Australia PM XI vs India

সচিনকে ফেরান অল্প রানে, সতীর্থ ছিলেন ওয়ার্ন-হেডেন! উপেক্ষিত ক্যাঙারু ক্রিকেটার এখন আইনজীবী

প্রধানমন্ত্রী একাদশের হয়ে দ্রুত সচিনকে সাজঘরে পাঠানো ক্রিকেটার কখনওই জাতীয় দলে জায়গা পাননি। অথচ ওয়ার্ন থেকে হেডেন— অনেকের সঙ্গেই খেলেছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৪০
Share:
০১ ২৪

স্বয়ং ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’ সচিন তেন্ডুলকরকে সাজঘরের রাস্তা দেখিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ২৭ রানে ৭ উইকেট নেওয়ায় তাঁকে ঘিরে শুরু হয় হইচই। কিন্তু তার পরেও নির্বাচকদের নজর কাড়তে ব্যর্থ হন। ফলে জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় তাঁর।

০২ ২৪

তিনি হতভাগ্য অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার গ্রেগ রোয়েল। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী একাদশের হয়ে মানুকা ওভালে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলেন তিনি। যেখানে নজরকাড়া পারফরম্যান্সে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন রোয়েল। যদিও চিরকাল থেকে গিয়েছেন উপেক্ষিতদের দলে।

Advertisement
০৩ ২৪

৩৩ বছর পর ফের সেই মানুকা ওভালেই প্রদর্শনী ম্যাচ খেলল অস্ট্রেলিয়া সফরকারী কোহলি-বুমরাদের ভারত। এ বার অবশ্য প্রধানমন্ত্রী একাদশের অসি টিমকে হারাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি টিম ইন্ডিয়াকে। যদিও ওই ম্যাচ চলাকালীন বার বার ঘুরেফিরে এসেছে রোয়েলের কথা।

০৪ ২৪

৬০ ছুঁইছুঁই রোয়েল বর্তমানে সফল আইনজীবী। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম কর্মকর্তা তিনি। ১৯৯১ সালের ম্যাচের কথা ওঠায় স্মৃতির সাগরে ডুব দেন এককালের সাড়া ফেলে দেওয়া এই ক্রিকেটার। সচিনের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতার কথাও সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন প্রাক্তন অসি পেসার।

০৫ ২৪

রোয়েলের কথায়, ‘‘তেন্ডুলকর তখনও বড় নাম নয়। বরং রবি শাস্ত্রীর খ্যাতি ছিল অনেক বেশি।’’ ওই ম্যাচ যখন খেলা হয়েছিল, তখন সদ্য ১৮-য় পা রেখেছেন সচিন। আর রোয়েল ২৭ বছরের তরতাজা যুবক। প্রধানমন্ত্রী একাদশের বিরুদ্ধে একেবারেই জ্বলে ওঠেনি ‘মাস্টার ব্লাস্টার’-এর ব্যাট।

০৬ ২৪

প্রদর্শনী ম্যাচে রোয়েলের বলে অল্প রানে সাজঘরে ফিরতে হলেও পরের দু’টি টেস্টেই নিজের জাত চিনিয়ে দেন তেন্ডুলকর। পার্‌থ ও সিডনিতে শতরান করেন তিনি। রোয়েলের কথায়, ‘‘সিরিজ়টা শেষ হতে হতে আমরা বুঝে গিয়েছিলাম, সচিন ছেলেটা আসলে কে!’’

০৭ ২৪

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী একাদশে জায়গা পাওয়া তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে থাকে বড় সুযোগের হাতছানি। ম্যাচে ভাল পারফরম্যান্স করতে পারলেই খুলে যায় জাতীয় দলের দরজা। তা ছাড়া সিনিয়র দলের সঙ্গে অনুশীলন এবং মাঠে নামার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁদের।

০৮ ২৪

রোয়েল বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী একাদশের ম্যাচ দেশ জুড়ে টিভিতে সম্প্রচারিত হয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের কাছে এটা একটা বিরাট পাওনা। এটা এমন একটা ম্যাচ যেখানে দেশ আপনাকে দেখছে এবং বিচার করছে।’’ রোয়েল ছাড়াও ওই দলে ছিলেন শেন ওয়ার্ন, ডেমিয়েন মার্টিন, ম্যাথু হেডেনের মতো কিংবদন্তিরা।

০৯ ২৪

ক্যাঙারু দেশের রাজধানী শহর ক্যানবেরায় বড় হয়েছেন রোয়েল। যদিও সিডনিতেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতেন তিনি। ১৯৯১ সালের প্রদর্শনী ম্যাচে সতীর্থ হিসাবে সোনালি চুলের ডেমিয়েন ফ্লেমিং, গ্রেগ ব্লিউয়েটদের পেয়েছিলেন তিনি।

১০ ২৪

প্রদর্শনী ম্যাচ শেষে রোয়েলের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন রবি শাস্ত্রী। স্মৃতিচারণার সময়ে সে কথা জানাতে ভোলেননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘শাস্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা ছিল একটা বিরাট পাওনা। খেলার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কয়েক জন রাজনীতিবিদের সঙ্গে সাজঘরে এসেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতাও ভোলার নয়।’’

১১ ২৪

প্রধানমন্ত্রী একাদশে খেলার কয়েক বছর পর অস্ট্রেলিয়া এ দলে সুযোগ পান রোয়েল। ওয়ার্ল্ড সিরিজে জাতীয় দলের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন তিনি। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল তিন রান। ক্রিজে তখন স্টিভ ওয় ও ইয়ান হিলি। আর তখনই বিষাক্ত ইয়র্কারে কাজ হাসিলের চেষ্টা করেন রোয়েল।

১২ ২৪

স্মৃতির পাতা উল্টোতে গিয়ে ওই ম্যাচের কথাও বলেছেন উপেক্ষিত অসি ক্রিকেটার। ভিডিয়ো রেকর্ডিং দেখিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘প্রথম বলটা প্রায় ইয়র্কার হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বলটা আমার একই রকম করা উচিত হয়নি। হয়তো হিলি বুঝতে পেরেছিলেন। হাত ফস্কে সেটা ফুলটস হয়ে যায়।’’

১৩ ২৪

এর পরই নাটকীয় মোড় নেয় ম্যাচ। চালিয়ে খেলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের উপর দিয়ে রোয়েলের বলকে সীমানার বাইরে পাঠান বহু যুদ্ধের নায়ক হিলি। এর জেরেই জাতীয় দলের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে ওই ম্যাচে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুবই হতাশ ছিলেন রোয়েল।

১৪ ২৪

অসি ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় বহু বার ভারতে এসেছেন এই উপেক্ষিত ক্রিকেটার। ‘‘আইনজীবী খেলোয়াড় হিসাবে পৃথিবীর নানা দেশে গিয়েছি। অনেকেরই হয়তো জানা নেই, আইনজীবীদেরও একটা বিশ্বকাপ রয়েছে।’’ স্মৃতিচারণায় যোগ করেছেন রোয়েল।

১৫ ২৪

উল্লেখ্য, এ বারের প্রধানমন্ত্রী একাদশের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে প্রথামাফিক অসি রাষ্ট্রপ্রধান অ্যান্টনি আলবানিজ়ের সঙ্গে দেখা করে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল। সেখানে পার্‌থে করা শতরানের জন্য বিরাটের সঙ্গে মজা করতে দেখা যায় তাঁকে।

১৬ ২৪

অসি প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ় কোহলিকে বলেছেন, তাঁর ব্যাট জ্বলে ওঠায় শোকে মুহ্যমান ‘ব্যাগি গ্রিনস্’। উচ্ছ্বসিত বিরাটের তৎক্ষণাৎ জবাব ছিল, সব সময়ে জীবনে কিছু মশলা তো থাকতেই হবে। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলে হো হো করে হেসে ওঠেন।

১৭ ২৪

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট-পাগল প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রবার্ট মেনজ়িস। মূলত তাঁর উদ্যোগেই সফরকারী দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী একাদশ খেলার সূচনা হয় ক্যাঙারুর দেশে। পরবর্তী কালে প্রথামাফিক এক রকম বাধ্যতামূলক ভাবে তা চালিয়ে গিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।

১৮ ২৪

সালটা ছিল ১৯৫১। ওই সময়ে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল দেশের মাটিতেই ছিল। মেনজ়িস দেখলেন, সিরিজ়ের মাঝে কয়েকটা দিন রয়েছে যখন কারও ক্রিকেট নিয়ে মাথাব্যথা থাকে না। ওই সময়ে ক্যানেবেরায় ম্যাচের আয়োজন করেন তিনি।

১৯ ২৪

বিষয়টি নিজের লেখা ‘দ্য মেজার অফ ইয়ারস’ বইয়ে তুলে ধরেন মেনজ়িস। ম্যাচের আয়োজনের জন্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যানকে ফোন করেন তিনি। খেলোয়াড়দের পরিবহণ খরচ ব্যক্তিগত ভাবে বহন করার আশ্বাস দেন তৎকালীন অসি প্রধানমন্ত্রী।

২০ ২৪

পাশাপাশি, ক্যানবেরার প্রদর্শনী ম্যাচে অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার, কয়েক জন সাংসদ এবং স্থানীয় ক্রিকেটারেরা খেলবেন বলে ঠিক করেন মেনজ়িস। এই খেলা থেকে উপার্জিত অর্থ ক্যানবেরা লিগ্যাসি ক্লাবে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। শিশু ও বিধবাদের জন্য ওই টাকা খরচ হবে বলে ঠিক হয়।

২১ ২৪

১৯৬৩ সালে প্রধানমন্ত্রী একাদশের হয়ে খেলেন কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যান। তখন অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। ম্যাচে চার রানের মাথায় আউট হন ডন। ঘটনাচক্রে আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ১০০ গড়ের জন্য ওই চারটি রানই প্রয়োজন ছিল তাঁর।

২২ ২৪

মেনজ়িসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী একাদশের খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৮৩ সালে ফের তা চালু করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান বব হক। ওই বছর শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে শতরান করেন ডেভিড বুন। পরবর্তী কালে ব্যাগি গ্রিনদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।

২৩ ২৪

রোয়েল জানিয়েছেন, দাদার সঙ্গে ’৮৩-র প্রদর্শনী ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটারদের দেখতে বেশি ভিড় হয়েছিল। কে ছিলেন না সেই দলে! ভিভ রিচার্ডস, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং। সম্ভবত অ্যান্ডি রবার্টসও ম্যাচটি খেলেছিলেন।’’

২৪ ২৪

ওই সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সদ্য অবসর নিয়েছেন ডেনিস লিলি। ক্যানবেরায় তাঁর ভক্তের সংখ্যা কম ছিল না। প্রদর্শনী ম্যাচে সেই লিলিও জার্সি পরে মাঠে নেমে পড়েন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেফ থমসনও।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement