বলিপাড়ায় তাঁর নামের সঙ্গেও জুড়ে রয়েছে ‘খান’ পদবি। তবে তিন খান— শাহরুখ, সলমন, আমিরের মতো তাঁর জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী না হলেও তিনিও বি-টাউনের প্রথম সারির নায়ক। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সিনেপাড়ায় পা রেখেছিলেন তিনি। একাধিক সুপারস্টারের সঙ্গে টক্কর দিয়ে তিনিও নিজের জায়গা পাকা করেছেন। তবে তাঁর আচরণ নিয়ে মাঝেমধ্যেই নানা অভিযোগ শোনা যায়। এই কারণে তিনি বেশ কিছু ছবির কাজও হারিয়েছিলেন। তবে তাতে তাঁর কিছু যায়-আসে না। কারণ তাঁর হাবভাবই ‘নবাব’-সুলভ। তিনি সইফ আলি খান।
অনেক সময়ই অভিনেতাদের সঙ্গে পরিচালকের মনোমালিন্যের কথা প্রকাশ্যে আসে। সইফের সঙ্গেও বলিউডের এক বিখ্যাত পরিচালকের বিবাদ বেধেছিল। যার জেরে হিন্দি চলচ্চিত্র দুনিয়ার অন্যতম সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ হারিয়েছিলেন সইফ। সেই পরিচালকের নাম সঞ্জয় লীলা ভন্সালী।
২০০৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘দেবদাস’। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান, ঐশ্বর্য রাই, মাধুরী দীক্ষিত। সেই সঙ্গে চুন্নীলালের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জ্যাকি শ্রফ।
এই ছবিতে চুন্নীলালের চরিত্রের জন্য সইফকে বেছেছিলেন ভন্সালী। সেই সময়ই সইফের সঙ্গে ভন্সালীর বিবাদ বাধে। আর যে কারণে ছবিটি হাতছাড়া হয় সইফের। সেই সঙ্গে সইফ এবং ভন্সালীর সম্পর্কের অবনতিও ঘটে। কী ঘটেছিল? সেই কাহিনিই এখানে তুলে ধরা হল।
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে বলিপাড়ায় পথচলা শুরু করেছিলেন সইফ। কিন্তু সে ভাবে বাজিমাত করতে পারছিলেন না। এর পর ২০০১ সালে মুক্তি পায় ‘দিল চাহতা হ্যায়’। এই ছবির পর থেকেই সইফের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। অভিনেতা সইফ আলাদা করে নজর কাড়ে দর্শক মহলে।
এর পর পরই ‘দেবদাস’ ছবির তোড়জোড় শুরু করেন ভন্সালী। এই ছবির জন্য শাহরুখ, ঐশ্বর্য এবং মাধুরীকে বেছে নিয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু চুন্নীলালের চরিত্রের জন্য অভিনেতা খুঁজতে গিয়ে বেগ পেতে হয় ভন্সালীকে।
প্রথমে ওই চরিত্রের জন্য গোবিন্দাকে প্রস্তাব দেন ভন্সালী। কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন ‘ডান্সিং স্টার’। এর পরই চুন্নীলালের চরিত্রের জন্য প্রস্তাব যায় সইফের কাছে।
শোনা গিয়েছিল, ‘দিল চাহতা হ্যায়’-এর সাফল্যের পর থেকেই সইফ নাকি ছবির জন্য বাড়তি পারিশ্রমিক চাইতেন প্রযোজক, পরিচালকদের কাছ থেকে। এমনকি, তাঁর আচরণও নাকি পাল্টাচ্ছিল। যাকে বলে কিনা ‘অ্যাটিটিউড প্রবলেম’।
সইফের আচরণ সম্পর্কে জানার পরও ছবির স্বার্থে তাঁকেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভন্সালী। কিন্তু, ওই চরিত্রের জন্য বিশাল অঙ্কের পারিশ্রমিক চান সইফ। তাতে রাজি হননি পরিচালক।
এর পরই চুন্নীলালের চরিত্রের জন্য অন্য অভিনেতার খোঁজ শুরু করেন ভন্সালী। অন্য দিকে, সইফ ভাবেন যে, হয়তো ভন্সালী নিজে তাঁকে সমঝোতার জন্য অনুরোধ করবেন। সইফ নাকি এমনটাও ঠিক করেন যে, ভন্সালী যদি নিজে পারিশ্রমিক কমানোর কথা বলেন, তা হলে তাতে রাজি হয়ে যাবেন। কিন্তু এমনটা হয়নি।
এর পর ভন্সালীর তরফ থেকে কোনও সাড়া না মেলায় নিজেই পরিচালকদের ‘টিম’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সইফ। তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া চরিত্রটির কী হল, সে নিয়ে জানতে চান অভিনেতা। আর তখনই সইফ জানতে পারেন যে, ওই চরিত্রের জন্য জ্যাকি শ্রফকে বেছে নিয়েছেন ভন্সালী।
এ কথা জানার পর রেগে যান সইফ। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানিয়েছিলেন যে, ভন্সালীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এমনকি, বেশি পারিশ্রমিক চাওয়ার তত্ত্বও অস্বীকার করেন সইফ।
সইফ আরও দাবি করেন যে, তিনি ভেবেছিলেন, ভন্সালীর পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হবে। কিন্তু, সরাসরি তাঁকে বাদ দেওয়া হল। ভন্সালীর এ হেন আচরণ একেবারেই ভাল ভাবে নেননি সইফ। আর তার পর থেকেই অভিনেতা এবং পরিচালকের সম্পর্কে ছেদ পড়ে।
এক সাক্ষাৎকারে সইফ এ-ও বলেন যে, চুন্নীলালের চরিত্র হাতছাড়া হওয়ায় তাঁর কোনও আফসোস নেই। এ জন্য তাঁর কোনও দুঃখও নেই বলে জানান অভিনেতা।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক ছবির প্রস্তাব পেয়েও সেই ছবিতে কাজ করতে পারেননি সইফ। কেরিয়ারের একেবারে শুরুতে ‘বেখুদি’ সিনেমায় নায়কের চরিত্রে কিছুটা শুটিং করেছিলেন সইফ। ওই ছবির হাত ধরে রুপোলি পর্দায় প্রথম পা রেখেছিলেন কাজল।
শোনা যায়, সইফের অপেশাদারিত্বের কারণে শুটিংয়ের মাঝপথে তাঁকে ছবি থেকে সরিয়ে দেন পরিচালক রাহুল রাওয়াইল।
এর পর ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ সিনেমায় সলমন খানের চরিত্রের জন্য ভাবা হয়েছিল সইফকে। কিন্তু সেই ছবির সুযোগও হারিয়েছিলেন সইফ। তবে এই ছবি হারিয়ে খুব একটা বিপাকে পড়েননি সইফ। বরং নবাবোচিত ভাবেই নিজের মতো করে বলিউড দাপিয়েছেন।
সইফের সঙ্গে ভন্সালীর যেমন ‘অম্লমধুর’ সম্পর্ক, তেমনই পরিচালকের সঙ্গে একই সম্পর্ক সইফ-ঘরনি করিনা কপূর খানেরও। ‘দেবদাস’ ছবির জন্য নাকি করিনার লুক টেস্ট করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরও তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। পরে ‘রামলীলা’ ছবির শুটিং শুরুর ১০ দিন আগে পিছু হঠেন করিনা। আর এ নিয়ে করিনা এবং ভন্সালীর সম্পর্ক তিক্ত হয়।