রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সেনার সাফল্য উদ্যাপন করে চলছিল অনুষ্ঠান। মঞ্চে তখন চলছিল নাটক। আচমকাই ইউক্রেনের হামলা। নিহত হলেন রুশ অভিনেত্রী পোলিনা মেনশিখ। তাঁর মৃত্যুর কথা জানিয়েছে নাট্যগোষ্ঠী। যদিও নীরব রাশিয়া।
রাশিয়া অধিকৃত ডোনেৎস্ক অঞ্চলে ১৯ নভেম্বর এই হামলা হয়েছিল। সেখানে কুমাচোভো গ্রামে রুশ সেনাবাহিনীর ৮১০তম মেরিন ব্রিগেডকে সম্মান জানাতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
সেই অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন ৪০ বছরের অভিনেত্রী পোলিনা। ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, তাদের হাইমার্সের হামলায় অভিনেত্রী পোলিনা ছাড়াও অন্তত ২৫ জন রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে। যদিও রাশিয়া এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। সেনা-মৃত্যুর বিষয়েও মুখ খোলেনি।
একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আনন্দবাজার অনলাইন তার সত্যতা যাচাই করেনি। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে মঞ্চের উপর গিটার হাতে গান গাইছিলেন এক অভিনেত্রী। মনে করা হচ্ছে তিনি পোলিনা। তাঁর গানের মাঝেই শোনা যায় বিকট শব্দ। গোটা প্রেক্ষাগৃহ আলোকিত হয়ে ওঠে।
পোলিনাকে এর পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। রুশ সংবাদমাধ্যম তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গত ১৫ বছর ধরে নাটকের সঙ্গে যুক্ত পোলিনা। মস্কোয় একটি নাট্যদল প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি ব্যালে, অভিনয়, নাচ শেখান তিনি।
সেন্ট পিটার্সবার্গের যে নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পোলিনা, তারাও সোমবার বিবৃতি দিয়ে তাঁর মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, পোলিনা মেনশিখ, আমাদের নাটক ‘দ্য লাস্ট টেস্ট’ পরিচালনাও করেছিলেন, গত কাল ডনবাস অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মারা গিয়েছেন।’’
নাট্যদলের তরফে এ-ও জানানো হয়েছে, আগামী ৯ ডিসেম্বর পোলিনার স্মৃতির উদ্দেশে ওই নাটক ‘দ্য লাস্ট টেস্ট’ মঞ্চস্থ হবে।
রাশিয়ার সেনাবাহিনী বা সরকার এই নিয়ে কোনও কথা বলেনি। তবে ইউক্রেন সেনার এক কমান্ডার রবার্ট ব্রোভদি দাবি করেছেন, তাদের হামলায় ২৫ জন রুশ সেনা মারা গিয়েছেন। শতাধিক জওয়ান আহত হয়েছেন।
চলতি মাসেই ইউক্রেনের ১২৮তম সেপারেট মাউন্টেন অ্যাসল্ট ব্রিগেডের উপর হামলা চালায় রুশ সেনা। তাতে ১৯ জন ইউক্রেন সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছিল ইউক্রেন।
ইউক্রেন সেনার কমান্ডার ব্রোভদি সমাজমাধ্যমে দাবি করেন, ওই হামলার প্রতিশোধ নিতেই কুমাচোভো গ্রামে রুশ সেনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে।
বুধবার ইউক্রেন সেনার তরফে সরকারি ভাবে বিবৃতি দিয়ে এই হামলার কথা জানানো হয়েছে। সমাজমাধ্যমে তারা জানিয়েছে, ‘‘রুশদের উদ্যাপনকে উষ্ণ ভাবে অভিনন্দন জানিয়েছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী।’’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘এই ট্র্যাজেডি এড়িয়ে যাওয়া যেত।’’
এই পোস্ট দেখে চটেছেন বহু রুশ নাগরিক। ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ওই অনুষ্ঠানস্থলের দূরত্ব ছিল ৬০ কিলোমিটার। এই যুদ্ধ আবহে কী ভাবে ও রকম জায়গায় অত জন জওয়ানের জমায়েত হল, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
২০১৪ সাল থেকে পূর্ব ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক অঞ্চল রাশিয়ার দখলে। গত কয়েক মাসে এই অঞ্চলে বার বার ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে আভডিকা আর বাখমুট শহরে। সে কারণেই এ রকম সংবেদনশীল এলাকায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা নিয়ে সরব বহু রুশ নাগরিক। তাঁরা এর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। পাল্টা হামলা চালায় ইউক্রেনও। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত নিহত শয়ে শয়ে মানুষ। ইউক্রেনে ঘরছাড়া কয়েক হাজার।