সিডনির একটি ভল্টের ভিতরে তালাবদ্ধ রয়েছে ব্রিটেনের সদ্য প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের লেখা একটি গোপন চিঠি। মজার বিষয় হল, রানি এই চিঠিতে কী লিখে গিয়েছেন, তা আগামী ৬৩ বছর জানা যাবে না। কারণ আগামী ৬৩ বছর খোলা হবে না এই ভল্ট।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম সেভেন নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই চিঠি সিডনির একটি ঐতিহাসিক ভবনের ভল্টের ভিতরে রয়েছে। ১৯৮৬ সালের নভেম্বরে তিনি এই চিঠিটি লিখেছিলেন। সিডনির সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশে এই চিঠিটি লিখেছিলেন ব্রিটেনের প্রাক্তন রানি।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ-ও দাবি করা হয়েছে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছাড়া আর কেউই জানতেন না যে, এই চিঠিতে আসলে কী লেখা রয়েছে। এমনকি, রানির ব্যক্তিগত কর্মীরাও এই চিঠির বিষয়ে বিশদে কিছু জানেন না। একটি নিরাপদ জায়গায় একটি কাচের বাক্সের মধ্যে এই চিঠি লুকিয়ে রাখা আছে।
শুধু একটি বিষয়ে সকলে নিশ্চিত যে, ২০৮৫ সাল পর্যন্ত এই কাচের বাক্স খোলা সম্ভব নয়।
কিন্তু কেন ২০৮৫ সালের আগে এই চিঠি খুলে প়ড়া সম্ভব নয়? কারণ জানালেন সিডনির লর্ড মেয়র ক্লোভার মুর।
ক্লোভার জানান, এই চিঠি লেখার সময় রানি নির্দেশ দিয়েছিলেন, ২০৮৫ সালে প্রশাসনের তরফে ঠিক করা একটি নির্দিষ্ট দিনে যেন এই চিঠি খোলা হয়। একই সঙ্গে ওই একই দিনে যেন সিডনির জনসাধারণের উদ্দেশে তাঁর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়।
ক্লোভার আরও জানান, এই চিঠির উপর রয়েছে রানির সাদামাটা স্বাক্ষর।
ব্রিটেনের রানি থাকাকালীন দ্বিতীয় এলিজাবেথ মোট ১৬ বার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ শুক্রবার বলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় রানির প্রথম সফর বিখ্যাত ছিল। প্রথম সফরের পর আরও ১৫ বার অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন তিনি। তিনিই একমাত্র শাসক যিনি এত বার অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন। আর এর থেকেই এটা স্পষ্ট যে অস্ট্রেলিয়ার জন্য তাঁর হৃদয়ে বিশেষ জায়গা ছিল।’’
অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের পদে ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৯৯ সালে রানিকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরানোর বিষয়ে গণভোট হয়। কিন্তু এই নির্বাচনে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল রানিকে রাষ্ট্রপ্রধান রাখার পক্ষেই।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার সিডনির প্রসিদ্ধ ‘অপেরা হাউস’-এ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোকসজ্জায় সাজানো হয় এই ভবন।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের তরফে রবিবার নতুন রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রাজা তৃতীয় চার্লসের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতিবেশী কমনওয়েলথ দেশ নিউজিল্যান্ডও রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজা চার্লস তৃতীয়কে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছে।
৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে মারা যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬।
১৯৫২ সালে বাবা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর ব্রিটেনের সিংহাসনে বসেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তখন তিনি বছর পঁচিশের যুবতী। এর পর টানা ৭০ বছর ধরে তিনিই ব্রিটেনের সিংহাসনে ছিলেন।
২০১৫ সালেই রানি ভিক্টোরিয়ার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। দ্বিতীয় এলিজাবেথের আগে এত দীর্ঘ সময় কেউ ব্রিটেনের সিংহাসনে বসেননি। রানি ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে ছিলেন ৬৪ বছর।
১৯৪৭ সালের ৯ জুলাই প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিয়ে হয়। এর এক বছর পর ১৯৪৮ সালে তিনি প্রথম সন্তান তৃতীয় চার্লসের জন্ম দেন।
বর্তমানে ৭৩ বছর বয়সি চার্লস ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ডের যুবরাজ হন। দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৃতীয় চার্লসকে অনুষ্ঠানিক ভাবে ব্রিটেনের রাজা ঘোষণা করা হয়।