নগদে লেনদেন ছেড়ে এখন অনলাইন লেনদেনেই স্বচ্ছন্দ অনেকে। একে তো টাকা বয়ে বেড়ানোর ঝক্কি কম। তার উপর কয়েকটি পদ্ধতি মেনে মোবাইলের মাধ্যমে সহজেই লেনদেন সম্ভব।
সহজ যেমন, তেমনই বিপদও রয়েছে ইউপিআই লেনদেনে। সরকারি রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে ইউপিআইয়ের মাধ্যমে লেনদেনের সময় প্রায় এক লক্ষ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।
ভারতে ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস বা ইউপিআই-এর মাধ্যমে অনলাইন লেনদেনের গতি বেড়েছে অনেকটাই। আর সেই কারণে জালিয়াতির সংখ্যা বাড়ছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, গত বছর ইউপিআইয়ের মাধ্যমে লেনদেনের সময় প্রতারিত হয়েছেন ৯৫ হাজার মানুষ।
পেটিএম, গুগল পে, ফোন পে-র মতো ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সময়ই মানুষকে জালিয়াতদের খপ্পরে পড়তে হয়েছে বলেও ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রের ওই রিপোর্ট বলছে, এই ঘটনাগুলির বেশির ভাগই ঘটছে বিশ্বাস করে অথবা বুঝতে না পেরে প্রতারকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য ভাগ করে নেওয়ার কারণে।
কিন্তু বেশ কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে সহজেই বাঁচা যেতে পারে ইউপিআই জালিয়াতির হাত থেকে। তবে তার জন্য জেনে নিতে হবে, কী ভাবে ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারিত হন সাধারণ মানুষ।
এটিএম পিন যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ইউপিআই পিন। অনলাইন লেনদেনে সবচেয়ে বেশি জালিয়াতি হয় সেই পিনের মাধ্যমেই।
কোনও ব্যক্তি যদি তাঁর ইউপিআই পিন বা কিউআর কোড কারও সঙ্গে ভাগ করে নেন, তা হলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। অ্যাপে এই জালিয়াতি বেশি ঘটে। তাই ভুল করেও নিজের ইউপিআই পিন কারও সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত নয় বলেই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
অ্যাপগুলির কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন করার নামে প্রতারণার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশের দাবি, মানুষ গুগলে বিভিন্ন ইউপিআই অ্যাপের কাস্টমার কেয়ার নম্বর হাতড়ে বেড়ান। আর তখনই প্রতারণার শিকার হতে হয় তাঁদের।
গুগলে অনেক ভুয়ো নম্বর দেওয়া থাকে, যেখানে ফোন করা হলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, সিভিভি নম্বর এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য ভাগ করে নিতে বলা হয়। আর তা করলেই অনেক ক্ষেত্রে নিমেষে অ্যাকাউন্ট থেকে হাপিস হয়ে যেতে পারে লক্ষ লক্ষ টাকা।
ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমে ভুয়ো ট্রাভেল এজেন্টদের মাধ্যমে বিমান বা ট্রেনের টিকিট কাটার সময়, এমনকি হোটেলের জন্য অগ্রিম টাকা মেটানোর সময়ও জালিয়াতির শিকার হতে পারেন এক জন ব্যবহারকারী।
অনলাইন লেনদেন করার ক্ষেত্রে আর একটি প্রধান উদ্বেগ হল সর্বজনীন ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা। এই সব নেটওয়ার্ক বেশির ভাগই বিনামূল্যে দেওয়া হয়, যা লক্ষ লক্ষ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু সেখানেই ওঁত পেতে থাকে জালিয়াতেরা। আর তার জন্যই সর্বজনীন ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে ইউপিআই লেনদেন এড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, একই ইউপিআই পিন দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার করাও বিপজ্জনক। এটিএম পিনের মতো তাই ইউপিআই পিনও নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তন করা উচিত।
অনেক ক্ষেত্রে ভুল ব্যক্তিকে টাকা পাঠিয়েও ভুগতে হয় ইউপিআই ব্যবহারকারীদের। পুলিশের মতে, অনেক সময় পরিচয় না জেনেই অনেক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে ফেলেন ইউপিআই ব্যবহারকারীরা। ফলে অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার মুখে পড়তে হয়। আর তার জন্যই এমনটা করা উচিত নয় বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।