সোনম ওয়াংচুককে মনে আছে? সেই সোনম, যাঁর চরিত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছিল ‘থ্রি ইডিয়টস্’ সিনেমার রঞ্চোড়দাস চাঞ্চোরের চরিত্রটি। সোনম বেশি পরিচিত তাঁর বিজ্ঞানচর্চা এবং সাধারণ জিনিসপত্র থেকে অসাধারণ সব যন্ত্র আবিষ্কার করার জন্য। আরও এক বার খবরের শিরোনামে উঠে এলেন সোনম। নেপথ্যে সেই আবিষ্কার। এ বার ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য সৌরশক্তি চালিত তাঁবু বানিয়ে শিরোনামে সোনম।
সম্প্রতি গালওয়ান উপত্যকায় চিনা অনুপ্রবেশ রুখতে সক্রিয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। আর তার জন্য তাঁদের যে সব জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে, তার কিছু কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ২০ ডিগ্রিরও নীচে। এই হিমশীতল আবহাওয়ায় ২৪ ঘণ্টা সজাগ পাহারায় দিন কাটাতে হয় সেনাবাহিনীকে। বাহিনীর কষ্ট লাঘব করার দায়ভার তাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন সোনম।
‘হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব অল্টারনেটিভ লার্নিং (এইচআইএএল) এই বিশেষ তাঁবু নিয়ে কাজ করছে যা সূর্যের থেকে শক্তি গ্রহণ করতে সক্ষম। এর ফলে ওই তাঁবু সারা দিন গরম থাকবে। ফলে কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারবেন সেনা সদস্যেরা।
এই বিশেষ সৌরশক্তিচালিত তাঁবু তৈরি করেছেন সোনম।
কী কী বিশেষত্ব আছে এই বিশেষ তাঁবুতে?
এটি একটি বহনযোগ্য তাঁবু হবে, যা সোলার প্যানেলের সাহায্যে গরম করা যাবে। তাঁবুর ওজন সর্বসাকুল্যে ৩০ কেজি। একসঙ্গে ১০ জন এই তাঁবুতে থাকতে পারবেন।
সেনা সূত্রে খবর, এই তাঁবু সেনাবাহিনীর হাতে এলে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে তাঁরা যে দাহ্য পেট্রলজাত বিভিন্ন তরল ব্যবহার করেন, তার খরচ কমবে।
হিমালয়ের বুকে জ্বালানি কম পোড়ানো হলে দূষণের মাত্রাও কমবে। পাশাপাশি জ্বালানি নষ্ট না করেও নিজেদের শরীর সহজেই গরম রাখতে পারবে সেনাবাহিনী।
এই বিশেষ তাঁবুর সামনের প্রান্তটিকে ‘গ্রিনহাউস সেকশন’ বলা হয়। সৌরশক্তি ব্যবহার করে সমস্ত তাঁবু গরম রাখাই তাঁবুর এই অংশের কাজ।
ঘুমোনোর জন্য তাঁবুর পিছনের প্রান্তে একটি ‘ঘর’ রয়েছে যেখানে সৈন্যরা রাতে ঘুমোতে পারবেন।
ঠান্ডা হিমেল বাতাসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁবুর বাইরে একটি বিশেষ আবরণের ব্যবস্থাও রয়েছে।
এই সৌরশক্তিচালিত তাঁবুর সামনের চেম্বারের দেওয়াল গরম করার জন্য দক্ষিণ দিক থেকে সূর্যের রশ্মি প্রবেশ করাতে হয়। এই দেওয়াল পলিকার্বনেটের তৈরি যা সৌররশ্মিকে চেম্বার থেকে বেরোতে দেয় না।
ধীরে ধীরে এই দেওয়াল থেকে সৌরশক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে সারা তাঁবুর ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে। ঘুমের জায়গাটি একটি বিশেষ নিরোধক দ্বারা বেষ্টিত থাকে যাতে তাপ সহজে তাঁবু ছেড়ে না বেরোতে পারে।
তাঁবুর ভিতরে ঘুমোনোর ঘরটি উত্তর দিকে অবস্থিত। তাঁবুর কাঠামো বড় হওয়ায় তাঁবুর নীচের দিক দিয়েও তাপ সহজে বেরোতে পারে না।
সোনম জানিয়েছেন, ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে সেনাবাহিনী প্রায় এক লক্ষ কিলোগ্রাম জ্বালানি পুড়িয়ে ফেলে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে। পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি এই তাঁবু সেনাবাহিনীর কর্মীদের আরও ভাল ভাবে সীমান্ত পাহারা দিতে সাহায্য করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি অন্য একটি তাঁবুও সেনাবাহিনীর ব্যবহারের জন্য আনা হবে। এই তাঁবু তৈরির জন্য খরচ হচ্ছে পাঁচ লক্ষ টাকা।
বর্তমানে সেনাবাহিনী যে লোহার তাঁবু ব্যবহার করে তা তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ন’লক্ষ টাকা।