পোশাকি নাম টুপোলেভ টিইউ-১৬০এম। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে বিশ্ব জুড়ে ‘হোয়াইট সোয়ান’ (সাদা রাজহাঁস) নামে পরিচিতি পেয়েছে রাশিয়ার এই সুপারসনিক বোমারু বিমান।
সোমবার মস্কো ঘোষণা করেছে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এই ‘স্ট্র্যাটেজিক বম্বার’-এর সফল উড়ানের কথা। বলা হয়েছে, পরমাণু অস্ত্র নিয়েই সফল ভাবে উড়েছে টিইউ-১৬০এম।
ইতিমধ্যেই রুশ প্রতিরক্ষা দফতর ৫০টি বিমানের বরাত দিয়েছে নির্মাতা সংস্থা ‘ইউনাইটেড এয়ারক্র্যাফ্ট কর্পোরেশন’-কে। জল্পনা, ইউক্রেন যুদ্ধ ‘নজরে’ রেখেই এই তৎপরতা।
টিইউ-১৬০এম-এর পূর্ববর্তী সংস্করণ টিইউ-১৬০ সোভিয়েত ইউনিয়ন জমানায় কাজ শুরু করেছিল। এই সিরিজ়ের মোট ৩৯টি বোমারু বিমান বানিয়েছিল ‘কাজ়ান এয়ারক্র্যাফ্ট প্রোডাকশন অ্যাসোসিয়েশন’।
সত্তরের দশকে আমেরিকার তৈরি ‘রকওয়েল বি-১ ল্যান্সার’ বোমারু বিমানের নকশা অনুসরণ করে টিইউ-১৬০ বানিয়েছিল মস্কো।
আশির দশকের শেষ পর্বে সোভিয়েত বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়া টিইউ-১৬০ পশ্চিমি দুনিয়ায় ‘ব্ল্যাকজ্যাক’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং দ্রুতগামী সুপারসনিক বোমারু বিমান হিসাবে পরিচিত।
১৯৮১ সালে টিইউ-১৬০-এর প্রথম পরীক্ষামূলক উড়ান হয়। ১৯৮৭ সালে সোভিয়েত বায়ুসেনায় ঠাঁই পায়। প্রতিকূল আবহাওয়ায়, যে কোনও ভৌগোলিক অবস্থানে এই বিমান নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালাতে পারে।
পঞ্চাশের দশকে রুশ বায়ুসেনার ব্যবহৃত ভারী বোমারু বিমান টুপোলেভ টিইউ-৯৫এম-এর কিছু আধুনিকীকরণ করে তৈরি করা হয়েছিল টিইউ-১৬০ বোমারু বিমান।
ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২০০ কিলোমিটার বেগে উড়ে টিইউ-১৬০ সাড়ে ৭ হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ‘কার্পেট বম্বিং’ করতে পারে। ধ্বংস করতে পারে গোটা একটি শহর।
২৭৫ টন অ-পরমাণু বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে টিইউ-১৬০। টানা উড়তে পারে ১২,৩০০ কিলোমিটার। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ ধরনের ভারী বোমারু বিমান ব্যবহারে কিছু অসুবিধা রয়েছে।
ভারী ওজন এবং তুলনামূলক কম গতির কারণে আকাশে শত্রুর আধুনিক যুদ্ধবিমানের ‘সহজ শিকার’ হতে পারে টিইউ-১৬০। ফলে শত্রুর আকাশসীমায় ঢুকে বোমাবর্ষণের সময় এর ‘সুরক্ষার’ জন্য পাঠাতে হয় যুদ্ধবিমান।
বর্তমানে ভারত-সহ বহু দেশের বিমানবাহিনী ফাইটার বা বম্বারের বদলে বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য বিমান (মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট) ব্যবহার করে। রাফাল তেমনই একটি বিমান।
তবে সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আবার ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য বোমারু বিমান কেনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আর পছন্দের শীর্ষে রয়েছে এই টিইউ-১৬০।
পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম টিইউ-১৬০এম অবশ্য এখনও কোনও দেশকে বিক্রির প্রস্তাব দেয়নি মস্কো। এই বিমানের মূল অস্ত্র ২,০০০ কিলোমিটার পাল্লার কেএইচ-৪৭এম২ কিঞ্ঝল পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র।
ইউক্রেনের রাজধানী কিভের বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ কেন্দ্রগুলি ধ্বংস করতে চলতি মাসে হামলা চালিয়েছে টিইউ-১৬০এম। তবে পরমাণু বোমার বদলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ-পরমাণু বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে রুশ ফৌজ।
প্রাথমিক ভাবে কিভ-সহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে আকাশ-হামলা চালাতে ইরানের কামিকাজ়ে (শাহিদ ১৩৬) ড্রোন ব্যবহার করছিল রাশিয়া। কিন্তু ধ্বংসের তীব্রতা বাড়াতে যুদ্ধে নামানো হয়েছে নয়া বোমারু বিমান।