তামিল এবং তেলুগু ছবির পরিচিত মুখ। তবে বলিউডে তাঁর জনপ্রিয়তায় জোয়ার এসেছিল ২০০৬ সালে। রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার ‘রং দে বসন্তী’ ছবিতে আমির খানের মতো তারকার ছটায় চাপা পড়ে যাননি, বরং নিজের ছাপ রেখেছিলেন সিদ্ধার্থ।
পোশাকি নাম সিদ্ধার্থ সূর্যনারায়ণ। তবে তামিল ছবির জগৎ থেকে বলিউড— তাঁকে চেনে 'সিদ্ধার্থ' হিসেবেই। অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্বগায়ক হিসেবেও নিজের জাত চিনিয়েছেন। সেই সঙ্গে চিত্রনাট্য লেখা বা ফিল্ম প্রযোজনাতেও হাত পাকিয়েছেন তিনি।
বহুমুখী প্রতিভা সত্ত্বেও নিজের শিল্পসত্তার পরিচয় ছাপিয়ে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন সিদ্ধার্থ। তাঁর কটাক্ষের নিশানা থেকে বাদ পড়েননি খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। সিদ্ধার্থের সাম্প্রতিকতম ‘শিকার’ সাইনা নেহওয়াল।
৫ জানুয়ারি সাইনার একটি টুইটের পর তাঁকে নিশানা করেছিলেন সিদ্ধার্থ। ঘটনার সূত্রপাত গত বুধবার। সে দিন পঞ্জাবের ফিরোজপুরে একটি জনসভায় যাওয়ার পথে ভাটিন্ডা বিমানবন্দর থেকে নেমে সড়কপথে এগোচ্ছিল প্রধানমন্ত্রীর কনভয়। তবে যাত্রাপথে একটি উড়ালপুলে ১৫-২০ মিনিট সে কনভয় আটকে যায়। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতির অভিযোগে পঞ্জাব সরকারকে কাঠগড়ায় তোলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নীর পদত্যাগও দাবি করেন মোদীর মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেন চন্নী। এই মুহূর্তে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের তদন্তাধীন। ওই ঘটনার নিন্দা করে সাইনার টুইট ছিল, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যাহত হলে কোনও দেশই নিজেকে সুরক্ষিত বলতে পারে না। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপর কাপুরুষোচিত আক্রমণ করেছেন, তার তীব্র নিন্দা করি।’
সাইনার টুইটের পরের দিন ৬ জানুয়ারি তাঁকে আক্রমণ করেন সিদ্ধার্থ। সাইনার নাম না করে তাঁকে নিশানা করেন তিনি। অলিম্পিক্সে পদকজয়ী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের উদ্দেশে তাঁর টুইট, ‘বিশ্বের সাট্ল কক চ্যাম্পিয়ন... ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে ভারতের রক্ষাকর্তা রয়েছেন।’ সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন, ‘#রিহানা তোমার লজ্জা হওয়া উচিত।’ প্রসঙ্গত, গত বছর মোদী সরকারের তিন বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আমেরিকার পপ তারকা রিহানা। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর টুইট-বার্তার জন্য গেরুয়া শিবিরের তরফে সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন তিনি।
সাইনার বিরুদ্ধে টুইট করার পরই সিদ্ধার্থের দিকে একের পর এক পাল্টা কটাক্ষ ধেয়ে আসে। নেটমাধ্যম ব্যবহারকারীদের দাবি, সিদ্ধার্থের টুইটটি যৌনগন্ধী কটূক্তি ছাড়া কিছুই নয়। সাইনাকে অপমান করার জন্যই টুইট করেছেন সিদ্ধার্থ।
যদিও এই প্রথম নয়। এর আগে খোদ মোদীর দিকেই তির ছুড়েছিলেন সিদ্ধার্থ। করোনাকালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে প়ড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কোভিড রোগীদের জন্য অক্সিজেনের বন্দোবস্ত করতে ব্যর্থ বলেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন সিদ্ধার্থ। টুইটারে তিনি লিখেছিলেন, ‘অক্সিজেনের অভাবে দেশে লোকজন মরছে। আর সংবাদমাধ্যম একে শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে প্রচার বলে উড়িয়ে দিচ্ছে, জঘন্য!’ সিদ্ধার্থের টুইটের পর তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেন মোদী-ভক্তরা। তাঁদের কটাক্ষ, ‘এত কথা না বলে অভিনেতা সোনু সুদের মতো ময়দানে নেমে কাজ করুন না!’
মোদীর বিরুদ্ধে এর পরেও আক্রমণ চালিয়ে যান সিদ্ধার্থ। এ বার আরও তীব্র ভাবে হামলা করেন তিনি। সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে তাঁর সরাসরি আক্রমণ, ‘২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে শুধুমাত্র তর্কাতীত ভাবে অপ্রয়োজনীয় # সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পে। এই টাকা নিজের দাড়ির পরিচর্যা করারই শামিল। তার বদলে তা করোনার টিকা ও জনস্বাস্থ্য খাতে খরচ করা উচিত।’ এ নিয়েও কম ট্রোলড হননি সিদ্ধার্থও।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও দক্ষিণের বিজেপি নেতারাও তাঁর নিশানায় উঠে এসেছেন। বেঙ্গালুরু দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্যকে আক্রমণ করেন সিদ্ধার্থ। একটি হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিয়োয় তেজস্বীর দাবি ছিল, বৃহৎ বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকা (বিবিএমপি)-র দক্ষিণ জোনে কোভিড রোগীদের শয্যা অপ্রতুল হওয়ায় পিছনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা দায়ী। এর পর তাঁকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বসেন সিদ্ধার্থ। তিনি লিখেছিলেন, ‘তেজস্বী সূর্য ২৬/১১-র হামলায় ধৃত আজমল কসভের থেকেও বেশি ক্ষতিকারক, তাঁর থেকে এক দশকের বড়ও বটে।’ এই টুইট নিয়েও বিতর্কে জড়াতে দেরি হয়নি সিদ্ধার্থের।
আর একটি টুইটে সিদ্ধার্থের দাবি ছিল, তামিলনাড়ু বিজেপি-র আইটি সেল অনলাইনে তাঁর ফোন নম্বর ফাঁস করে দিয়েছে। তার পর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন তিনি। এমনকি, তাঁকে ধর্ষণেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। যদিও এ নিয়ে বিতর্কের পর সিদ্ধার্থের নিরাপত্তা বা়ড়িয়ে ছিল তামিলনাড়ু সরকার।