সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আর্থিক দুর্নীতির তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর কর্মকাণ্ড নিয়ে সারা দেশ উত্তাল। দেশের সর্বদলীয় নেতাবৃন্দ থেকে শুরু করে সাধারণ দেশবাসীর নজর, এখন একই দিকে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমান শিল্পমন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি।
সিবিআই এফআইআর করার পরেও স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ২০২২ সালের এপ্রিল মাস থেকেই মন্ত্রী পার্থ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের উপর নজরদারি শুরু করে ইডি। তল্লাশি চালানোর পর ‘মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ’ এক অভিনেত্রী-মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের আবাসন থেকে সাড়ে ২২ কোটি টাকা, দেড় কেজি সোনার গয়না, সম্পত্তির দলিল-সহ লক্ষাধিক ডলার মূল্যের বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে ইডি।
সব মিলিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা তদন্তকারীরা উদ্ধার করলেও তাঁদের দাবি, যে পরিমাণ টাকা ও সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে, তা সামান্য। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের বাড়ি তল্লাশি করলে আরও টাকার খোঁজ মিলতে পারে বলেই ইডির দাবি।
এই ঘটনা প্রতি মুহূর্তে নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। ইডির এই পদক্ষেপে রাজ্যে এক চাঞ্চল্যকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে, টাকা উদ্ধারের ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগেও ইডি কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছে।
জুলাই মাসের শুরুতেই উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং দক্ষিণের রাজ্যগুলির অম্তর্গত মোট ৪০টি জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি। ‘ভিভো’-সহ অন্যান্য চিনা সংস্থা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদেশে অনৈতিক পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন করছে।
সিবিআই-ও এর বিরুদ্ধে পৃথক ভাবে এফআইআর করেছে। স্মার্টফোন সংস্থা শাওমি ইন্ডিয়ার ৫,৫৫১ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তদন্তে জানা যায়, নিজস্ব সুবিধার জন্য তিনটি বিদেশি সংস্থাকে টাকা পাঠিয়েছে ইডি।
যদিও শাওমির তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, তাদের সংস্থা সরকারি কর্তৃপক্ষের এই আদেশ সম্পর্কে অবগত। তবে তাদের ধারণা, ব্যাঙ্কে দেওয়া বিবৃতিগুলি সবই বৈধ। শাওমির তরফে যে রয়্যালটি পেমেন্ট দেওয়া হয়েছিল, তা লাইসেন্সধারী সংস্থাকেই পাঠানো হয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষকে সব রকম ভাবে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যাতে কোনও ভুল বোঝাবুঝি না হয়।
কিন্তু ইডি জানিয়েছে, বিভিন্ন ভুয়ো নথিপত্র তৈরি করে বিদেশি সংস্থাগুলিকে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠিয়েছে শাওমি। এমন বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর সময় বহু বিভ্রান্তিকর তথ্যও দিয়েছে স্মার্টফোন সংস্থাটি। জানা গিয়েছে, এই সংস্থাগুলি থেকে কোনও পরিষেবাই নেয়নি শাওমি।
পশ্চিমবঙ্গের রেশমি গ্রুপ সংস্থার বিরুদ্ধে অনৈতিক অর্থপাচারের মামলা দায়ের করে সিবিআই। রেশমি সিমেন্ট লিমিটেড এবং রেশমি মেটালিক লিমিটেড সংস্থা অফিসে তল্লাশি চালায়। ইডির দাবি, এই সংস্থাগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি থেকে ৯৫ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও রাজ্যের ১৩টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ১.০১ কোটি টাকা পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
ভারত ও বিদেশে নীরব মোদীর ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে মোট ২,৩৯৬.৪৫ কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করেছিল ইডি। নীরব মোদী নানা সংস্থার উপর ইডি বহু দিন থেকেই নজর রেখেছে। ইতিমধ্যেই ২৫৩.৬২ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি উদ্ধার করেছে ইডি। এ ছাড়াও সোনাদানা-সহ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আমানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এমনকি, আইএএস অফিসারও বাদ পড়েননি ইডির নজরদারি থেকে। ৪৪ বছর বয়সি ঝাড়খণ্ডের আইএএস আধিকারিক তথা খনি সচিব পূজা সিঙ্ঘলকে গ্রেফতার করে ইডি। বিহার ও ঝাড়খণ্ড এলাকায় ১০০ দিনের মনরেগা প্রকল্পের আওতায় যে বিপুল পরিমাণ টাকা সরকারের তরফে আসে, তা নয়ছয় করছেন সরকারি আধিকারিকরা।
পূজার বিরুদ্ধেও এমনই অভিযোগ এনেছিল ইডি। জানা যায়, এই ঘটনার পর রাজ্য সরকার তাঁকে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস থেকে সাসপেন্ড করেছে। ২০১২ সাল থেকেই মনরেগা প্রকল্পের অর্থ তছরুপ মামলার উপর নজরদারি শুরু করে ইডি।
তদন্ত চলাকালীন প্রায় ১৫০ কোটি টাকার হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির খোঁজ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব, ঝাড়খণ্ড ও দিল্লি-সহ দেশের মোট ১৮টি জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি।
নগদ ১৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয় পূজার বাড়ি থেকে। তাঁর স্বামীর বাড়ি এবং অফিস থেকেও ১৭ কোটি ৭৯ লক্ষ নগদ টাকা পায় ইডি। হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে ইডি পূজাকে গ্রেফতার করে।
অভিযোগ ছিল, ঝাড়খণ্ডে অনৈতিক ভাবে খননকার্য চালানো হচ্ছে বহু দিন ধরে। ইডির নজরে পড়তেই সাহেবগঞ্জ, মির্জা চৌকি, রাজমহল-সহ ঝাড়খণ্ডের ১৯টি জায়গায় তল্লাশি চালায় তদন্তকারীরা। ইডির দাবি, ১১ কোটি ৮৮ লক্ষ নগদ অর্থ-সহ মোট ৩৬ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আমানত বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।