খাবার, পোশাক আর বাসস্থান— আধুনিক সমাজে এই তিনটি অপরিহার্য। খাবার এবং বাসস্থানের অভাব থাকলেও লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক বর্তমান সমাজে অকল্পনীয়।
কিন্তু সেই অকল্পনীয় ঘটনাটিই বাস্তবে ঘটে চলেছে। সব রকম সুবিধা থাকা এবং অর্থের অভাব না থাকা সত্ত্বেও এই আধুনিক সমাজে একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে কেউই পোশাক পরেন না।
শুনে আশ্চর্য লাগলেও, বাস্তবে এমনই একটি গ্রাম আছে ব্রিটেনে। ইউরোপের মধ্যে একটি অত্যাধুনিক জায়গায় এমন দৃশ্য অকল্পনীয় বলেই মনে হবে। এক দিন বা দু’দিনের জন্য নয়, গত ৯০ বছর ধরে পোশাক না পরেই কাটাচ্ছেন তাঁরা।
এই গ্রামের লোকেরা কোনও উপজাতি সম্প্রদায়ের নন। আর্থিক অনটনও নেই। কিন্তু তার পরেও বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই কেন বিনা পোশাকে থাকেন?
গ্রামটির নাম স্পিলপ্লাট্জ। হার্টফোর্ডশায়ারের একটি গ্রাম। এই গ্রামে আধুনিকতার কোনও কিছু বাদ নেই। ক্লাব, পাব থেকে শুরু করে বিনোদনের সব কিছু রয়েছে। গ্রামবাসীরা উচ্চশিক্ষিতও বটে।
স্পিলপ্লাট্জের অর্থ হল খেলার মাঠ। ব্রিটেনের অন্যতম প্রাচীন একটি উপনিবেশ এই স্পিলপ্লাট্জ।
বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯২৯ সালে এই স্পিলপ্লাট্জের খোঁজ পেয়েছিলেন ইসেল্ট রিচার্ডসন নামে গ্রামবাসীর বাবা। তার পর থেকেই এখানে বসবাস শুরু হয়।
এই গ্রামে বেশির ভাগ পরিবারই বিত্তশালী। বিলাসবহুল বাংলোতে থাকেন। বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। কিন্তু কেউই পোশাক পরেন না। গ্রামের এই অদ্ভুত সংস্কৃতি নিয়ে নানা তথ্যচিত্রও হয়েছে।
এই গ্রামটি পর্যটকদের কাছেও বেশ পরিচিত। দূরদূরান্ত থেকে বহু পর্যটক এখানে আসেন। তাঁদের ক্ষেত্রেও নিয়মের কোনও ব্যতিক্রম হয় না।
পর্যটকরা যদি ওই গ্রামে থাকেন, তা হলে তাঁদেরও বিনা পোশাকে থাকতে হবে। না হলে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় না। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটাই এখানে হয়ে আসছে।
গরমে না হয় পোশাক না পরেই কাটিয়ে দিলেন, কিন্তু অত্যধিক ঠান্ডার সময় কী করেন এই গ্রামের লোকেরা? এই প্রশ্নও হয়তো মনে জাগতে পারে। গ্রামের নিয়মে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ঠান্ডায় কেউ যদি পোশাক পরতে চান, তা হলে তিনি পরতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হবে না।
গ্রামের মধ্যেই পোশাক ছাড়া ঘোরাঘুরি করা, দিন-রাত কাটানোতে কোনও সমস্যা নেই। তবে গ্রামের বাইরে বেরিয়ে শহর বা শহরাঞ্চলে গেলে পোশাক পরে যেতে পারবেন গ্রামবাসীরা। আবার গ্রামে ঢুকলেই পোশাক খুলে ফেলেন তাঁরা। প্রথম প্রথম স্পিলপ্লাট্জের এই সংস্কৃতির বিরোধিতা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু এখন তা-ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অতীত থেকে এই নিয়মই এখানে পালিত হয়ে আসছে। এখনও যা বদলায়নি।পরম্পরার প্রতি আনুগত্যই এমন প্রথা চালানোর নেপথ্যে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন অনেকে।
ভারতেও এমন একটি গ্রাম আছে। তবে এখানে সারা বছরের জন্য নয়, মাত্র পাঁচ দিনের জন্য মহিলাদের পোশাক পরতে অনুমতি দেওয়া হয় না। তবে লজ্জা নিবারণের জন্য গায়ে উলের পাতলা চাদর জড়িয়ে রাখেন।
হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলার এই গ্রামটির নাম পিনি। শ্রাবণ মাসে এই গ্রামের বিশের পার্বণের সময় এই সংস্কৃতির প্রচলন রয়েছে।