চোখের জলে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে চিরবিদায় জানাবে ব্রিটেন। সোমবার ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে। রানিকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে লন্ডনে শামিল হয়েছেন বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রনেতা।
বিবিসি সূত্রে খবর, ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে প্রায় ২ হাজার মানুষের বসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতা রানির শেষকৃত্যে যোগ দেবেন। কারা কারা থাকছেন, কারাই বা বাদ পড়লেন, এক নজরে দেখে নিন সেই তালিকা।
দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে ব্রিটেনের রাজপরিবারের সদস্যরা থাকছেন। কিং চার্লসের সঙ্গে থাকবেন ‘দ্য কুইন কনসার্ট’ ক্যামিলা। পাশাপাশি রানির আরও তিন সন্তান প্রিন্সেস অ্যানি, প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও প্রিন্স এডওয়ার্ডও যোগ দেবেন এই অনুষ্ঠানে।
শেষকৃত্যে যোগ দেবেন রানির দুই নাতি-নাতনিও। থাকবেন দুই যুবরাজ উইলিয়াম ও হ্যারি। এ ছাড়াও থাকবেন প্রিন্সেস বিট্রিস ও ইউজেনি, জারা টিন্ডাল, পিটার ফিলিপস, লেডি লুইস উইন্ডসররাও। সোমবার ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে যোগ দেবেন রানির বন্ধু ও কর্মীরাও।
ইউরোপের বিভিন্ন রাজপরিবারের সদস্যও রানির শেষকৃত্যে থাকছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের সঙ্গেই রানির আত্মীয়তা ছিল। এই তালিকায় রয়েছেন বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, রানি ম্যাথিল্ড, নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলেম আলেকজান্ডার, তাঁর স্ত্রী রানি ম্যাক্সিমা, প্রাক্তন ডাচ ক্যুইন প্রিন্সেস বিট্রিক্স।
ব্রিটেনের রাজপরিবারের আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেছেন স্পেনের রাজা ফেলিপ, রানি লেটিজিয়া। এ ছাড়াও নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কের রাজপরিবারের সদস্যদেরও অতিথি হিসাবে থাকার কথা।
দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে থাকতে পারেন জাপানের সম্রাট নারুহিতো ও সম্রাজ্ঞী মাসাকো। থাকার কথা ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকেরও।
রানির শেষকৃত্যে যোগ দেবেন কমনওয়েলথের নেতারাও। থাকছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শ্রদ্ধা জানাতে লন্ডন পৌঁছে গিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
ভারতের পড়শি দেশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রানির শেষকৃত্যে যোগ দিচ্ছেন।
রানির শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেছেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমসিংঘে।
লন্ডন পৌঁছে গিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আমেরিকার ‘ফার্স্ট লেডি’ জিল বাইডেন।
এ ছাড়াও থাকছেন জার্মানের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেনমায়ার, ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও ম্যাটারেলা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়েছে। উইঘুরদের উপর চিনা সরকারের আচরণের প্রেক্ষিতে জিনপংকে আমন্ত্রণ নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকে।
রানির শেষকৃত্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে প্রথম থেকেই মস্কোর বিরোধিতা করে এসেছে ব্রিটেন। যার জেরে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের তাল কেটেছে। এই প্রেক্ষিতে পুতিনকে আমন্ত্রণ না জানানো উল্লেখযোগ্য।
রাশিয়ার পাশাপাশি বেলারুশ, মায়ানমারের কোনও রাষ্ট্রনেতাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
বিবিসি সূত্রে খবর, উত্তর কোরিয়া ও নিকারাগুয়ার রাষ্ট্রনেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁদের কেউ যোগ দিচ্ছেন না। দুই দেশের রাষ্ট্রদূতরা থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।
রানির শেষকৃত্য অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে লাখ লাখ মানুষ রানিকে শেষশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
গত ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে জীবনাবসান হয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। বয়স হয়েছিল ৯৬। দীর্ঘ ৭০ বছর ব্রিটেনের সিংহাসনে আসীন ছিলেন রানি।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে একটি ঐতিহাসিক গির্জা। এখানে ব্রিটেনের রাজা ও রানিদের মাথায় রাজমুকুট পরানো হয়। এই গির্জাতেই রানির অভিষেক হয়েছিল। প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিয়েও হয়েছিল এই গির্জায়। আর সেখানেই চিরবিদায় জানানো হবে রানিকে।