সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে আগামী বছর ২২ জানুয়ারিতেই অযোধ্যায় ‘রামলালা বিরাজমান’-এর মূর্তি প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে। তা নজরে রেখেই শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে।
শনিবার মন্দিরের নির্মীয়মাণ গর্ভগৃহের ছবি প্রকাশ্যে আনল শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে মন্দিরের গর্ভগৃহের দু’টি ছবি পোস্ট করেন।
ট্রাস্ট প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গর্ভগৃহের মাঝে তিনটি ধাপের একটি বেদি তৈরি করা হয়েছে। ঠিক তার উপরে ছাদটিতে পদ্মের কারুকার্য করা। চম্পত লিখেছেন, “রামলালার গর্ভগৃহের কাজ প্রায় শেষ। সম্প্রতি আলো লাগানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তার কিছু ছবিই আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি।”
গর্ভগৃহেই ‘রামলালা’র মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। পুজোও হবে মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনে। ট্রাস্ট সূত্রে খবর, সেই পুজোয় যজমানের ভূমিকায় থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তার পরেই হবে বিগ্রহে চক্ষুদান।
শুধু যজমানের ভূমিকাই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদী রাজি থাকলে তিনিই পায়ে হেঁটে আধ কিলোমিটার দূরে একটি অস্থায়ী মন্দির থেকে ‘রামলালা’র মূর্তিকে রামমন্দিরের গর্ভগৃহে নিয়ে আসবেন।
গত বছরই ‘কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’ (সিএসআইআর)-এর বিজ্ঞানীরা নির্মীয়মাণ রামমন্দির ঘুরে এসেছেন। তাঁরা ট্রাস্টিদের বুঝিয়েছেন, কোন উপায় অবলম্বন করলে ২০২৪ সালে রামনবমীর দিন প্রথম সূর্যরশ্মি ঠিক রামলালার কপালে এসে পড়বে। দেশের বিজ্ঞান গবেষণাক্ষেত্রের অগ্রণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’ (সিএসআইআর) টুইটে ফলাও করে জানিয়েছে তা।
সহজ ভাবে বলতে গেলে, এ আসলে— একটি নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের অবস্থান নির্ণয় এবং অপ্টো-মেকানিক্যাল প্রযুক্তিতে আয়না, লেন্স ইত্যাদির ব্যবহারে এমন এক বন্দোবস্ত, যাতে রামনবমীর দিন প্রথম আলো স্পর্শ করবে দেববিগ্রহকে। প্রতি বছর সূর্যের অবস্থান পরিবর্তন অনুযায়ী সেই যান্ত্রিক ব্যবস্থাও স্বয়ংক্রিয় ভাবে পাল্টে নেবে নিজেকে। যাতে কোনও বছর রামনবমীতে রামলালার উপরে সূর্যের আলো এসে পড়া ব্যর্থ না হয়।
ট্রাস্ট সূত্রে খবর, মন্দিরের দেওয়ালে বসানো হবে রাজস্থানের গোলাপি রঙের বেলেপাথর। কর্নাটক থেকে এসেছে গ্রানাইট। ট্রাস্ট আগেই জানিয়েছিল, মন্দিরের গর্ভগৃহ আলো করে থাকবে রাজস্থানের মাকরানা পাহাড় থেকে আনা সাদা মার্বেল।
২০২০ সালের ৫ অগস্ট অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অযোধ্যায় শ্রীরামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেন রামমন্দির উদ্বোধনের দিন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের মধ্যেই রামমন্দিরের এক তলার কাজ শেষ হয়ে যাবে। ২২ জানুয়ারি হবে মন্দিরের উদ্বোধন।’’
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে দেশে উন্মাদনা তৈরি হবে। বিজেপির ইতিহাসেই নতুন মাইলফলক তৈরি হবে। গত পাঁচ দশকে সঙ্ঘ পরিবারের রামমন্দির আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেবে।
ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা মন্দির চত্বরের কাজ শেষ হতে ২০২৫ সাল হয়ে যাবে। লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই তত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা হচ্ছে না।
মন্দিরের কাজ ও অযোধ্যার পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ দেখভালের জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকারের পূর্তমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ নিয়মিত অযোধ্যা যাচ্ছেন।
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে দেশে উন্মাদনা তৈরি হবে। বিজেপির ইতিহাসেই নতুন মাইলফলক তৈরি হবে। গত পাঁচ দশকে সঙ্ঘ পরিবারের রামমন্দির আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেবে।
রামমন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে প্রচার কী ভাবে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়, ও ধর্মীয় ভাবাবেগকে কী ভাবে উস্কে দেওয়া যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির পাশাপাশি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলও কর্মসূচি তৈরি করছে।