গত কয়েক মাস ধরেই অর্থকষ্টে ভুগছে পাকিস্তান। দু’বেলার খাবার জোটাতে হিমশিম অবস্থা সে দেশের নাগরিকদের। গমের ট্রাকের পিছনে জনতার দৌড়ের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। আবার খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনারও সাক্ষী হয়েছে ভারতের এই পড়শি দেশ। মূল্যবৃদ্ধিতে নাকাল সকলে। তার ওপর আবার পাকিস্তানের ভান্ডারে ক্রমশ কমছে বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ। যার জেরে সে দেশের অবস্থা একেবারে বেহাল।
কোন দেশের কাছে কত পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা রয়েছে, তার উপরে বোঝা যায়, সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানের কাছে বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ার তলানিতে ঠেকেছে। যার জেরে সে দেশে আর্থিক সঙ্কট দেখা গিয়েছে।
এই সঙ্কট থেকে দেশকে বাঁচাতে এ বার নতুন কৌশল নিল শাহবাজ শরিফের সরকার। ৩ দেশের সঙ্গে বিনিময় বাণিজ্যে রাজি হয়েছে ইসলামাবাদ।
রাশিয়া, ইরান এবং আফগানিস্তান— এই ৩ দেশের সঙ্গে বিনিময় বাণিজ্য করবে পাকিস্তান। অর্থাৎ, পণ্যের বিনিময়ে পণ্য নীতিতে এখন থেকে বাণিজ্য চলবে। যেমনটা হত মুদ্রা আবিষ্কারের আগে।
পাকিস্তানে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বাড়াতে এই পদক্ষেপ করেছে সে দেশের সরকার। এর ফলে দেশে আর্থিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে আশা করছেন তাঁরা।
গত মার্চ মাসে জানা গিয়েছিল, পাকিস্তানের কাছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় রয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। যা যৎসামান্য। এই পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দিয়ে মাত্র ১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। পণ্যের বিনিময়ে পণ্য বাণিজ্য করলে বিদেশি মুদ্রার উপর চাপ কমবে বলেই মনে করছে পাক সরকার।
ওই ৩ দেশে রপ্তানির জন্য ২৬টি পণ্যকে বেছে নিয়েছে পাকিস্তান। যার মধ্যে রয়েছে দুধ, ডিম, মাংস, মাছ, ফল, সবজি, চাল, লবণ, চামড়াজাত পণ্য, জুতো, ইস্পাত, ক্রীড়া সামগ্রী।
রাশিয়া থেকে ১১টি পণ্য আমদানি করবে পাকিস্তান। এই পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, ডাল, লোহা, ইস্পাত, গম।
ইরান থেকে ১০টি সামগ্রী আমদানি করবে ইসলামাবাদ। এই পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে পেট্রোলিয়াম, অপরিশোধিত তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, ফল, বাদাম, সব্জি।
আফগানিস্তান থেকেও ১০টি পণ্য আমদানি করবে পাকিস্তান। এই পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে বাদাম, সব্জি, তৈলবীজ, খনিজ।
গত মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তার পরেই বিনিময় বাণিজ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় পাক সরকার।
গত কয়েক মাস ধরেই অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত পাকিস্তান। মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়তে বাড়তে ৪৭ শতাংশে পৌঁছেছে সে দেশে।
পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে পাকিস্তানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম। গত মার্চ মাসে এক সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গিয়েছিল, পাকিস্তানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২২৮.২৮ শতাংশ। সিগারেটের দাম বেড়েছে ১৬৫.৮৮ শতাংশ। ডিজ়েল এবং কলার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১০২.৮৯ শতাংশ এবং ৮৯.১৭ শতাংশ। রোজকারের জীবনে এই সঙ্কট মোকাবিলায় নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি সে দেশে জ্বালানি সঙ্কট দেখা গিয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আবাসন, ব্যবসায়িক ক্ষেত্র এবং শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। সমস্ত দোকানপাট এবং বাণিজ্যিক দফতর রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে এই নির্দেশিকা কার্যকর হবে।
এই দুর্দিনে সঙ্কট মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া পাকিস্তান। তাই বিনিময় বাণিজ্যের সিদ্ধান্ত নিল সে দেশের সরকার। পাক সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সে দেশের বণিক মহল। ইসলামাবাদের এই কৌশল কতটা কাজে আসবে, তা অবশ্য ভবিষ্যৎই বলবে।