এস এস রাজামৌলি পরিচালিত ছবি ‘আরআরআর’-এর ‘নাটু নাটু’ গানের হাত ধরে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চে জয়জয়কার ভারতীয় সিনেমার। এটিই প্রথম ভারতীয় গান, যা গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডে সেরা সঙ্গীতের পুরস্কার পেল। ৮০তম গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডে সেরা গান এবং সেরা বিদেশি ভাষার ছবির জন্য মনোনীত হয়েছিল রাজামৌলির এই সিনেমা। সেরা বিদেশি ভাষার ছবির বিভাগে কোনও পুরস্কার না পেলেও সেরা সঙ্গীতের খেতাব এল ‘আরআরআর’-এর ঝুলিতে। খ্যাতনামীদের সামনে গটগট করে মঞ্চে উঠে পুরস্কার নিলেন সিনেমার সঙ্গীত পরিচালক এমএম কিরাবাণী।
৮০তম গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের সঙ্গীত বিভাগে ‘নাটু নাটু’ গানের পাশাপাশি মনোনয়ন পেয়েছিল টেলর সুইফ্টের কণ্ঠে ‘ক্যারোলিনা’, লেডি গাগার কণ্ঠে ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’ ছবির ‘হোল্ড মাই হ্যান্ড’, ‘ব্ল্যাক প্যান্থার: ওয়াকান্ডা ফরএভার’ ছবির ‘লিফ্ট মি আপ’ গানগুলি। প্রতিযোগিতায় ছিল গিয়েরমো দেল তোরো পরিচালিত ‘পিনোচিও’ ছবির ‘চায়ো পাপা’ গানটিও। কিন্তু সেরা হওয়ার দৌড়ে সকলকে পিছনে ফেলে পুরস্কার জিতে নিয়েছে ‘নাটু নাটু’।
‘নাটু নাটু’ গানটিতে রাম চরণ এবং জুনিয়র এনটিআর-কে কন্ঠ দিয়েছেন রাহুল সিপলিগুঞ্জ এবং কলা ভৈরব। গীতিকার চন্দ্রবোস। সঙ্গীত পরিচালক কিরাবাণী। গোল্ডেন গ্লোবের মঞ্চে পুরস্কার নিতে উঠেছিলেন কিরাবাণী-ই। পুরস্কার হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই পুরস্কার আমার ভাই রাজামৌলির। পাশাপাশি এই গানে অবিশ্বাস্য এনার্জি নিয়ে নাচার জন্য রাম চরণ এবং জুনিয়র এনটিআরকে ধন্যবাদ।’’
গোল্ডেন গ্লোবের মঞ্চ থেকে পুরস্কার জেতার পর দেশের আপামর জনতার মনে কিরাবাণীকে নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল জন্ম নিয়েছে। সকলের মনে একটাই প্রশ্ন— পাকা চুল-দাড়ি, ভারী চেহারার এই সঙ্গীত পরিচালক কে? এর আগেই বা তিনি কী কাজ করেছেন?
১৯৬১ সালের ৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের কোভভুর শহরে কিরাবাণীর জন্ম। কিরাবাণী পরিচালক রাজামৌলি এবং সঙ্গীত পরিচালক এমএম শ্রীলেখার খুড়তুতো ভাই।
বলিউড অনুরাগীরা বিশেষ না চিনলেও একাধারে সঙ্গীত রচয়িতা, নেপথ্য গায়ক এবং গীতিকার কিরাবাণী তেলুগু সিনেমার জগতে এক পরিচিত নাম।
তেলুগু বিনোদনের জগতে বেশি পরিচিত হলেও তামিল, মালয়ালাম, কন্নড় এবং হিন্দি সিনেমার জন্যও আবহ সঙ্গীত তৈরি করেছেন কিরাবাণী।
৮০-র দশকের শেষের দিকে কিরাবাণী সুরকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে ১৯৯০-এর ‘মানাসু মমতা’র কাজ তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে আসে। তার পর থেকে তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৯১ সালে কিরাবাণীর পরিচালনায় তেলুগু ছবি ‘ক্ষণ ক্ষণম’ এবং ‘অন্নময়’-এর গানগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘অন্নময়’ ছবির সঙ্গীত পরিচালনার জন্য ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ও তিনি জিতেছিলেন।
১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল ছবি ‘আজ়হাগান’-এর সঙ্গীত পরিচালনার জন্য তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন কিরাবাণী। ‘বাহুবলী’-র জন্য জিতেছিলেন নন্দী পুরস্কার এবং সিমা পুরস্কার। এখনও পর্যন্ত মোট ১১টি নন্দী পুরস্কার পেয়েছেন কিরবাণী।
‘ব্রহ্মাণ্ড নায়গন’, ‘অন্তিম ফয়সলা’, ‘সব্যসাচী’, ‘কথানায়কুডু’ এবং ‘বিজয়ন’-এর মতো সফল দক্ষিণ ভারতীয় ছবিগুলিরও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন কিরাবাণী।
কিরাবাণী সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন একাধিক বলিউড ছবিতেও। যার মধ্যে রয়েছে ‘জ়খম’, ‘সায়া’, ‘জিসম’, ‘ক্রিমিনাল’ এবং ‘ইস রাত কি সুবহ নহি’-র মতো ছবি।
প্রায় ৩ দশকে কিরাবাণী বিভিন্ন ভাষায় ১৫০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন।
‘আরআরআর’ ছাড়াও রাজামৌলির ‘বাহুবলী: দ্য বিগিনিং’ এবং ‘বাহুবলী ২: দ্য কনক্লুশন’ সিনেমাতেও কিরাবাণী কাজ করছেন।
তেলুগু প্রযোজক শ্রীবল্লীকে বিয়ে করেছেন কিরাবাণী। শ্রীবল্লী সম্পর্কে রাজামৌলির স্ত্রী রামা রাজামৌলির বোন।
‘নাটু নাটু’ গানের নেপথ্য গায়ক কলা ভৈরব, কিরাবাণীরই ছেলে। অনেক অভিজ্ঞ সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন ভৈরব।
বলিউডে প্রতি বছর শতাধিক ছবি মুক্তি পায়। তার মধ্যে গুটিকয়েক গান দর্শকের মনে পাকাপাকি জায়গাও করে নেয়। আর তা নিয়ে বলি-পাড়ায় গর্বের অন্ত নেই। কিন্তু এর মধ্যে কোনও সঙ্গীত পরিচালকেরই গান কখনও গোল্ডেন গ্লোবের মঞ্চ থেকে পুরস্কার জিতে নিতে পারেনি। কিন্তু ‘নাটু নাটু’ পেরেছে। কিরাবাণীর হাত ধরে।