কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। তার পর থেকে বিশ্ব ফুটবলে ঘুরছে একটাই নাম— লিয়োনেল মেসি। কারণ বুধবার রাতে কাতারের স্টেডিয়ামে আক্ষরিক অর্থেই যেন ‘ম্যাজিক’ দেখিয়েছেন তিনি।
ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার ৩ গোলের মধ্যে মেসির নামে রয়েছে ১টি মাত্র গোল। তা-ও পেনাল্টি থেকে দেওয়া। বাকি ২টি গোল মেসি দেননি। জোড়া গোলের নায়ক ইউলিয়ান আলভারেস।
তবে বুধবারের সেমিফাইনাল যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা আলভারেস নয়, মেসির নাম জপছেন, মজে আছেন মেসিতেই। কারণ, বাকি দু’টি গোলের নেপথ্য কারিগর অধিনায়ক মেসিই।
নব্বই মিনিটের এই ম্যাচটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভক্তদের মুগ্ধ করেছেন মেসি। তাঁর বিস্ময় বাঁ পায়ের ছোঁয়ায় কাতারের মাঠে তৈরি হয়েছে একের পর এক ম্যাজিক মুহূর্ত। ভক্তরা মাঠ থেকে চোখ ফেরাতেই পারেননি। ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে মেসির তেমনই সেরা কিছু মুহূর্ত খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন।
ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে মনে রাখার মতো প্রথম মেসি-মুহূর্ত অবশ্যই তাঁর পেনাল্টি। বক্সের মধ্যে বল নিয়ে ছোটার সময় আলভারেসকে বাধা দেন গোলকিপার লিভাকোভিচ। তাতেই পেনাল্টি। ৩৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে বাঁ পায়ে ডান দিকে সজোরে শট মারেন মেসি। ক্রোয়েশীয় গোলরক্ষক ডান দিকে ঝাঁপিয়েও তা আটকাতে পারেননি।
প্রথমার্ধে পেনাল্টির কিছু পরেই তৈরি হয় আরও এক ম্যাজিক্যাল মুহূর্ত। মাঝমাঠের ও পার থেকে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারের পা থেকে বল নিয়ে এগোচ্ছিলেন মেসি। মাঝমাঠ পেরোনোর আগেই পড়ে যান তিনি। তবে পড়তে পড়তেও বলে পা ছুঁইয়ে লিখে দেন ঠিকানা। মেসির পা থেকে বল ধরে স্বপ্নের দৌড় শুরু করেন আলভারেস। যা থেকে আসে অনিবার্য গোল।
আর্জেন্টিনা তৃতীয় গোলটি দেয় ম্যাচের ৬৯ মিনিটে। এই গোলটি ঘিরে তৈরি হয় অসাধারণ দুই মুহূর্ত। গোলপোস্টের একেবারে কাছ থেকে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ ফালাফালা করে দিয়ে পায়ের জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে মেসি বল ঠেলে দেন আলভারেসের পায়ে। ঠিকানা লেখা সেই পাস থেকে গোল করতে বেশি সময় নেননি ২২ বছরের তরুণ ফুটবলার।
তৃতীয় গোলের ঠিক আগে মাঝমাঠ থেকে ডান দিক ঘেঁষে দৌড় শুরু করেছিলেন মেসি। সে মুহূর্তও ভোলার নয়। তাঁকে আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার রক্ষক গাওয়ার্দিওল। মেসির গা ঘেঁষে তিনিও ছুটেছিলেন। কিন্তু মেসি অপ্রতিরোধ্য। গাওয়ার্দিওলকে পাশে নিয়েই বক্সের মুখে পৌঁছে গিয়েছিলেন অনায়াসে। তার পর পাস বাড়িয়ে দেন আলভারেসের দিকে।
এ ছাড়া, প্রথমার্ধে এক বার বক্সের কাছে বল পেয়েছিলেন মেসি। সজোরে হেড দিয়ে জালের দিকে ঠেলে দেন সেই বল। লিভাকোভিচ অবশ্য বল জালে জড়াতে দেননি। তবে মেসির ক্ষণিকের সেই হেড থেকে গোল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
বুধবারের ম্যাচে শুধু গোলপোস্টের কাছে থেকে আক্রমণ নয়, রক্ষণেও দেখা গিয়েছে ‘মেসি ম্যাজিক’। ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণের সময় একেবারে নিজেদের গোলের মুখে পৌঁছে গিয়েছিলেন এলএম১০। বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিচ্ছিলেন অদ্ভুত দক্ষতায়।
দ্বিতীয়ার্ধে এক বার দেখা যায়, ডান দিকের উইংয়ে ক্রোয়েশিয়ার ৫ ফুটবলার ঘিরে ধরেছেন মেসিকে। বাঁ পায়ে বল নিয়ে সেখানেও ‘ম্যাজিক’ দেখিয়েছেন লিয়ো। সামনে পিছনে বল এগিয়ে-পিছিয়ে নিয়ে বার বার চমকে দিয়েছেন বিপক্ষকে।
ক্রোয়েশিয়ার গোলপোস্টের মুখে আর এক বার বল পেয়েছিলেন মেসি। তাঁর সামনে তখন শুধু ছিলেন লিভাকোভিচ। সজোরে শট মেরেছিলেন, তবে গোল হয়নি। কয়েক মুহূর্তের জন্য আর্জেন্টিনীয় সমর্থকদের হৃদ্স্পন্দন স্তব্ধ করে দিয়েছিল সেই মুহূর্ত।
দ্বিতীয়ার্ধেই এক বার বল পায়ে ভেলকি দেখিয়েছেন লিয়ো। তাঁকে এ বারও ঘিরে ধরেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার ৪ ফুটবলার। বাঁ পায়ে বল ধরে সকলকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন মেসি। তাঁর সেই ‘ড্রিবল’ ছিল দেখার মতো।
দ্বিতীয়ার্ধে এক কর্নার পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ১০ নম্বরে সেই কর্নারের কথা না বললেই নয়। নীল-সাদা জার্সির কর্নার বরাবরের মতো এ বারও নিয়েছিলেন মেসি। বক্সের মধ্যে গোলপোস্টের একেবারে কাছে পৌঁছে গিয়েছিল সেই বল। কোনও রকমে বলটি বাইরে পাঠিয়ে দেন ক্রোয়েশীয় গোলরক্ষক। এ ভাবেই নিশ্চিত গোলের আরও এক মোক্ষম সুযোগ তৈরি করেছিলেন মেসি।
সেমিফাইনালে জয়ের পর মেসি জানিয়ে দিয়েছেন, ফাইনালের ম্যাচই হবে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে তাঁর শেষ খেলা। আর দেশের হয়ে খেলবেন না এলএম১০। ফাইনালের সেই ম্যাচে আরও এক বার শেষ বারের মতো তাঁর ‘ম্যাজিক মুহূর্ত’ দেখতে তাই মুখিয়ে আছেন ভক্তরা।