পুরুষদের ফুটবল বিশ্বকাপে এই প্রথম ম্যাচ পরিচালনা করবেন কোনও মহিলা রেফারি। বৃহস্পতিবার কাতারের মাঠে সে নজির গড়বেন ফ্রান্সের রেফারি স্টেফানি ফ্রাপা। গ্রুপ ‘ই’-র ম্যাচে তাঁর নজরদারিতেই থাকবেন জার্মানি এবং কোস্টা রিকার ফুটবলাররা।
বৃহস্পতিবারের ম্যাচে স্টেফানির সহযোগী রেফারিরাও মহিলা। ৩৮ বছরের স্টেফানির নজির গড়ার দিনে সহকারী রেফারি হিসাবে থাকবেন ব্রাজিলের ক্যারেন দিয়াজ় এবং মেক্সিকোর নেওজ়া ব্যাক।
স্টেফানিদের সহযোগিতা করার জন্য ভিডিয়ো রিভিউ টিমে চতুর্থ মহিলা অফিশিয়ালের নামও ঘোষণা করেছে ফিফা। মঙ্গলবার ফিফা জানিয়েছে, সে দলে থাকবেন আমেরিকার ক্যাথরিন নেসবিট।
বস্তুত, কাতার বিশ্বকাপেই প্রথম বার মহিলা রেফারি দিয়ে খেলা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা। স্টেফানি ছাড়াও চলতি বিশ্বকাপের জন্য ৩৬ জন রেফারির তালিকায় রোয়ান্ডার সালিমা মাকানসাঙ্গা এবং জাপানের ইয়োশিমি ইয়ামাশিতার নামও রয়েছে।
তবে সব ঠিক থাকলে বিশ্বকাপে প্রথম মহিলা রেফারি হিসাবে ফ্রান্সের স্টেফানির ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়বে। যদিও পুরুষদের প্রতিযোগিতায় আগেও ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তিনি।
নিজের দেশের মাঠে ফরাসি ‘লিগ ১’ থেকে ইউরোপের অন্য দেশের মাঠেও পুরুষদের ম্যাচের বাঁশি ছিল স্টেফানির হাতে। সে ক্ষেত্রেও তিনিই ছিলেন প্রথম মহিলা রেফারি, যিনি পুরুষদের ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন।
২০১৯ সালের অগস্টে পুরুষদের উয়েফা সুপার কাপ, তার পরের বছর ডিসেম্বরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ২০২২ সালের মে মাসে ফ্রেঞ্চ কাপ ফাইনাল— সবর্ত্রই প্রথম মহিলা রেফারি হিসাবে নজির গড়েছেন স্টেফানি। এ বার বিশ্বকাপের মঞ্চেও শিরোনামে তিনি।
কেরিয়ারে একের পর এক নজির গড়ার পর এ বার কাতারের মাঠে ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই ভিতরে ভিতরে উত্তেজনায় ফুটছেন স্টেফানি। ফিফা তাঁর নাম ঘোষণা করার পর তিনি বলেছিলেন, ‘‘কাতারে যে পুরুষদের বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলাতে হবে, সেটা আশাই করিনি। বিশ্বকাপের থেকে বড় কিছু তো হয় না। ফলে খুবই অনুপ্রাণিত।’’
মাঠের ভিতর সব দিক সমঝে চলায় বেশ পটু— ফ্রান্সে এমনই খ্যাতি রয়েছে স্টেফানির। তবে প্রয়োজনে তিনি যে নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকেন, তা-ও দেখা গিয়েছে।
কাতারে পুরুষদের ময়দানে নামার আগে স্টেফানিকে ঘিরে লিঙ্গসাম্যের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও আবার উঠেছে। স্টেফানি বলেন, ‘‘আপনি কোন লিঙ্গের মানুষ, সেটা আর প্রয়োজনীয় নয়। বরং আপনি কতটা দক্ষ, সেটাই বিবেচ্য।’’
স্টেফানি আরও বলেন, ‘‘আমি নারীবাদীদের মুখপাত্র নই। তবে আশা করি, ফিফার এই পদক্ষেপে কিছুটা হলেও লিঙ্গসাম্যের বিষয়ে অগ্রগতি আসবে।’’
স্টেফানির শুরুটা হয়েছিল দীর্ঘ দিন আগে। ফ্রান্সে বেড়ে ওঠা স্টেফানি রেফারি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন মোট ১৩ বছর বয়সে। ১৮ বছরে পা রাখার পর জাতীয় দলের অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
গোড়ায় দেশের মাঠে পুরুষদের তৃতীয় ডিভিশনের ম্যাচের ভার সামলাতেন স্টেফানি। সেটা ছিল ২০১১ সাল। পরের বছর ফ্রান্সের (দ্বিতীয় ডিভিশন ফুটবল) লিগ ২-তে আত্মপ্রকাশ। স্টেফানিই প্রথম মহিলা রেফারি যিনি লিগ ২-তে পুরুষদের ম্যাচ পরিচালনা করেন।
২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর আরও বড় দায়িত্ব পালনের খবর পান স্টেফানি। সে দিন ফিফা জানিয়েছিল, ২০১৯ সালের মহিলাদের বিশ্বকাপের রেফারি হিসাবে তাঁর নাম বাছাই করা হয়েছে। পরের বছর ফ্রান্সের লিগ ১-এ প্রথম মহিলা হিসাবে ম্যাচ খেলিয়েছিলেন তিনি।
এর পরের বছরগুলিতে একে একে নানা নজির গড়েছেন স্টেফানি। উয়েফা সুপার কাপে লিভারপুল বনাম চেলসির ম্যাচ হোক বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জুভেন্তাস বনাম ডায়নামো কিয়েভ— সবেতেই দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফুটবল হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্স (আইএফএফএইচএস)-এর বিচারে ২০১৯, ’২০ এবং ’২১, ৩ বারের সেরা মহিলা রেফারি নির্বাচিত হয়েছেন স্টেফানি। এ বার কাতারের ময়দানে নতুন শিখরে দেখা যেতে পারে এই ফরাসি তরুণীকে।