ম্যারিওন দ্বীপে বিশেষ সামুদ্রিক পাখিদের বাঁচাতে প্রচুর পরিমাণ ইঁদুর মারতে চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তা-ও আবার ‘গোলা’ দিয়ে। এমন খবর উঠে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশবিদ এবং সংরক্ষণবাদীরা সম্প্রতি ম্যারিওন দ্বীপে ইঁদুরের প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি, বিশেষ অস্ত্র দিয়ে ইঁদুর মারার উপায়ও বাতলেছেন।
কেপ টাউন থেকে প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ম্যারিওন দ্বীপ। গুটি কয়েক বাড়ি থাকলেও মূলত ছোটখাটো জীবজন্তুর বাস সেখানে। সামুদ্রিক পাখিরা ওই দ্বীপে বিশ্রাম নিতে আসে।
পরিবেশবিদ এবং সংরক্ষণবাদীদের পর্যবেক্ষণ, গত কয়েক বছরে ম্যারিওন দ্বীপে ইঁদুরের উৎপাত মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বীপে বিশ্রাম নিতে আসা সামুদ্রিক পাখিদের খেয়ে ফেলছে ইঁদুরের দল। এর ফলে সঙ্কটের মুখে পড়েছে অ্যালবাট্রসের মতো সামুদ্রিক পাখি।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ম্যারিওন দ্বীপে সামুদ্রিক পাখির ২৯টি প্রজাতির বসবাস। এর মধ্যে ১৯টি প্রজাতিই ইঁদুরের আক্রমণের মুখে। ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস প্রজাতি-সহ সামুদ্রিক পাখিদের উপর ইঁদুরের হামলায় উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদেরা।
তাই ইঁদুরের দৌরাত্ম্য কমাতে ম্যারিওন দ্বীপে টন টন কীটনাশক ভর্তি পুটুলি ছোড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংরক্ষণবাদী মার্ক অ্যান্ডারসন উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ম্যারিওন দ্বীপের সামুদ্রিক পাখিদের উপর ওই দ্বীপে থাকা ধেড়ে ইঁদুরের আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস প্রজাতি-সহ বিভিন্ন পাখি এবং তাদের ডিম খাওয়া শুরু করেছে ইঁদুরগুলি। অ্যান্ডারসনের কথায়, ‘‘পাখিগুলি বিশ্রাম নেওয়ার সময় ইঁদুরগুলি অতর্কিতে তাদের আক্রমণ করছে এবং মেরে খেয়ে ফেলছে।’’
অ্যান্ডারসন ব্যাখ্যা করেছেন, এই পাখিগুলি এমন ভাবেই বিবর্তিত যে, স্থলজগতের প্রাণীদের হামলা আটকাতে তারা সক্ষম নয়।
সারা বিশ্বে যত ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস রয়েছে, তার প্রায় এক-চতুর্থাংশের বাস ম্যারিয়ন দ্বীপে। ফলে বিশেষ এই সামুদ্রিক পাখি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলে যেতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অ্যান্ডারসন। অ্যান্ডারসন বলেছেন, ‘‘আমরা প্রতি বছর ইঁদুরের জন্য কয়েক হাজার সামুদ্রিক পাখি হারাচ্ছি।’’
আর তাই পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে ম্যারিওন দ্বীপের ইঁদুর নিকেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তবে ইঁদুর মারার খরচও নেহাত কম নয়।
ইঁদুর-মুক্ত ম্যারিওন দ্বীপ গড়তে খরচ হতে পারে প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ ডলার। এই টাকা দিয়ে প্রায় ইঁদুর মারার ৬০ হাজার কিলো কীটনাশক কেনা হবে।
পরে সেই কীটনাশক পুঁটুলিতে ভরে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে গোলার মতো ছুড়ে দেওয়া হবে আকাশ থেকে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৭ সালের শীতকালে এই কীটনাশক ভর্তি ‘গোলা’ ম্যারিওন দ্বীপে ছোড়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওই সময়েই দ্বীপের ইঁদুরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সামুদ্রিক পাখির উপস্থিতিও কমে এসেছে।
অ্যান্ডারসনের দাবি, এই সময়ে এমন ভাবেই ওই কীটনাশক ছড়াতে হবে, যাতে দ্বীপের একটা ইঁদুরও বেঁচে না থাকে।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগে চল্লিশের দশকেও ম্যারিওন দ্বীপে ইঁদুরের উপদ্রব চরমে উঠেছিল। সেই সময়ে ইঁদুর মারতে প্রচুর বিড়াল ছাড়া হয়েছিল দ্বীপে।
তবে এতে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হয়েছিল। প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার সামুদ্রিক পাখি কমে গিয়েছিল দ্বীপ থেকে। এর পর ১৯৯১ সালেও ইঁদুর মারার ব্যবস্থা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশাসন।