশের রীতি-নীতি আবার একেক রকম। যেমন কোনও দেশের নাগরিকরা শোকপালনে কালো রঙের পোশাক পরেন। আবার কোনও দেশে একই কারণে পোশাকের রং পাল্টে সাদা হয়। কোথাও কোথাও আবার কাছের মানুষের প্রয়াণের পর রীতি মেনে মস্তক মুণ্ডন করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার একটি উপজাতি এলাকায় আবার পরিজনের মৃত্যুতে মহিলাদের আঙুল কাটা হত! হ্যাঁ, একটা সময় এমনই প্রথা চালু ছিল।
কাছের মানুষের প্রয়াণে আঙুল কাটার রেওয়াজ নিয়ে এক সময় জোর চর্চা চলত। ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া প্রদেশের ওয়ামেনার একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বাস দানি উপজাতির।
পরিবারের সদস্যের প্রয়াণে শোকপালন হিসাবে আঙুল কাটার রীতি ছিল দানি উপজাতির মধ্যে। অধিকাংশ সময়ই প্রিয়জনের প্রয়াণের পর আঙুল কাটা হত উপজাতির মহিলা সদস্যদের।
ভারতে একটা সময় সতীদাহ প্রথা চালু ছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর চিতায় প্রাণ দিতে হত স্ত্রীকে। রাজা রামমোহন রায় ভয়ঙ্কর সেই প্রথা রদ করেছিলেন। তেমনই এক ভয়ঙ্কর প্রথা চালু ছিল ইন্দোনেশিয়ায়। প্রিয়জনের মৃত্যুর পর শোক হিসাবে ইন্দোনেশিয়ার দানি উপজাতির মহিলাদের আঙুল কেটে ফেলা হত।
পরিজনের প্রয়াণের পর শোকপালন হিসাবে আঙুল কাটার রীতিকে বলা হয় ‘ইকিপালিন’। কবে এই প্রথা চালু হয়েছিল তা জানা যায় না। কেনই বা শুধুমাত্র মহিলাদের আঙুল কাটা হত, সেই কারণও স্পষ্ট নয়।
শোনা যায়, অনেক সময় নাকি পুরুষদেরও আঙুল কাটা হত। তবে সেই সংখ্যাটা খুবই কম। শোকপালন হিসাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের অঙ্গচ্ছেদ করতে হত মহিলাদেরই।
প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকের প্রতীক হিসাবে আঙুল কাটা হত মহিলাদের। দানি উপজাতির মানুষদের বিশ্বাস ছিল যে, আঙুল কাটলে মৃতের আত্মা শান্তি পাবে।
কী ভাবে কাটা হত আঙুল? এই পদ্ধতিও বেশ অন্যরকম। পুরো আঙুল কিন্তু কাটা হত না। আঙুলের অগ্রভাগের অংশ শুধুমাত্র কাটা হত।
আঙুল কাটার আগে বিশেষ পদ্ধতি মানা হত। আঙুল কাটার আগে আধ ঘণ্টা ধরে সংশ্লিষ্ট আঙুলটি দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা হত। আঙুল কাটার সময় যাতে যন্ত্রণা না হয়, সে কারণেই এই পদ্ধতি মেনে চলা হত।
পাথরের পাত বা পাথরের তৈরি ধারালো অস্ত্র দিয়ে দানি উপজাতির মহিলাদের আঙুলের অগ্রভাগ কাটা হত। প্রাচীন কালে ধারালো পাথর দিয়েও আঙুলের অগ্রভাগ কাটা হত।
আঙুলের কাটা অংশটি পরে পুড়িয়ে ফেলা হত। না হলে তা পুঁতে দেওয়া হত। মূলত মহিলাদের আঙুল কাটতেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই।
এই রীতি পালন থেকে ছাড় দেওয়া হত না উপজাতির শিশুকন্যাদেরও। তবে তাদের ক্ষেত্রে আঙুল কাটা হত না। পরিবর্তে আঙুল কামড়ে দিতেন তাদের মায়েরা। এটা অনেকটা হিন্দু সমাজে মায়েদের মতো। কুদৃষ্টি থেকে সন্তানকে রক্ষা করতে হিন্দু সমাজে বাচ্চাদের কড়ে আঙুল কামড়ে দেন মায়েরা।
দানি উপজাতির মহিলারা বিশ্বাস করতেন, তাঁদের শিশুকন্যার আঙুল কামড়ে দিলে তারা দীর্ঘায়ু হবে।
তবে পরিজনের প্রয়াণে বাড়ির মহিলাদের আঙুল কাটার এই রীতি অনেক আগেই নিষিদ্ধ করেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। এখন আর এই রীতি পালন করা হয় না।
তবে শোনা যায়, সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গোপনে অনেক সময়ই নাকি এই প্রাচীন প্রথা পালন করা হয়। দানি উপজাতির এমন অনেক প্রবীণ মহিলাকেই দেখতে পাওয়া যায় যাঁদের আঙুলের অগ্রভাগ কাটা।