গত শুক্রবার জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম দলীয় সভায় জানান, তাঁর আশঙ্কা হচ্ছে তিনি খুনও হয়ে যেতে পারেন। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ল তাঁর। প্রশাসন কার্যত খারিজ করে দিল অর্জুন সিংহের এই নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়ার দাবি।
প্রসঙ্গত, ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহের মত ছিল, জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের নিরাপত্তা তুলে দিক প্রশাসন। কারণ, পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া তিনি কোনও কাজ করেন না। মানুষের সঙ্গে কোনও সংযোগ নেই বিধায়কের।
শনিবারই বিধায়কের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করল প্রশাসন। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বেড়েছে রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকেরও।
শুক্রবার রাতে টিটাগড়ে তৃণমূলের একটি জনসভা ছিল। সেখানে জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ আশঙ্কা করেন যে, তাঁকে খুন করা হতে পারে। তার পর শনিবার সকাল থেকেই দেখা গেল তৃণমূল বিধায়কের নিরাপত্তা বৃদ্ধি হয়েছে।
শনিবার থেকে সোমনাথ এবং মন্ত্রী পার্থ, দু’জনের নিরাপত্তায় আরও চার জন করে সশস্ত্র পুলিশকে নিয়োজিত করা হয়েছে। দু’জনেরই নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দশে।
জনসভায় সোমনাথ বলেছিলেন, ‘‘ভাটপাড়া কলঙ্কিত জায়গা বলে পরিচিত ছিল। লোকে বলত, রোজ এখানে খুন হয়। নেশার কবলে পড়েছে যুবসমাজ। প্রতি দিন কোনও না কোনও গন্ডগোল হয়। এই পরিবেশের পরিবর্তন প্রয়োজন বলে আমি আওয়াজ তুলেছি।”
তিনি এর পাশাপাশি আরও বলেছিলেন, “আমাদের এক তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছে। দেখলাম, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেই ভয় পাচ্ছেন। আমি বলেছি, আমিও দল করি। আমিও খুন হয়ে যেতে পারি। কিন্তু প্রতিবাদ করবই। সত্যের জন্য লড়াই করে যাব। অন্যায় বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবই।’’
তৃণমূল বিধায়কের সংযোজন ছিল, ‘‘অন্যায় যেই করুন, তিনি যদি আমার দলেরও কেউ হন, আমি প্রতিবাদ করবই। আমাদের অধিকার নেই কারও প্রাণ নিয়ে নেওয়ার। পয়সা আছে বলে কাউকে খুন করে দেব, কাউকে অপহরণ করিয়ে দেব, কারও বাড়ি ভেঙে ফেলব— এটা সমীচীন নয়।’’
বস্তুত, ভাটপাড়ায় তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদব খুনের ঘটনা নিয়ে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুনের সঙ্গে সোমনাথের বাগ্যুদ্ধ চরমে উঠেছে। গত ২১ ডিসেম্বর সাংসদের ভাইপো সঞ্জীব সিংহ গ্রেফতার হওয়ার পর ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক উত্তাপ আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর নৈহাটি পুরসভায় বৈঠক ডেকেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সাংসদ অর্জুন এবং সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ওই বৈঠকে পৌঁছলেও, সোমনাথ যাননি। ছিলেন না বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারীও।
তাই রাজ্য সভাপতির উদ্যোগ সফল হয়নি। এর পর তাঁকেও খুন করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন সোমনাথ।
নিরাপত্তা বৃদ্ধির পর বিধায়কের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যে ভাবে তৃণমূলের কর্মীরা খুন হচ্ছেন তাতে এই নিরাপত্তা দিয়ে কোনও ভরসা নেই!’’
অন্য দিকে, সেচমন্ত্রী পার্থ জানান, তাঁর নিরাপত্তার বহর বেড়েছে। আর কেন নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, সেটা প্রশাসন ভাল জানে।