দেশের সবচেয়ে বড় শপিং মল তৈরি হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে। আরবের এক বহুজাতিক সংস্থা তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে চলেছে ওই মলে। তারা জানিয়েছে, আগামী বছরের শুরুতেই ‘শুভ’ কাজে হাত দেবে তারা।
গুজরাতের আমদাবাদে তৈরি হবে মল। অবশ্য তার আগে এখনও সামান্য কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। জমি অধিগ্রহণের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। তা সারা হলেই ২০২৩-এ শুরু হবে নির্মাণের কাজ। স্থাপন করা হবে ভিত্তিপ্রস্তর।
আরবের ওই বহুজাতিক সংস্থার নাম লুলু গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল। ভারতে ইতিমধ্যেই দু’টি শপিং মল তৈরি করে ফেলেছে এই সংস্থা। এর মধ্যে একটি যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে, অন্যটি কেরলের কোচি শহরে। দু’টিই যথাক্রমে দেশের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বৃহত্তম মল।
সংস্থাটি অবশ্য জানিয়েছে, আমদাবাদ শহরের যে শপিং মল তৈরি হবে, তা আকারে এই দু’টিকে তো বটেই দেশের সবচেয়ে বড় শপিং মল, হায়দরাবাদের শরৎ সিটি ক্যাপিটাল মলকেও সব দিক থেকে টেক্কা দেবে।
২৭ লক্ষ বর্গফুট জুড়ে বিস্তৃত শরৎ সিটি মলটি আটতলা। সেখানে এক সঙ্গে ১৪০০টি গাড়ি এবং ৪ হাজার বাইক পার্কিংয়ের সুবিধা আছে। এ ছাড়া ৪৩০টি ব্র্যান্ডের দোকান, ৭টি স্ক্রিনের মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল এবং প্রায় ২ হাজার মানুষের বসার উপযোগী ফুডকোর্টও রয়েছে। এ ছাড়া আছে অ্যাডভেঞ্চার পার্ক, স্কাই জোন পার্ক। এমনকি, স্কি করার সুবিধা বিশিষ্ট কৃত্রিম বরফের পার্কও।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর নানা সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি, এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় শপিং মল শরৎ ক্যাপিটালে অতিরিক্ত কিছু সুযোগ-সুবিধাও তৈরি হচ্ছে। যেমন বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য তৈরি করা হচ্ছে কনভেনশন সেন্টার। তৈরি হচ্ছে নাইট ক্লাব, একটি মাইক্রোব্রিউয়ারিও। যেখানে চোখের সামনে মদ তৈরি হতে দেখা যাবে।
লুলু গ্রুপ গুজরাতে দেশের বৃহত্তম শপিং মল করার ঘোষণা করতেই জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে কি মোদীর রাজ্যের ওই মল শরৎ ক্যাপিটালের সমস্ত সুযোগ-সুবিধাগুলিকেও টেক্কা দেবে! গুজরাতে বৃহত্তম মল তৈরির ঘোষণার পর লুলু গ্রুপের অধিকর্তা ভি নন্দকুমার মলটির সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আগাম ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, গুজরাতের মলের ফুড কোর্টে একসঙ্গে বসে খেতে পারবেন ৩ হাজার অতিথি। এই মলের সিনেমা হলেও থাকবে ১৫টি পর্দা। এক সঙ্গে এক সময়ে ১৫টি সিনেমা দেখানো যাবে এই মাল্টিপ্লেক্সে।
কম করে ৩০০টি জাতীয় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দোকান থাকবে। থাকবে স্থানীয় ব্র্যান্ডের দোকানপাটও। বিশেষ করে স্থানীয় উদ্যোগপতি এবং কৃষকদের সাহায্য করার কথাও মাথায় রাখা হবে মলটি তৈরি করার সময়।
তবে লুলু গ্রুপের তরফে নন্দকুমার জানিয়েছেন, এই মলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হতে চলেছে ছোটদের মন ভোলানোর জন্য তৈরি চত্বর। তিনি জানান, দেশের সবচেয়ে বড় চিলড্রেন্স অ্যামিউজমেন্ট সেন্টারের ঠিকানা হতে চলেছে গুজরাতের এই শপিং মলটি।
বড়দের জন্যও থাকতে চলেছে নানা আকর্ষণ। শপিংয়ের বাইরে পরিবারের সঙ্গে বা একা ভাল সময় কাটানোর যাবতীয় রসদ থাকতে চলেছে এই মলে— জানিয়েছে বহুজাতিক সংস্থাটি। তবে সেই সব সুবিধা কী কী এখনই তার বিশদ জানায়নি তারা। শুধু বলেছে, গুজরাতকে দেশের সেরা শপিং গন্তব্য হিসাবে গড়ে তুলতে চলেছে তারা।
কিছু দিন আগেই দুবাইয়ে একটি রোড শো করেছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল। সেই অনুষ্ঠানের পরে আরব আমিরশাহির বহু ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর। সেখানেই হাইপারমার্কেটের বহুজাতিক সংস্থা লুলু ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের প্রধান এমএ ইউসুফ আলির সঙ্গে মউ স্বাক্ষর হয় তাঁর।
ইউসুফ আরবের বহুজাতিক সংস্থার প্রধান হলেও আদতে ভারতীয়। কেরলের ত্রিশূরের মুসলিম পরিবারে জন্ম। সেখানেই স্কুল-কলেজের পড়াশোনা। তবে পড়াশোনা শেষ করে তিনি ভারতে থাকেননি। পেশার তাগিদে চলে গিয়েছিলেন আবুধাবিতে।
১৯৭৩ সালে আরবে যান ইউসুফ। ১৯৯০ সালে তাঁর প্রথম হাইপারমার্কেট স্টোর চালু করেন তিনি। এই ধরনের দোকানের বিশেষত্ব হল এগুলি সুপার মার্কেট এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোর মিলিয়ে তৈরি। এখানে দৈনিক প্রয়োজনের সব কিছু এক ঠিকানাতেই পেয়ে যাবেন ক্রেতা। আর এই দোকানগুলি চলে কম লাভ আর অধিক বিক্রির ফর্মুলায়।
তার পর থেকে পৃথিবীর ২৩টি দেশে ২৪০টি হাইপারমার্কেট খুলেছে ইউসুফের সংস্থা লুলু ইন্টারন্যাশনাল। ২০০০ সাল থেকে সংস্থাটির যাত্রা শুরু। ইউসুফকে তাঁর সাফল্যের জন্য ভারত সরকার পদ্মশ্রী দিয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন অবশ্য দেশে কংগ্রেস সরকার।
সূত্রের খবর, ৬৬ বছরের এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেশের বর্তমান সরকারের সম্পর্কও বেশ ভাল। প্রধানমন্ত্রী মোদী তো বটেই, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগীরও সুনজরে রয়েছেন তিনি। একটু খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, নিজের রাজ্য কেরল ছাড়া ইউসুফ মল বানানোর জন্য মোদী এবং যোগীর রাজ্যকেই বেছে নিয়েছেন।
এর মধ্যে লখনউয়ের মলটি গত জুলাইয়ে বেশ ধুমধাম করেই উদ্বোধন করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, লখনউয়ের মলে ২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছিলেন ইউসুফ। তবে লখনউয়ের ওই মল নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়।
হঠাৎই শোনা যায় লুলু মলের ৮০ শতাংশ কর্মী মুসলিম ধর্মীয়। এমনকি লখনউয়ের মলের একটি অংশে নিয়মিত নামাজও পড়েন মুসলিমদের একাংশ। খবরটি প্রকাশ্যে আসতেই হিন্দুত্ববাদীরা দাবি করেন, তা হলে মলের ভিতর নিয়মিত হনুমান চল্লিশাও পড়তে হবে। যদিও সেই বিতর্ক আপাতত থেমেছে।
আরবি ভাষায় ‘লুলু’ শব্দের অর্থ মুক্তো। আফ্রিকায় বিরল। ভারতীয় ব্যবসায়ী ইউসুফের এই সংস্থার তৈরি মল গুজরাতে বিরল কোন অভিজ্ঞতা উপহার দিতে চলেছে, আপাতত সে দিকেই নজর থাকবে গোটা দেশের।