দেশের গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ (র)-এর নতুন প্রধান হচ্ছেন আইপিএস রবি সিংহ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি গত সোমবার তাঁকে ওই পদে নিয়োগ করেছে।
রবি সিংহ ১৯৮৮ সালের ব্যাচের আইপিস অফিসার। ছত্তীসগঢ় ক্যাডারে ছিলেন তিনি। ‘র’-এর সঙ্গে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত। দু’দশকের অভিজ্ঞতা নিয়ে গুপ্তচর সংস্থার প্রধানের কুর্সিতে বসছেন রবি।
বর্তমানে ‘র’-এর প্রধানের নাম সমন্ত গোয়েল। তিনি পঞ্জাব ক্যাডারের ১৯৮৪ সালের ব্যাচের আইপিএস অফিসার। আগামী ৩০ জুন ‘র’ প্রধান হিসাবে তাঁর কাজের মেয়াদ শেষ হবে।
জুলাই মাস থেকে গুপ্তচর সংস্থার দায়িত্ব নেবেন রবি। আপাতত আগামী দু’বছরের জন্য ‘র’ প্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে তাঁকে। অর্থাৎ, তিনি ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই পদে থাকবেন। পরে মেয়াদ বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘র’ প্রধান সমন্তের সময়কালে বালাকোটে বিমানহানা থেকে শুরু করে সংবিধানের ৩৭০ ধারার বিলুপ্তির মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা হ্রাস— একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল গুপ্তচর সংস্থা।
বর্তমান ‘র’ প্রধান সমন্তও প্রথমে দু’বছরের জন্য নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরে আরও দু’বছর তাঁর কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি পায়। সমন্তের পরে ‘কঠোর’ হাতেই যাচ্ছে ‘র’-এর দায়িত্ব, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘র’-এ রবির কাজের অভিজ্ঞতা অন্তত ২০ বছরের। আগে তিনি গুপ্তচর সংস্থার অপারেশনাল উইংয়ের প্রধান ছিলেন। বর্তমানে তিনি ‘র’-এর ক্যাবিনেট সচিবালয়ের বিশেষ সচিব পদে কর্মরত।
দিল্লির সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন রবি। ৫৯ বছর বয়সি এই আইপিএসের কাজ কেরিয়ারের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছে। তবে তিনি নিজেকে প্রচারের আলো থেকে দূরে রাখতে পছন্দ করেন।
‘র’-এর বিভিন্ন বিভাগে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে নতুন প্রধানের। রবি অতীতে জম্মু ও কাশ্মীরে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন। সেখানে থাকাকালীন খুব কাছ থেকে তিনি পাকিস্তানকে দেখেছেন। পাকিস্তান সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবগত রবি।
শুধু পাকিস্তান নয়, রবি কাজ করেছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও। উত্তর-পূর্বের সীমান্তে চিনের আনাগোনা, আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা তিনি ভাল করেই জানেন। ফলে পাকিস্তানের পাশাপাশি চিন সম্পর্কেও ‘বিশেষজ্ঞ’ নতুন ‘র’ প্রধান।
‘র’-এর হয়ে বিদেশে গিয়েও কাজ করেছেন রবি। তাঁর অভিজ্ঞতাই গুপ্তচর বিভাগে তাঁকে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। সব মহলেই প্রশংসিত হয়েছে রবির দক্ষতা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা।
রবি এমন একটা সময়ে ‘র’-এর দায়িত্ব পেলেন, যখন ভারতের তথাকথিত ‘শত্রু’ প্রতিবেশী দেশের অবস্থা নড়বড়ে। পাকিস্তান দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকছে। যা ভারতের জন্য খুব একটা সুখের কথা নয়।
‘নড়বড়ে’ পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারতের আর এক ‘শত্রু’ চিন। সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে পাকিস্তান মোটা অঙ্কের ঋণ পেয়েছে। ভারতকে কোণঠাসা করতে চিন পাকিস্তানকে ব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
একইসঙ্গে বিভিন্ন দেশে খলিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। ভারতের বাইরে থেকে এই বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাতে দেশের অভ্যন্তরেও অশান্তি দানা বাঁধছে।
এই পরিস্থিতিতে দেশের গুপ্তচর সংস্থার পারদর্শিতার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। প্রযুক্তির সঙ্গে ‘মগজাস্ত্রের’ মিশেলে ‘র’-কে শক্তিশালী করে তুলতে পারবেন রবি, আশা পর্যবেক্ষকদের।