‘তুম বিন’ ছবির ‘পিয়া’কে মনে পড়ে? মিষ্টি হাসির সুন্দরী নায়িকা। প্রথম ছবিতে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েও যিনি রূপোলি জগত থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। যাঁকে দেখার জন্য ভক্তরা মুখিয়ে থাকলেও তিনি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন বলিউড থেকে। সেই ‘পিয়া’ এখন কোথায়? কী করছেন? পর্দা থেকে সরে গিয়েছিলেন যে কারণে, তাতে সফল হয়েছিলেন কি!
‘তুম বিন’-এর পিয়া বাস্তবে সন্দলি সিন্হা। সন্দলি এখন এক জন সফল ব্যবসায়ী। দেশের সবচেয়ে বড় বেকারির মালকিন তিনি। কিন্তু অভিনেতা থেকে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার এই সফর কেমন ছিল?
ফিল্ম জগতে স্বপ্নের শুরু বলতে যা বোঝায়, তা-ই হয়েছিল সন্দলির। প্রথম ছবিতেই কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন।
স্বজনপোষণের অভিযোগে ধ্বস্ত বলিউডে স্বপ্নের ডেবিউ সাধারণত তারকা সন্তানদেরই হয়ে থাকে। নিন্দকেরা এমনটাই বলে থাকেন। সন্দলিকে সেই ধারার ব্যতিক্রম বলা যেতে পারে। তিন জন নায়কের বিপরীতে এক জন নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ছবিও ব্লকবাস্টার হিট।
অথচ সন্দলির কোনও তথাকথিত ফিল্মি যোগাযোগ ছিল না। বাবা ছিলেন বায়ুসেনার অফিসার। পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই হয় চিকিৎসক নয় বিমানচালক। সন্দলি নিজেও অভিনয়ের কথা ভাবেননি। বরং তিনি ঠিক করেছিলেন চিকিৎসক হবেন।
ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছিলেন। কর্তব্যরত অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। সন্দলি এবং তাঁর বোনকে একাই মানুষ করেছিলেন তাঁদের মা। বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তখনও ছিল।
কিন্তু সেই ইচ্ছে বদলে যায় কলেজে পড়ার সময়। নেহাতই শখে দু’এক বার হেঁটেছিলেন র্যাম্পে। তাতেই মডেলিংয়ে উৎসাহী হন। সন্দলি তখন দিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজের ছাত্রী। পড়াশোনা শেষ করে কিশোর নমিত কপূরের অভিনয়ের স্কুলে ভর্তি হয়ে যান।
‘তুম বিন’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার আগে স্রেফ একটি মিউজিক ভিডিয়োতে কাজ করেছিলেন সন্দলি। সোনু নিগম-এর প্রথম গানের অ্যালবাম ‘দিওয়ানা’-র জন্য নতুন মুখের খোঁজ করছিলেন পরিচালক অনুভব সিংহ।
সেই প্রথম কাজ সন্দলির। পরে ‘তুম বিন’ ছবির নায়িকার চরিত্রের জন্যও সন্দলিকেই বেছে নেন অনুভব। তিনিই ছিলেন ছবির পরিচালক।
‘তুম বিন’-এর গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র পিয়া। তারই জীবনের নানা ওঠা পড়া নিয়ে কাহিনি। পিয়ার চরিত্র রাতারাতি বিখ্যাত করে তোলে সন্দলিকে। ভারতীয় সিনেমার দর্শকরা প্রথম ছবিতেই ভালবেসে ফেলেন তাঁকে।
কিন্তু তার পর আর একটিও হিট ছবি দিতে পারেননি সন্দলি। বলিউড ছেড়ে ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখেছিলেন দক্ষিণী ছবিতেও। কিন্তু সেখানেও হিট ছবির শিকে ছেঁড়েনি। অথচ তত দিনে তাঁর করা একটি ছবি জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছে। প্রশংসিত হয়েছে সন্দলির অভিনয়ও।
২০০৫ সালে শেষ ছবি করেন সন্দলি। সেই ছবিও হিট না হওয়ায় অভিনয় থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ওই বছরই বিয়ে করেন এক ব্যবসায়ীকে। নাম কিরণ সালাসকর।
পরের ১৫ বছরে অনেকেই ভুলতে বসেছিলেন সন্দলিকে। মনে পড়িয়ে দেন তিনি নিজেই। ‘তুম বিন’ ছবির সিক্যুয়েলে অতিথি শিল্পী হিসেবে হাজির হন তিনি। তবে একই সঙ্গে জানিয়ে দেন অভিনয়ে ফেরার ইচ্ছে নেই তাঁর।
তত দিনে তিন সন্তানের মা হয়েছেন সন্দলি। ব্যবসায়ী স্বামীর বেকারির ব্যবসা কাঁধে তুলে নিয়েছেন। মন দিয়েছেন নতুন কাজে। দেশের সবচেয়ে বড় বেকারি কান্ট্রি অফ অরিজিন। সন্দলি তার মালকিন। এ ছাড়া মুম্বইয়ে একটি স্পা-ও রয়েছে তাঁর।
তবে সফল হলেও আলোর সঙ্গে আড়ি করেছেন। তাঁর বেকারি দেশের সবচেয়ে বড় বেকারি হতে পারে কিন্তু সেই সাফল্যের কৃতিত্ব ফলাও করেন না। নেটমাধ্যমে সক্রিয়। তবে তাঁর সব অ্যাকাউন্টই ব্যক্তিগত। সবাইকে সেখানে উঁকি দেওয়ার সুযোগ দেননি সন্দলি। এক সময়ে পর্দায় নিজেকে মেলতে চেয়েছিলেন এখন আড়ালের সঙ্গেই তাঁর ভাব।