মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ক্যামেরা, ল্যাপটপ— নানা বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ওতপ্রোত ভাবে। আর এই বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি বা ডিভাইসগুলির অবিচ্ছেদ্য অংশ সেমিকন্ডাক্টর।
মাইক্রোচিপের মাধ্যমে বৈদ্যুতিন ডিভাইসগুলির হার্ডডিস্ক তৈরি হয়। সেই চিপ তৈরিতে কাজে লাগে সেমিকন্ডাক্টর। আন্তর্জাতিক মহলে এই চিপের গুরুত্ব তাই অপরিসীম।
বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির সবচেয়ে বড় সংস্থার নাম ফক্সকন। তাইওয়ানের এই সংস্থার সঙ্গেই সম্প্রতি চুক্তি হয়েছিল ভারতের। ফলে দেশের মাটিতে সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ভারত।
ভারতের বহুজাতিক খনিজ সংস্থা বেদান্ত লিমিটেডের সঙ্গে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির জন্য হাত মিলিয়েছিল ফক্সকন। কিন্তু সম্প্রতি সেই চুক্তি ভেস্তে গিয়েছে।
ভারতে সেমিকন্ডাক্টর তৈরি এবং তাকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য গড়ে তোলার জন্য প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে যৌথ ভাবে হাত মিলিয়েছিল বেদান্ত এবং ফক্সকন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেদান্ত, ফক্সকনের এই যৌথ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। গুজরাতে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির কারখানা গড়ার কথাও হয়েছিল। কিন্তু এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে থমকে গেল সেই উদ্যোগ।
সোমবার ফক্সকন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা ভারতে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির পরিকল্পনা থেকে নিজেদের নাম তুলে নিচ্ছে। বেদান্ত লিমিটেডের সঙ্গে এ বিষয়ে আর তারা যুক্ত নয়।
ফক্সকন জানিয়েছে, ভারতে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির উপযুক্ত পরিবেশ গঠনে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু এখনই তা সম্ভব নয়। তাতে সময় লাগবে। ভারত ছাড়ার আর কোনও কারণ খোলসা করেনি তারা।
ফক্সকনের মতে, প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগোচ্ছিল না। এমন কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছিল, যেগুলি সহজে সমাধান করা যাচ্ছিল না। এ ছাড়াও, বাহ্যিক কিছু কারণও তাদের এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে।
ফক্সকন ভারত ছাড়ায় কি এ দেশে সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতির স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে? সেমিকন্ডাক্টর তৈরির উদ্যোগে এটি বড়সড় ধাক্কা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অনেকের মতে, ভারতে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির কাজ শুরু করার জন্য ফক্সকন অনেকটাই এগিয়েছিল। কিন্তু কোনও কারণে প্রযুক্তি গড়ে তোলার উপযুক্ত পরিকাঠামো মেলেনি। বেদান্তের সঙ্গে মতের অমিলও এর কারণ হতে পারে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপীয় চিপ প্রস্তুতকারক সংস্থা এসটি মাইক্রোইলেকট্রনিক্সকে প্রযুক্তিগত অংশীদার হিসাবে চেয়েছিল ফক্সকন। তাতে বেদান্তের সম্মতি ছিল না।
এ দিকে, বেদান্ত গ্রুপের চেয়ারম্যান অনিল আগরওয়াল জানিয়েছেন, ফক্সকনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হওয়ায় তাঁরা চিন্তিত নন। কারণ, সেমিকন্ডাক্টর তৈরির প্রকল্পে তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য অনেক সংস্থা লাইন দিয়ে আছে।
ভারতে সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করতে তারা বদ্ধপরিকর, জানিয়েছে বেদান্ত। সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করতে পারলে দেশে নিজস্ব বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি তৈরি করা যাবে।
বেদান্ত তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেমিকন্ডাক্টরের হাত ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে দেশ। তারা সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে।
কিন্তু ফক্সকনের সাহায্য ছাড়া কী ভাবে ভারতে সেমিকন্ডাক্টর তৈরি হবে, তা নিয়ে নানা মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। তাইওয়ানের সংস্থার মুখ ফিরিয়ে নেওয়াকে অনেকেই বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন।