অবসরের পর কী ভাবে চলবে সংসার? চাকরি জীবনের মাঝামাঝিতে পৌঁছে অনেকেরই মনে উঁকি দেয় এই প্রশ্ন। ৬০ বছরের পর মোটা টাকা পেনশন পেতে হলে আগে থেকে পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম বা এনপিএসে লগ্নি অন্যতম ভাল বিকল্প হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
এনপিএস থেকে একজন লগ্নিকারী মাসে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেনশন পেতে পারেন। তবে এই প্রকল্প থেকে ভাল লাভ পেতে হলে কম বয়সে করতে হবে বিনিয়োগ। যত কম বয়সে এনপিএসে টাকা রাখা যাবে, ততই অবসরের পর হাতে আসবে মোটা টাকা।
এই পেনশন প্রকল্পের নিয়মে বলা রয়েছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুরো টাকা তুলতে পারবেন না গ্রাহক। মোট সঞ্চিত অর্থের ৬০ শতাংশ তুলে নিতে পারবেন তিনি।
এনপিএসের গ্রাহককে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ পরিমাণের একটি বার্ষিক পরিকল্পনা (অ্যানুইটি) কিনতে হবে। সেখান থেকে অবসরের পর নিয়মিত পেনশন পাবেন তিনি। এনপিএসের গ্রাহক ইচ্ছা করলে ১০০ শতাংশ অ্যানুইটি কিনতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ৩০ বছর বয়সি গ্রাহক অবসরের পর এই প্রকল্প থেকে প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকা পেনশন পেতে পারেন। এর জন্য টানা ৩৫ বছর লগ্নি করতে হবে তাঁকে। অর্থাৎ, ৬৫ বছর পর্যন্ত বিনিয়োগ করবেন তিনি।
বর্তমান বাজারদরের নিরিখে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই সময়সীমার মধ্যে এনপিএসের গ্রাহক ন্যূনতম ১২ শতাংশ হারে সুদ পাবেন। সে ক্ষেত্রে অবসরের সময়ে অ্যানুইটি রেট দাঁড়াবে ৬ শতাংশ। যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩০ বছরের যুবক ও যুবতীকে দু’লক্ষ টাকা করে পেনশন পেতে হলে এই প্রকল্পে মাসে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করতে হবে। ৪০ বছরের গ্রাহকও এই সুবিধা পেতে পারেন। তবে লগ্নির পরিমাণ বাড়াতে হবে তাঁকে।
৪০ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে মাসে ২ লক্ষ টাকা পেনশনের জন্য গ্রাহকের মোট ৪.০২ কোটি টাকার ম্যাচিউরিটি কপার্স থাকতে হবে। যা ২০ বছরে দেবে ৬ শতাংশ রিটার্ন। অর্থাৎ, গ্রাহককে ১.৬১ কোটি টাকার অ্যানুইটি কিনতে হবে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২.৪১ কোটি টাকা তুলতে পারবেন লগ্নিকারী। যা মোট সঞ্চিত অর্থের ৬০ শতাংশ।
২০ বছরে ৪ কোটি টাকা আয় করতে চাইলে গ্রাহককে প্রতি মাসে সাড়ে ৫২ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ শতাংশ রিটার্ন পেলেও মেয়াদপূর্তির সময়ে সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪.০২ কোটি টাকা।
এনপিএসে লগ্নির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আয়করে ছাড়। ৮০ সিসিই ধারা অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি তাঁর সঞ্চিত অর্থের উপর দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পেয়ে থাকেন। এনপিএসে বিনিয়োগ করলে আরও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাবেন তিনি।
এনপিএস তহবিল দু’ধরনের হয়ে থাকে। সেগুলি হল টায়ার ১ ও টায়ার ২। লগ্নির সময়ে সেটা মাথায় রেখে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা।
টায়ার ১ অ্যাকাউন্টকে স্থায়ী অবসর তহবিল হিসাবে গণ্য করা হয়। এতে গ্রাহক বা তাঁর নিয়োগকর্তা বিনিয়োগ করতে পারেন। এর পর গ্রাহকের ঠিক করা প্রকল্প অনুযায়ী, চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে ওই টাকা।
টায়ার ১ অ্যাকাউন্ট হোল্ডারেরাই শুধুমাত্র টায়ার ২-তে লগ্নি করতে পারবেন। এতে গ্রাহককে নিজে থেকে বিনিয়োগ করতে হয়। টায়ার ২ অ্যাকাউন্ট থেকে লগ্নিকারী ইচ্ছামতো টাকা তুলে নিতে পারেন।
এনপিএসে বিনিয়োগের আগে গ্রাহককে বর্তমান ও ভবিষ্যতের খরচের হিসাবের দিকে নজর দিতে হবে। প্রকল্পটিতে লগ্নি করা শুরু করে কিছু দিন পর তা বন্ধ করে দিলে খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পাবেন না তিনি।
এনপিএসের নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহককে প্রতি মাসেই যে পেনশন তুলতে হবে, তা নয়। তিনি ইচ্ছা করলে তিন মাস, ছ’মাস বা এক বছর পরেও একবারে টাকা তুলে নিতে পারবেন। গ্রাহক এটা নিজে থেকে ঠিক করতে পারবেন।
এনপিএস প্রকল্পে লগ্নি করার পর গ্রাহকের মৃত্যু হলে টাকা পাবেন তাঁর নমিনি। সে ক্ষেত্রে তহবিলের পুরো টাকাটাই তাঁকে দিয়ে দেওয়া হবে।
এনপিএসে বিনিয়োগ বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ। আর তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে এতে লগ্নি করুন। এনপিএসে বিনিয়োগের পর আর্থিক ভাবে লোকসান হলে আনন্দবাজার অনলাইন কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবেই দায়ী নন।