৪০-এ পা দিয়েছেন। অথচ এখনও শুরু করেননি অবসরকালীন সঞ্চয়। কোন খাতে লগ্নি করলে ৬০-এ পৌঁছেও জীবনযাত্রা একই রকম থাকবে, সেটা বুঝতে পারছেন না? এ হেন পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম বা এনপিএসে বিনিয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ। এই প্রকল্পে টাকা রাখলে দুর্দান্ত ভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছেন তাঁরা।
আর্থিক বিশ্লেষকদের কথায়, এনপিএসের দ্বিমুখী সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, এর থেকে অবসরের পর মোটা টাকা পেনশন পাবেন গ্রাহক। দ্বিতীয়ত, অবসরের সঞ্চয়ের দিকটিও সুরক্ষিত করবে এই প্রকল্প। তবে এনপিএস কেন্দ্রীয় সরকার সমর্থিত হলেও এতে লগ্নি বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ। বিনিয়োগের সময়ে এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
এনপিএসের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হল, পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা পিএফআরডিএ। এই প্রকল্পে যে কেউ লগ্নি করতে পারেন। মূলত নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্র।
অবসরের পর এনপিএসের অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রাহকের টাকা তুলে নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে আয়কর ছাড় পাবেন তিনি। অবসরের পর যদি দেখা যায় এনপিএস অ্যাকাউন্টে গ্রাহক পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি জমিয়েছেন, তা হলে সম্পূর্ণ অর্থ কর ছাড়া তুলে নিতে পারবেন তিনি।
কিন্তু, টাকার অঙ্ক আরও বেশি হলে এনপিএস অ্যাকাউন্টের ৬০ শতাংশ অর্থ প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে আয়করে ছাড় পাবেন সংশ্লিষ্ট গ্রাহক। বাকি টাকায় অবশ্যই তাঁকে অ্যানুইটি প্ল্যান কিনতে হবে। এনপিএসের এই অংশটি আয়করের আওতাধীন।
অ্যানুইটি থেকে গ্রাহকের কত টাকা আয় হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করবে এনপিএসে করের পরিমাণ। অ্যানুইটি সার্ভিস প্রোভাইডারের (এএসপি) থেকে এই প্রকল্পের লাভের অর্থ সরাসরি অ্যাকাউন্টে পাবেন লগ্নিকারী। এনপিএস অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত অর্থের একাংশ ব্যবহার করে এই অ্যানুইটি কিনতে হবে তাঁকে।
এনপিএসে লগ্নি সাধারণত ১৫ বছরের জন্য করতে হয়। এতে বছরে ৯ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে গ্রাহকের। তবে লগ্নিকারী তাঁর বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত অর্থে খুশি না হলে অন্য ফান্ড ম্যানেজারের কাছে অর্থ সরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
আর্থিক বিশ্লেষকেরা জানাচ্ছেন, ৪০ বছরে বিনিয়োগ শুরু করা গ্রাহক এনপিএসের মাধ্যমে মাসে এক লক্ষ টাকা করে পেনশন পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ৬০ বছরে এই তহবিলে তাঁর মোট সঞ্চয়ের অঙ্ক দাঁড়াতে হবে পাঁচ কোটি টাকা।
আর এনপিএসের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ পাঁচ কোটিতে নিয়ে যেতে হলে বছর ৪০-এর যুবক বা যুবতীকে প্রতি মাসে জমা করতে হবে ৫০ হাজার টাকা। আর মনে রাখতে হবে বছরে সুদের হার ১২ শতাংশ থাকলে তবেই অবসরের পর মাসে এক লক্ষ টাকা করে পেনশন পাবেন তিনি। সুদের হার কম হলে পেনশনের অঙ্ক কমবে।
উল্লেখ্য, কোনও গ্রাহকের এনপিএস তহবিলে মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ পাঁচ কোটি হলে অবসরের পর তিন কোটি টাকা তিনি তুলে নিতে পারবেন। বাকি দু’কোটি টাকা অ্যানুইটি প্ল্যানে তাঁকে বিনিয়োগ করতেই হবে। সেখান থেকে বছরে ছ’শতাংশ হারে সুদ পাবেন তিনি।
মজার বিষয় হল, অ্যানুইটি প্ল্যানে লগ্নি করা দু’কোটি টাকা থেকে প্রতি মাসে গ্রাহক এক লক্ষ টাকা করে পেনশন পাবেন। তবে এনপিএস তহবিলের টাকার এই অংশটি তুলে নিতে পারবেন না তিনি। আয়কর আইনের ৮০সিসিডি (১) ধারা অনুযায়ী এনপিএসের গ্রাহক বেতনের ১০ শতাংশ পর্যন্ত করে ছাড় পাবেন। তবে আয়কর আইনের ৮০সিসিই ধারা অনুযায়ী, এর সর্বোচ্চ সীমা দেড় লক্ষ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
পাশাপাশি, ৮০সিসিডি(১বি) ধারায় অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা কর ছাড় পাবেন সংশ্লিষ্ট গ্রাহক। এ ক্ষেত্রেও আয়কর আইনের ৮০সিসিই ধারায় সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ছাড়িয়ে যেতে পারবেন না তিনি।
এনপিএসের অ্যাকাউন্ট দু’ধরনের হয়ে থাকে। সেগুলি হল, টিয়ার ১ এবং টিয়ার ২। গ্রাহকদের বাধ্যতামূলক ভাবে টিয়ার ১ অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। লগ্নিকারীদের কেউ ইচ্ছা করলে টিয়ার ২ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন আবার তা না-ও খুলতে পারেন।
টিয়ার ১ প্রকৃতপক্ষে এনপিএসের একটি সীমাবদ্ধ ও শর্তসাপেক্ষে প্রত্যাহারযোগ্য অবসরকালীন অ্যাকাউন্ট। গ্রাহক এনপিএসের অধীনে নির্ধারিত প্রস্থান শর্ত পূরণ করলে তবেই এর থেকে লগ্নির টাকা প্রত্যাহার করতে পারবেন। শর্ত পূরণ না হলে টাকা তুলতে পারবেন না তিনি।
টিয়ার ১-এর গ্রাহক অ্যাড ইন হিসাবে টিয়ার ২ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এটি পুরোপুরি লগ্নিকারীর ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। টিয়ার ২ অ্যাকাউন্ট থেকে বিনিয়োগকারী মর্জিমাফিক টাকা তুলে নিতে পারবেন। এর কোনও আইনগত বাধা নেই।